দেশের চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং সরকারের ওপর ক্রমবর্ধমান চাপের প্রেক্ষাপটে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস হতাশা প্রকাশ করেছেন। তিনি উপদেষ্টা পরিষদের এক বৈঠকে জানান, রাজনৈতিক দলগুলোর অসহযোগিতা এবং বহুমুখী প্রতিবন্ধকতায় সরকার কার্যকরভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারছে না। পরিস্থিতির জটিলতায় তিনি নিজ দায়িত্বে থাকা কতটা যুক্তিসঙ্গত—তা নিয়ে সহকর্মীদের সঙ্গে পরামর্শ করেছেন। বৈঠকে অনেকে তার পদত্যাগ ইচ্ছার প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করলেও দেশের স্থিতিশীলতা ও দায়িত্ব পালনের প্রশ্নে মতভেদও দেখা গেছে।
বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনের শপথ নিয়ে চলমান আন্দোলন, আদালতের রায়, এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের চাপের মুখে অন্তর্বর্তী সরকার সংকটের মুখোমুখি হয়েছে। এ অবস্থায় সরকার সমর্থন হারাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বিএনপি ও জামায়াতসহ একাধিক দল নির্বাচনের রোডম্যাপ দাবি করে সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে। অন্যদিকে, এনসিপি প্রধান উপদেষ্টাকে পদত্যাগ না করার অনুরোধ জানিয়েছে। তবে পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, ছাত্রনেতাদের অসংযত আচরণ, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ এবং সরকারের নীতি বাস্তবায়নের সীমাবদ্ধতা নিয়ে ড. ইউনূস ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
সরকারের কিছু কার্যক্রম, যেমন মানবিক করিডোর ও বন্দর পরিচালনায় বিদেশি কোম্পানির যুক্তি-অযুক্তি নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। সেনাপ্রধান নিজেও এসব বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্ত নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করেছেন, যা সরকারের এখতিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। উপদেষ্টারা জানিয়েছেন, এসব ইস্যুতে ভুল তথ্য ছড়িয়ে জনগণের মাঝে ভুল বার্তা দেওয়া হচ্ছে, যা সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে। নিয়ন্ত্রিত নির্বাচনের আশঙ্কাও উঠে এসেছে বৈঠকে, যা ড. ইউনূসের ভাবমূর্তির জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারে বলেও মত দিয়েছেন উপদেষ্টারা।
আরও পড়ুন
ড. ইউনূস বৈঠকে বলেন, গত ৯ মাসে সরকার অর্থনীতির উন্নয়ন ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করলেও তা স্বীকৃতি পায়নি। বরং সরকারের ওপর চলছে একতরফা সমালোচনা ও ট্রল। তিনি জানান, কোনো ভালো কাজকেই প্রশংসা করা হচ্ছে না, বরং জনসম্পৃক্ত ইস্যুতে সরকারকে দোষারোপ করা হচ্ছে। জনসমর্থন ছাড়া সংস্কার বাস্তবায়ন ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন অসম্ভব হয়ে পড়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
রাজনৈতিক নেতারা বিভিন্ন প্রতিক্রিয়ায় অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যর্থতা, দলগুলোর অধৈর্যতা এবং সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। কেউ কেউ বিতর্কিত উপদেষ্টাদের পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছেন। অন্যদিকে, জামায়াত সর্বদলীয় বৈঠকের আহ্বান জানিয়ে পরিস্থিতি সমাধানের আহ্বান জানিয়েছে। নাগরিক ঐক্য, বাসদ এবং সিপিবি সরকারের দুর্বল সিদ্ধান্ত ও যোগাযোগ ঘাটতির কারণে সংকট আরও গভীর হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে। সব মিলিয়ে, সরকারের ভবিষ্যৎ ও প্রধান উপদেষ্টার অবস্থান নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে উদ্বেগ ও অনিশ্চয়তা ক্রমেই বাড়ছে।