প্রতি বছর হাজারো নারী কর্মী জীবিকার সন্ধানে বিদেশে পাড়ি জমান। তাদের অধিকাংশই কাজ করেন গৃহকর্মী ও গার্মেন্টস খাতে। সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান, জর্ডান ও লেবাননই প্রধান গন্তব্য হলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নারী অভিবাসনের হার দ্রুত কমে এসেছে। এক দশক আগে যেখানে বছরে এক লাখের বেশি নারী কর্মী বিদেশে যেতেন, এখন সংখ্যাটি অর্ধেকে নেমেছে। নিরাপদ কর্মপরিবেশের অভাব, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন এবং নানা ধরনের হয়রানি নারী অভিবাসনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

বিদেশে গিয়ে দুঃসহ অভিজ্ঞতার শিকার হয়েছেন অনেক নারী। পিতার মৃত্যুর পর পরিবারের দায়িত্ব নিতে সৌদি আরবে গৃহকর্মীর ভিসায় গিয়েছিলেন শারমিন সুলতানা। কিন্তু কয়েক বছরের ব্যবধানে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে দেশে ফিরতে হয় তাকে। অনুরূপ অভিজ্ঞতা রয়েছে গাজীপুরের তসলিমা হারুনেরও, যিনি লেবাননে গিয়ে নির্যাতনের শিকার হয়ে মাত্র দেড় মাসের মধ্যে অসুস্থ অবস্থায় দেশে ফিরে আসেন। এ ধরনের বাস্তবতা বহু নারী অভিবাসীর জীবনে দুঃস্বপ্ন হয়ে ধরা দিয়েছে।
আরও


অভিবাসী কর্মী উন্নয়ন প্রোগ্রাম (ওকাপ) এবং অন্যান্য সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে নির্যাতনের ভয়াবহ চিত্র। অনেক নারী জানিয়েছেন, সামান্য কারণে শারীরিক নিপীড়নের শিকার হতে হতো তাদের; কখনো বেল্ট, জুতা বা গরম পানি দিয়ে আঘাত করা হয়েছে, আবার কেউ যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন। গবেষণায় দেখা যায়, প্রবাসে যাওয়া ৯৪ শতাংশ নারী নিয়মিত শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। একই সঙ্গে চিকিৎসা, খাবার, বিশ্রাম ও ছুটির মতো মৌলিক অধিকার থেকেও বঞ্চিত হয়েছেন তারা।


সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, নারী কর্মী পাঠানো কমে এসেছে উল্লেখযোগ্যভাবে। ২০১৬ সালে যেখানে ১ লাখ ১৮ হাজারের বেশি নারী বিদেশে যান, সেখানে চলতি বছর সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সংখ্যা দাঁড়িয়েছে মাত্র ৪০ হাজারে। অন্যদিকে, ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, গত পাঁচ বছরে বিদেশ থেকে দেশে ফিরেছে ৪১২ নারী শ্রমিকের মরদেহ, যাদের মধ্যে অনেকে আত্মহত্যা করেছেন। শারীরিক-মানসিক নির্যাতনই এসব মৃত্যুর অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
অভিবাসন খাতের বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, শ্রমবাজার সম্প্রসারণের পাশাপাশি নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও দ্বিপক্ষীয় চুক্তি শক্তিশালী করা হলে পরিস্থিতি অনেকটাই বদলাতে পারে। একই সঙ্গে ফিলিপাইনের মতো বিকল্প পেশায় নারী কর্মী পাঠানোর উদ্যোগ নেয়ার পরামর্শ দেন তারা। অন্যথায় নারী অভিবাসন ক্রমেই সংকুচিত হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন গবেষকরা।









