কোরবানির পশুর হাটে একটি খাসির ছবিসহ ভাইরাল হওয়া যুবক মুশফিকুর রহমান ইফাতকে নিয়ে বিতর্ক যেন কাটছেই না। ইফাতের বাবা কে এমন কাণ্ডের পর এবার তার ছাগল কেনা নিয়েও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নতুন তথ্য জানালেন আবিদ নামে তারই কথিত এক মামা। যেখানে আমেরিকা প্রবাসী শিল্পপতি মামার জন্য ইফাত ছাগলটি ক্রয় করেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
বুধবার (১৯ জুন) রাতে আবিদ তার নিজের ব্যবহৃত AX Abid নামে একটি ফেসবুক আইডিতে ইফাতকে নিয়ে পোস্ট করেন। কিন্তু পরবর্তীতে নিজের আইডি থেকে পোস্টটি সরিয়ে নেন তিনি।
ইফাতকে উদ্দেশ্য করে দেওয়া পোস্টে আবিদ লেখেন, ‘মানুষের ভালো কাজ কেউ ভাইরাল করে না। ও অনেক পুরস্কার পেয়েছে পাখি পালন করে। কই তখনতো কেউ তাকে ভাইরাল করে নাই।
এই ছেলের হাতের আইফোনটি আমি দিয়েছি কারণ আমি তাকে আদর করি। ওর দুটো আপন মামা আছে যাদের একজন দুবাইতে শত কোটি টাকার মালিক। তাদের ছেলে নেই বলে তার (ইফাত) সব শখ মামা পূরণ করে।
আর যে গাড়িগুলোর ছবি দিয়েছে সেগুলো একটা বিক্রি করে আরেকটা কিনছে। ওর মামাদের এত টাকা আছে যে সমস্ত জিনিসগুলো ব্যবহার করে তা কিছুই না। এর চেয়ে বেশি ওর মামারা যাকাত দেয়।
মানুষ ওর বাবার যে ছবি দিয়েছে সে তার বাবা না, বাবার সঙ্গে তাদের সম্পর্ক নেই তিন বছর। তাই না বুঝে কারও ক্ষতি না করাই ভালো। ইফাতের আরেক মামা আছে আমেরিকায় প্রবাসী। তিনিও শিল্পপতি।
ছাগলটি ওর মামার জন্যই কিনেছে। অনুসন্ধান যদি করতে হয় তাহলে আমেরিকা ও দুবাই এসে করলে সবাই বুঝতে পারবে।’
তবে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ইফাতের আপন কোনো মামা আমেরিকা অথবা দুবাই বসবাস করে না। ইফাতের মা শিবলী ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার আমিরাবাদ ইউনিয়নের সোনাপুর গ্রামের আরু চেয়ারম্যান বাড়ির মিল্লাত মিয়ার মেজো মেয়ে। ইফাতের নানা মিল্লাত মিয়ার তিন মেয়ে ও এক ছেলে সন্তান রয়েছে। তাদের মধ্যে একমাত্র ছেলে নকিব মিয়া দেশে বসবাস করছেন।
অন্যদিকে পোস্টদাতা এএক্স আবিদের সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আবিদ ইফাতের নিকটাত্মীয়। তার প্রকৃত নাম আবিদুল ইসলাম।
তিনি ফেনী জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান লায়লা জেসমিন বড়মনির ছেলে।
তিনি ফেনীর ফুলগাজী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান একরামুল হক একরাম হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি। হত্যাকাণ্ডের পর কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পেয়ে আবর আমিরাতে পালিয়ে যান তিনি।
এ ব্যাপারে সোনাগাজীর আমিরাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজিজুল হক হিরণ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ইফাতের মা শিবলীর সোনাগাজীতে বাবার বাড়িতে আসা-যাওয়া ছিল। ইফাতের একমাত্র মামা নকিব পড়াশোনা শেষ করে চাকরি খুঁজছে। এর বাইরে অন্য কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।
এদিকে ভাইরাল হওয়া যুবক মুশফিকুর রহমান ইফাত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য এবং কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট আপিলাত ট্রাইব্যুনালের প্রেসিডেন্ট মতিউর রহমানের ছেলে বলে জানিয়েছেন ফেনী-২ আসনের সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী।
বৃহস্পতিবার (২০ জুন) সন্ধ্যায় ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করে নিজাম হাজারী বলেন, ইফাত আমার মামাতো বোনের স্বামী মতিউর রহমানের দ্বিতীয় সংসারের ছেলে। মতিউর রহমান রাগ করে ইফাতের সঙ্গে সম্পর্কের কথা অস্বীকার করেছেন বলে ধারণা করছি। কেননা তিনি (মতিউর রহমান) সব সময় আমার মামাতো বোনের সঙ্গে নানা পারিবারিক অনুষ্ঠানে অংশ নেন।
এর আগে, বুধবার (১৯ জুন) মুশফিকুর রহমান ইফাতের সঙ্গে নিজের কোনো আত্মীয়তার সম্পর্কও নেই বলে মন্তব্য করেন মতিউর রহমান। তিনি বলেন, ইফাত নামে আমার কোনো ছেলে নেই। এমনকি আত্মীয় বা পরিচিতও নন। আমার একমাত্র ছেলে, তার নাম তৌফিকুর রহমান। একটি গোষ্ঠী আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করছে।
আমি এ বিষয়ে পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগের সহায়তা চেয়ে আইনি পদক্ষেপে যাচ্ছি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার ছবি ও নাম ব্যবহার করায় বিব্রত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
উল্লেখ্য, সাদিক অ্যাগ্রো বিটল প্রজাতির ওই খাসিটির দাম ১৫ লাখ টাকা চেয়েছিলেন। পরে ওই ক্রেতার সঙ্গে ১২ লাখ টাকায় বিক্রির চুক্তি হয় তাদের।
তবে ‘বিশেষ একটি কারণে’ খাসিটির মূল্য ও এর ক্রেতাকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়। এনবিআর কর্মকর্তা মতিউর রহমানকে তার বাবা পরিচয় দিয়ে নেটিজেনরা বিভিন্ন স্ট্যাটাসে করছেন আলোচনা-সমালোচনা।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post