আড়াই হাজার টাকার ভিসা বিক্রি হচ্ছে আট লাখে

Visa worth 2.5 thousand taka is being sold for 8 lakh taka

চাঁদপুরের দেলোয়ার হোসেন পাটোয়ারী দীর্ঘ পাঁচ বছর সৌদি আরব কাটিয়ে দেশে ফিরে মুদি দোকান খুললেও লাভজনক হয়নি ব্যবসা। উপার্জনের পথ খুঁজতে চলতি বছরের মে মাসের শেষ দিকে তিনি পাড়ি জমান কুয়েত। কিন্তু সেখানে যেতে গিয়ে তাকে গুনতে হয়েছে প্রায় সাত লাখ টাকা, যা সরকার নির্ধারিত খরচের তুলনায় কয়েক গুণ বেশি।

কুমিল্লার ইকবাল হোসেনের অভিজ্ঞতাও একই। দালালের মাধ্যমে সাড়ে ছয় লাখ টাকা খরচ করে তিনি কুয়েত পৌঁছান জুন মাসে। এ অর্থ জোগাড় করতে স্থানীয় একটি সমবায় সমিতি থেকে নিতে হয়েছে ঋণ। যদিও কাজ মিলেছে, কিন্তু ইকবালের অভিযোগ, প্রকৃত খরচের তুলনায় তাকে অনেক বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয়েছে, যা ছিল অপ্রত্যাশিত।

২০০৭ সাল থেকে কুয়েতের শ্রমিক ভিসা প্রক্রিয়ায় কড়াকড়ি আরোপ করা হয়। জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর তথ্য বলছে, তখন থেকে দীর্ঘ সময় ধরে বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা পাওয়ার প্রক্রিয়া জটিল ছিল। এ সুযোগে দালাল চক্র ভিসা ও প্রসেসিং ফি বাড়িয়ে তোলে। বিশেষ অনুমোদনের মাধ্যমে সীমিত সংখ্যক ভিসা ইস্যু হলেও তা যথেষ্ট ছিল না। ফলে কুয়েতে যেতে আগ্রহী শ্রমিকদের গুনতে হয়েছে কয়েক গুণ বাড়তি টাকা।

সংশ্লিষ্টদের মতে, প্রকৃতপক্ষে কুয়েতের শ্রমিক ভিসার প্রসেস খরচ মাত্র ছয় দিনার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় আড়াই হাজার টাকার মতো। অথচ দালালদের হাত ঘুরে এই ভিসার দাম গিয়ে দাঁড়াচ্ছে প্রায় দুই হাজার কুয়েতি দিনারে—বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ আট লাখ টাকার কাছাকাছি। প্রবাসী সোশ্যাল অ্যাক্টিভিস্ট আব্দুস সালেহ জানান, বাস্তবে এই অর্থের বেশিরভাগটাই চলে যাচ্ছে দালালদের পকেটে।

বাংলাদেশ প্রেস ক্লাব কুয়েতের একজন নেতা জানান, বাংলাদেশিদের তুলনায় দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের নাগরিকরা অনেক কম খরচে কুয়েত ভিসা পাচ্ছেন। অথচ বাংলাদেশিদের ক্ষেত্রে দালাল চক্র পুরো বাজারই নিয়ন্ত্রণ করছে।

বাংলাদেশ দূতাবাস ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে, প্রতিদিন গড়ে ৪৫০টি ভিসা সত্যায়নের আবেদন পাচ্ছে কুয়েত দূতাবাস। এক তৃতীয়াংশই দক্ষ কর্মীর ভিসা। তবে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সত্যায়নের পাশাপাশি ভবিষ্যতে যেন কেউ প্রতারণার শিকার না হন, সে দিকেও নজর দেওয়া হচ্ছে।

এদিকে, প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, নির্ধারিত খরচের বাইরে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তবে দালালদের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে প্রয়োজন ভুক্তভোগীদের তথ্য ও অভিযোগ। সংশ্লিষ্টরা জনসচেতনতা বাড়াতে প্রচারণাও চালাচ্ছেন বলে জানানো হয়েছে।

আরও দেখুন:

whatsappচ্যানেল ফলো করুন

প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।

Gif final ezgif.com optimize