রাজধানীর কারওয়ান বাজারে নিত্যদিনের মতো বাজার করতে আসেন মো. ইব্রাহীম (৩০)। বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করা ইব্রাহিম বাজার করতে এসে বিপাকে পড়েন। কাঁচাবাজার থেকে ডিম, মাছ-মাংস সবকিছুর দাম তাকে ভাবিয়ে তুলেছে। যতই দিন যাচ্ছে ততই বাড়ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় সব দ্রব্যমূল্যের দাম। যে ডিম কিনেছেন ১৩ টাকা ৩৩ পয়সায়। (শনিবার) সেই ডিম তাকে কিনতে হয়েছে ১৪ টাকা ১৬ পয়সায়। মধ্যবিত্তের সহজলভ্য ডিমও এখন নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে বলে অভিমত তার। তাই বিষয়টি নিয়ে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এদিকে ডিমের ন্যায় কাঁচা মরিচের বাজারে দামও বাড়ছে হু-হু করে। রাজধানীর কারওয়ান বাজার ও কয়েকটি সুপারশপ ঘুরে কাঁচা মরিচের দাম বাড়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।
ডিমের বর্তমান বাজার মূল্য নিয়ে তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘হু হু করে বাড়ছে ডিমের দাম। এভাবে বাড়তে থাকলে আমরা খাবো কি? বিক্রেতাদের কাছে ডিমের দাম বাড়তির কারণ জানতে চাইলে বন্যার অযুহাত দিচ্ছেন। যেভাবে ডিমসহ অন্যান্য জিনিসের দাম বাড়ছে তাতে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের পাতে মাছ-মাংস তো দূরের কথা ডিমও জুটবে না। তাই দ্রুত এই অস্থির বাজারকে স্থির করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হবে। নয়তো জনমনে অসন্তোষ তৈরি হতে পারে।
রাজধানীর কারওয়ান বাজার সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, সাদা এক বান্ডিল ডিম পাইকারিতে বিক্রেতারা কিনেছেন ১৩০০ টাকায়। আর লাল ডিম কিনেছেন ১৩২০ টাকায়। এক বান্ডিলে মোট ৩৬০টি ডিম থাকে। আর তারা এক ডজন ডিম বিক্রি করছেন ১৭০ টাকায়। এতে একটি ডিমের দাম দাঁড়াচ্ছে ১৪ টাকা ১৬ পয়সা। এদিকে রাজধানীর পান্থপথে আগোরা সুপারশপে এক ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৭৭ টাকায়। এতে একটি ডিমের দাম দাঁড়ায় ১৪ টাকা ৭৫ পয়সা। কিন্তু একই ডিম পান্থপথের স্বপ্ন সুপারশপে বিক্রি হচ্ছে ১৭০ টাকা ডজনে। অথচ গত এক সপ্তাহ আগেও ডজন প্রতি ডিম বিক্রি হয়েছে ১৫৫ থেকে ১৬০ টাকায়। কিন্তু গত এক সপ্তাহ ব্যবধানে ডজন প্রতি ডিমের দাম বেড়েছে ১০ টাকা। হুট করে ডিমের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে বিক্রেতাদের কাছে জানতে চাইলে সবাই ডিমের উৎপাদন কমে যাওয়ার বিষয়টি সামনে এনেছেন।
এদিকে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে এক কেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ১৫০ টাকা বেড়েছে মরিচের দাম। আর পান্থপথের স্বপ্ন সুপারশপে এক কেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৬২০ টাকায়।
কাঁচা মরিচের বাড়তি দামের বিষয়ে বিক্রেতাদের বলেন, ‘টানা বৃষ্টিতে মরিচের উৎপাদন কমেছে। অনেক গাছ মারা যাচ্ছে, তাই মরিচের দাম বাড়ছে। এই বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে দাম আরও বাড়তে পারে বলেও জানান তারা।
