ভারতের স্যাটেলাইট ইন্টারনেট বাজারের দখল নিয়ে বিশ্বের অন্যতম দুই শীর্ষ ধনী ব্যক্তি ইলন মাস্ক এবং মুকেশ আম্বানির মধ্যে প্রতিযোগিতা তীব্রতর হচ্ছে। ব্রডব্যান্ডের জন্য স্যাটেলাইট স্পেকট্রাম নিলামের পরিবর্তে প্রশাসনিকভাবে বরাদ্দ করা হবে বলে গত সপ্তাহে ভারত সরকার ঘোষণা করার পর যুদ্ধটি আরও জমে উঠেছে।
মাস্ক এর আগে আম্বানি দ্বারা সমর্থিত নিলাম মডেলের সমালোচনা করেছিলেন। ভারতে ইন্টারনেট পরিষেবা প্রদানে তিনি আগ্রহ প্রকাশ করার পরে ভারত জানিয়েছে, স্যাটেলাইট স্পেক্ট্রাম বণ্টনের ক্ষেত্রে নিলাম হবে না। বরং প্রশাসনিক ভাবে বণ্টন করা হবে স্পেক্ট্রাম। এর আগে টেরেস্ট্রিয়াল স্পেক্ট্রামের বণ্টন নিলামের ভিত্তিতে হত। জিও এবং এয়ারটেল এই পদ্ধতিকেই বেশি পছন্দ করে থাকে। তবে বরাবরই এই নিমাল পন্থার বিরোধিতা করে এসেছেন ইলন মাস্ক।
যখন রয়টার্স নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট করেছে যে, মুকেশ আম্বানি তার অবস্থান পুনর্বিবেচনা করার জন্য সরকারকে লবিং করছেন, এর প্রতিক্রিয়া জানিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্স-এ মাস্ক লেখেন, ‘আমি ফোন করে জিজ্ঞেস করব, যাতে খুব সমস্যা না হলে যেন স্টারলিংককেও ভারতের মানুষকে পরিষেবা দিতে দেয়া হয়।’ প্রসঙ্গত, স্টারলিংকের হাত ধরে ভারতীয় টেলিকম মার্কেটে প্রবেশের ওপরে বেশ কয়েকদিন ধরেই নজর রয়েছে মাস্কের। আর এবার সরাসরি মুকেশ আম্বানি সংক্রান্ত মিম-এ কমেন্ট করে এই নিয়ে কার্যত ‘চ্যালেঞ্জ’ ছুড়ে দিলেন বিশ্বের ধনীতম ব্যক্তি।
উল্লেখ্য, বিশ্বের প্রায় সর্বত্রই প্রশাসনিক ভাবে স্যাটেলাইট স্পেক্ট্রাম বণ্টন করা হয়ে থাকে। তবে ভারতে এতদিন স্যাটেলাইট স্পেক্ট্রাম বণ্টন হত নিলামের মাধ্যমে। তাতে সুবিধা পেতেন ধনকুবের মুকেশ আম্বানি। পাশাপাশি এয়ারটেলের ভারতী সুনীল মিত্তলও এই পদ্ধতিকেই সমর্থন করেন। তবে অ্যামাজনের প্রোজেক্ট কুইপার থেকে স্টারলিংক চাইছিল যাতে ভারতে প্রশাসনিক ভাবেই স্যাটেলাইট স্পেক্ট্রাম বণ্টন হয়।
ভারত ইন্টারন্যাশনাল টেলিকম ইউনিয়নের সদস্য। এটি জাতিসংঘের একটি সংস্থা। এই সংস্থার সদস্য হওয়ার সুবাদে ভারতের আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে স্যাটেলাইট স্পেক্ট্রাম বণ্টন করা উচিত বলে দাবি করেছিলেন মাস্ক। এই আবহে সম্প্রতি ভারতের টেলিকম মন্ত্রী জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া ঘোষণা করেন, বিশ্বের বাকি জায়গার মতো ভারতেও এখন থেকে প্রশাসনিক ভাবে স্যাটেলাইট স্পেক্ট্রাম বণ্টন হবে।
এই আবহে রিপোর্টে দাবি করা হয়, মুকেশ আম্বানি নাকি সেই প্রশাসনিক বণ্টন প্রক্রিয়ার বিরোধিতা করেন। রিলায়েন্সের দাবি, বাজারে সামঞ্জস্য বজায় রাখতে স্যাটেলাইট স্পেক্ট্রামেরও নিলাম হওয়া উচিত। এই নিয়ে টেলিকম রেগুলেটরি অথরিটি অফ ইন্ডিয়া বা ট্রাইকে চিঠি লিখেছে রিলায়েন্স জিও। সুনীল মিত্তলও একই সুরে কথা বলেছেন। তবে জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়ার বক্তব্য, ‘সারা বিশ্বেই স্যাটেলাইট স্পেক্ট্রাম প্রশাসনিক ভাবে বণ্টন করা হয়। ভারত এর থেকে আলাদা কিছু করছে না।
তবে মাস্কের জন্য ভারতের ইন্টারনেট বাজার দখল সহজ নাও হতে পারে। ২০২৩ সালের একটি প্রতিবেদনে, ইওয়াই-পার্থেনন উল্লেখ করেছে যে, স্টারলিংকের উচ্চ খরচ – প্রধান ভারতীয় ব্রডব্যান্ড প্রদানকারীদের প্রায় ১০ গুণ – সরকারি ভর্তুকি ছাড়া প্রতিযোগিতা করা কঠিন করে তুলতে পারে। আরও অনেক এলইও স্যাটেলাইট – যে ধরনের স্টারলিংক কাজ করে – এমইও স্যাটেলাইটের চেয়ে বিশ্বব্যাপী কভারেজ প্রদানের জন্য প্রয়োজন, যা উৎক্ষেপণ এবং রক্ষণাবেক্ষণ খরচ বৃদ্ধি করে। অর্থাৎ, মহাকাশের ইন্টারনেট নিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী দুই ব্যক্তির মধ্যে যুদ্ধ সত্যিই শুরু হয়েছে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post