ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে উত্তর আফ্রিকার দেশ লিবিয়া ও তিউনিসিয়া থেকে চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে অবৈধভাবে সবচেয়ে বেশি ইতালিতে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশি অভিবাসীরা। গেল সোমবার দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি বছর পহেলা জানুয়ারি থেকে ২৮ জুন পর্যন্ত ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালিতে এসে পৌঁছেছে ২৫ হাজার ৩৪৫ জন অভিবাসী। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি রয়েছেন বাংলাদেশের নাগরিকরা।
৬ মাসে অবৈধভাবে ইতালিতে আসা মোট অভিবাসীর মধ্যে ৫ হাজার ৩৮২ জন বাংলাদেশি নাগরিক, যা মোট অভিবাসীর ২১ শতাংশ।তালিকায় এর পরের অবস্থানে রয়েছে পশ্চিম এশিয়ার যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ সিরিয়া।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম ৬ মাসে অবৈধভাবে ইতালিতে আসা মোট অভিবাসীদের মধ্যে ৩ হাজার ৬৯২ জন সিরিয়ার অভিবাসী, যা মোট অভিবাসীদের ১৫ শতাংশ।
আরও পড়ুন
এছাড়া আফ্রিকার দেশ তিউনিসিয়ার রয়েছে ৩ হাজার ২১৯ জন, যা মোট অভিবাসীর ১৩ শতাংশ। গিনির রয়েছে ২ হাজার ১ জন, পাকিস্তানের ৯৭৮ জন, গাম্বিয়ার ৮৮৩ জন, মালির রয়েছে ৮৫২ জন, সুদানের ৮৪৬ জন এবং আইভরি কোস্টের রয়েছে ৬৯২ জন।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, এ বছর মোট অভিবাসীদের মধ্যে অভিভাবকহীন অপ্রাপ্ত বয়স্ক শিশুর সংখ্যা ৩ হাজার ৪১৮ জন, গত বছর এ সংখ্যাটা ছিলো ১৮ হাজার ৮২০ জন।
উদ্ধার হওয়া এসব শিশুদের দ্রুত সময়ের মধ্যে দেশটির বিভিন্ন সংস্থার কাছে পাঠানো হয়েছে, যেখানে তারা প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়া পর্যন্ত একজন অভিভাবক পাবে এবং তাদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত হবে বলে জানানো হয়।
প্রতিবেদনের বিষয়ে বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল অফিসের কনসাল এম জে এইচ জাভেদ বলেন, “দূতাবাস ও কনস্যুলেট অফিস মাঝে মধ্যেই অবৈধভাবে বিদেশে পাড়ি দেওয়াসহ বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্য প্রবাসীদের নিয়ে সচেতনতামূলক সভার আয়োজন করি।
তবে বাংলাদেশে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় বিভিন্ন এলাকাতে গিয়ে এরকম সচেতনতামূলক সেমিনারের আয়োজন করছে, যাতে তারা অবৈধভাবে বিদেশে পাড়ি না জমায়।”
মিলানে বসবাসরত বাংলাদেশি অভিবাসন বিশেষজ্ঞ মাহফুজুর রহমান বলেন, “অবৈধ অভিবাসন বন্ধ করতে বাংলাদেশের নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় সচেতনমূলক পদক্ষেপ নিতে হবে। সাধারণত যেসব এলাকা থেকে বেশিরভাগ মানুষ অবৈধভাবে ইতালিতে আসে, সেসব এলাকায় এই সেমিনার করা উচিত।”
এদিকে সম্প্রতি ইতালির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের করা এক তালিকায় বাংলাদেশকে ‘নিরাপদ দেশ’ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। মূলত যেসব দেশে কোন যুদ্ধ বা কোন ধরনের রাজনৈতিক অস্থিরতা বিরাজ করছে না সেসব দেশকে ‘নিরাপদ দেশ’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
তখন দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মাত্তেও পিয়ান্তেদোসি রোমে স্থানীয় সাংবাদিকদের বলেছিলেন, “নিরাপদ দেশের নাগরিকদের জন্য ইউরোপ আশ্রয়স্থল হতে পারে না।
যারা কোন যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ থেকে আসে না, তারা যদি অবৈধভাবে ইতালিতে প্রবেশ করে, আমরা তাদের থাকার সুযোগ দেবো না।”
এবছর ২৪ জুন দেশটির পররাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতাবিষয়ক সচিব রিকার্ডো গুয়ারিগলিয়া বাংলাদেশে সফরকালে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাসান মাহমুদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। আলোচনায় বৈধপথে দক্ষ শ্রমিক নেওয়ার ইচ্ছা কথা জানায় ইতালি।
এদিকে যদি অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসী ঠেকানো না যায় তাহলে দেশটির শ্রমবাজারে বাংলাদেশ হুমকির মুখে পড়ার আশঙ্কা করছেন প্রবাসীরা।