গত ১৫ সেপ্টেম্বর ফার্মের মুরগির ডিম এবং ব্রয়লার ও সোনালি মুরগির দাম নির্ধারণ করে দেয় কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। ওইদিন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ রেয়াজুল হক স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে চিঠিতে বলা হয়, ‘প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ও পোলট্রি খাত সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের নেতাদের সমন্বয়ে গঠিত জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের মতামতের ভিত্তিতে এই বছরের জন্য ডিম ও মুরগির যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে’। নতুন বেঁধে দেওয়া দামে উৎপাদন পর্যায়ে প্রতিটি ডিমের দাম নির্ধারিত হয় ১০ টাকা ৫৮ পয়সা এবং পাইকারিতে ১১ টাকা শূন্য ১ পয়সা।
আর খুচরা পর্যায়ে প্রতি ডজন ডিমের মূল্য নির্ধারণ করা হয় ১৪২ টাকা ৪৪ পয়সা। ফলে প্রতি পিস ডিমের দাম ধরা হয় ১১ টাকা ৮৭ পয়সা। তবে মূল্য নির্ধারণের পরও মাঠপর্যায়ে তার বাস্তবায়ন করা যায়নি। খোদ সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য বলছে, খুচরা বাজারে ডিমের দাম বেড়েছে। শুক্রবার রাজধানীতে সর্বনিম্ন এক ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৬৫ টাকা করে। এক সপ্তাহ আগে এই দাম ছিল ১৫৯ টাকা, আর একমাস আগে ছিল ১৫০ টাকা। গত তিন সপ্তাহের ব্যবধানে ডজন প্রতি ডিমের দাম বেড়েছে ২০ থেকে ২৫ টাকা।
ডিমের দাম বাড়ার বিষয়ে কারওয়ান বাজারের ডিম বিক্রেতা মজিবুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ডিমের চাহিদা অনুযায়ী বাজারে ডিম নেই। আমি প্রতিদিন ৪ থেকে ৫ বান্ডিল ডিম তেজগাঁও থেকে পাইকারিতে নিয়ে আসি। আমার প্রতিদিন ২ হাজার ডিমের প্রয়োজন হয়। কিন্তু আজ আমি ১২০০ ডিম আনতে পেরেছি। কারণ গাড়ি থেকে নামানোর আগেই ডিম শেষ হয়ে যাচ্ছে। আগের তুলনায় ডিমের উৎপাদন খুবই কম বলে দাবি তার। এছাড়াও সম্প্রতি ফেনীসহ কয়েকটি জেলায় বন্যার কারণে অনেক খামার ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে তাই ডিমের দাম বেড়েছে।
তার সঙ্গে কথা বলায় সময় একজন ক্রেতা ভাঙা ডিমের দাম জিজ্ঞেস করেন। এখন ভাঙা এক হালি ডিম বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা হালিতে। ডিমের দাম বাড়তি হওয়ায় নিম্নবিত্তের অনেকেই এই ভাঙা ডিম কিনে নেন। বিশেষ করে অনেক হোটেলে এই ডিমগুলো পাইকারিতে কিনে নিচ্ছেন বলে জানান তিনি।
এদিকে পান্থপথের আগোরা সুপারশপে ডিমের বাড়তি দামের বিষয়ে আউটলেট ইনচার্য আনোয়ার হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা অন্যান্য সুপারশপ ও বাজারের সঙ্গে মিল রেখেই প্রতিদিন ডিমের দাম নির্ধারণ করি। আমাদের প্রত্যেকটি পণ্যের জন্য এআইটি দিতে হয়। এজন্য বাইরের থেকে কিছু কিছু প্রোডাক্টের দাম কিছুটা বেশি হয়। তবে আমরা সবকিছুর দাম বাইরের মতোই রাখার চেষ্টা করি।আগোরা সুপারশপে ডিমের দাম সম্পর্কে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ক্রেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সিন্ডিকেট এতটাই শক্তিশালী যে ডিমের বাজারকেও ছাড় দিচ্ছে না। এক সপ্তাহের ব্যবধানে ডিমের দাম ডজনে বেড়েছে ১০ টাকা। এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। জিনিসপত্রের দাম এভাবে বাড়লে মানুষ কীভাবে স্বাভাবিক জীবন অতিবাহিত করবে তা ভাবনার বিষয়। তাই বাজার মনিটরিং আরও জোরদার হওয়া প্রয়োজন বলে অভিমত তার।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post