কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে দেশের পরিস্থিতি ক্রমেই অস্থিতিশীল হয়ে উঠলে ঢাকার বিদেশী দূতাবাসগুলোর নিয়মিত কনসুলার কার্যক্রমেও ব্যাঘাত ঘটে। ঢাকার মার্কিন দূতাবাসেও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। দূতাবাসের তথ্য অনুযায়ী, আন্দোলনকে ঘিরে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে তাদের কয়েক হাজার শিক্ষার্থীসহ ১০ হাজারেরও বেশি ভিসা আবেদনকারীর সাক্ষাতের সময়সূচি পুনর্নির্ধারণ করতে হয়েছে।
জানা গেছে, কোটা সংস্কার আন্দোলন ও কারফিউ এবং শেখ হাসিনা সরকারের পতন-পরবর্তী পরিস্থিতির কারণে ১৬ জুলাই থেকে ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কোনো ভিসা আবেদনকারীর সাক্ষাৎকার নেয়নি মার্কিন দূতাবাস। এ সময়ের মধ্যে যাদের সাক্ষাৎকারের জন্য সময় নির্দিষ্ট করা ছিল, তাদের সাক্ষাতের সময়সূচি বাতিল করে পরবর্তী তারিখ জানিয়ে দূতাবাসের পক্ষ থেকে মেইল করা হয়। আর নতুন আবেদনকারীরা এ সময় চেষ্টা করেও ভিসা সাক্ষাৎকারের সময় নিতে পারেননি।
এ বিষয়ে ১৩ আগস্ট বিকালে ঢাকার মার্কিন দূতাবাসের ফেসবুক পেজে একটি পোস্ট দেয়া হয়। সেখানে বলা হয়, ‘পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত মার্কিন দূতাবাসের নিয়মিত কনসুলার পরিষেবা বন্ধ থাকছে। আপনার যদি আসন্ন ভিসা অ্যাপয়েন্টমেন্ট থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে কনসুলার বিভাগের পরিষেবাগুলো পুনরায় চালুর বিষয়ে আরো নির্দেশনার জন্য অপেক্ষা করুন।
আন্দোলন চলাকালে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে ভিসার আবেদন ও সাক্ষাৎ-সংক্রান্ত বিষয়ে জানতে গত ২৮ জুলাই বণিক বার্তার পক্ষ থেকে ঢাকার মার্কিন দূতাবাসে একটি ই-মেইল পাঠানো হয়েছিল। দূতাবাস থেকে ওই ই-মেইলের জবাব দেয়া হয় ৪ সেপ্টেম্বর। এতে বলা হয় ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের মার্কিন কর্মীদের প্রস্থানের নির্দেশনা শেষ হওয়ার পর নিয়মিত কনসুলার পরিষেবা শাখা ২ সেপ্টেম্বর থেকে পুনরায় চালু হয়েছে। যদিও সব কর্মী ফেরত না আসা পর্যন্ত পরিষেবার পরিসর সীমিত রয়েছে বলে জানিয়েছে দূতাবাস। কনসুলার বিভাগ শিক্ষার্থীসহ জরুরি ভ্রমণের প্রয়োজনে ভিসা পরিষেবা প্রদান করছে।
ভিসা আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কতজন শিক্ষার্থীর সাক্ষাৎ সময়সূচি পুনর্নির্ধারণ করতে হয়েছে এবং কতজন শিক্ষার্থী আবেদনের পর সাক্ষাতের সময় পায়নি— এ প্রশ্নের জবাবে দূতাবাস বলেছে, বাংলাদেশের অস্বাভাবিক পরিস্থিতি এবং পরে মার্কিন দূতাবাসের কর্মীদের ঢাকা ত্যাগের নির্দেশ দেয়ার কারণে কনসুলার শাখাকে ১০ হাজারেরও বেশি সাক্ষাৎ সময়সূচি পুনর্নির্ধারণ করতে হয়েছে। ৮ জুলাই থেকে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী তাদের সাক্ষাৎ সময়সূচি পুনরায় নির্ধারণ করতে এবং যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণের ভিসা পেতে সক্ষম হয়েছে।
উচ্চশিক্ষার জন্য প্রতি বছর বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। গত বছরও দেশটিতে ১৩ হাজার ৫৬৩ শিক্ষার্থী পড়াশোনার জন্য গেছেন। বাংলাদেশ থেকে উচ্চ শিক্ষা নিতে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া শিক্ষার্থীদের নিয়ে ১০ জুলাই এক ‘মিডিয়া নোটে’ মার্কিন দূতাবাস জানিয়েছিল, ২০২২ সালের তুলনায় গত বছর বাংলাদেশী শিক্ষার্থী পড়তে যাওয়ার হার বেড়েছে ২৮ শতাংশ। শুধু তা-ই নয়, বাংলাদেশ থেকে গত বছর যে পরিমাণ শিক্ষার্থী গেছেন, তা এখন পর্যন্ত রেকর্ড সর্বোচ্চ। যুক্তরাষ্ট্রে বিদেশী শিক্ষার্থী যাওয়ার তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ১৩তম।
ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস সূত্রে জানা গেছে, গত এক দশকে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশী শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩০০ শতাংশের বেশি বেড়েছে। ২০১১-১২ অর্থবছরে দেশটিতে বাংলাদেশী শিক্ষার্থী গিয়েছিল ৩ হাজার ৩১৪ জন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ৫৬৩ জনে। বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চ শিক্ষার জন্য ২০২০-২১ অর্থবছরে ৮ হাজার ৫৯৮ শিক্ষার্থী প্রবেশ করেন। ২০২১-২২ অর্থবছরে গেছেন ১০ হাজার ৫৯৭ শিক্ষার্থী।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post