বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা মুহাম্মদ মামুনুল হক বলেছেন, ‘মানুষকে হত্যা ও নির্যাতন করে ক্ষমতায় থাকা যায় না। এ জন্য সরকারের পদত্যাগই হচ্ছে একমাত্র সমাধান।’
তিনি আরো বলেছেন, ‘শিক্ষার্থীরা কোটা সংস্কারের যৌক্তিক দাবি নিয়ে রাজপথে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিল। তাদের দাবিতে কর্ণপাত না করে উল্টা সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে উস্কানি ও কটাক্ষমূলক বক্তব্য দেয়া হয়।’ শনিবার দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
মাওলানা মুহাম্মদ মামুনুল হক বলেন, ‘সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা আন্দোলনকে দমন করতে ছাত্রলীগ, যুবলীগকে সাধারণ ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে উস্কে দেয়। ছাত্রলীগ ও পুলিশ বাহিনী শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে অশান্ত করায় রাজপথ আজ উত্তাল হয়ে উঠেছে। ইতোমধ্যে ছাত্রলীগ ও পুলিশের গুলিতে শত শত শিক্ষার্থী ও সাধারণ জনতা নিহত হয়েছে। তাদের এই নির্বিচার গুলিবর্ষণ ও নারকীয় তাণ্ডবে বহু শিশু প্রাণ হারিয়েছে। হাজার হাজার ছাত্র-জনতা আহত হয়েছে। অনেকে চিরদিনের জন্য চোখ হারিয়েছে, কেউ পা হারিয়েছে, কেউ হাত হারিয়েছে। আহতদের যথাযথ চিকিৎসার ক্ষেত্রেও নানাবিধ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হচ্ছে। গোটা দেশ আজ মৃত্যুপুরি। সরকার যেন কোমলপ্রাণ কিশোর-যুবা-শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমেছে। ফলে দেশ এখন এক মহাসঙ্কটে আবর্তিত।’
তিনি বলেন, ‘একটি স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে যে কেউ তাদের যৌক্তিক দাবি জানাতে পারে। কিন্তু একটি বিনা ভোট, রাতের ভোট আর ছলচাতুরীর ভোটে ক্ষমতা দখলকারী সরকার এতটাই দাম্ভিক এবং উদ্ধত যে তারা তাদের মতের বিপরীত কোনো কথা সহ্য করতে পারে না। জনগণের প্রশ্ন, শিক্ষার্থীরা তো এমন কোনো অযৌক্তিক আহামরি দাবি-দাওয়া নিয়ে রাজপথে নামেনি, যা পূরণ করতে এতগুলো তাজা প্রাণ কেড়ে নিতে হবে! অসংখ্য মানুষকে সারা জীবনের জন্য পঙ্গুত্বের দিকে ঠেলে দিতে হবে! শিক্ষার্থীদের ন্যায়সঙ্গত ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে সঙ্ঘাতময় পর্যায়ে আনার জন্য সরকারই দায়ী। সরকার দলীয় ছাত্র সংগঠনের সশস্ত্র নেতাকর্মীদেরকে আন্দোলনকারীদের পেছনে লেলিয়ে দিয়ে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে শক্তি প্রয়োগ করে, এমনকি নির্বিচারে গুলি চালিয়ে তাদেরকে দমন করতে চাওয়ার কারণেই গোটা দেশ আজ অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছে। সরকারের দাম্ভিকতা ও একগুঁয়েমির ফলে আন্দোলন সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে এবং প্রতিনিয়ত হতাহতের সংখ্যা বেড়েই চলছে। দেশে এখন এক অচল, অস্বস্তিকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এ সকল অপকর্মের দায় সরকার কোনোভাবেই এড়াতে পারে না। সরকারকে জুলুম-অত্যাচারের পথ বন্ধ করে জাতির কাছে ক্ষমা চেয়ে দ্রুত পদত্যাগ করতে হবে। ইতিহাস স্বাক্ষী, জেল-জুলুম, হত্যা ও নির্যাতন করে কোনো জাতিকে দাবিয়ে রাখা যায়নি।’
খেলাফত মজলিসের মহাসচিব বলেন, ‘ছাত্রসমাজের চলমান শান্তিপূর্ণ ও যৌক্তিক আন্দোলন ও নয় দফা দাবির প্রতি আমরা সংহতি প্রকাশ করি। ছাত্রসমাজের ওপর যাতে আর একটি গুলিও চালানো না হয় সেই দাবিও করি। একইসাথে আমরা এটাও স্পষ্ট করে বলতে চাই, আমরা কোনো প্রকার সহিংসতা সমর্থন করি না। আমরা শতভাগ নিরপেক্ষ ও আন্তর্জাতিকভাবে তদন্ত করে প্রকৃত দোষীদেরকে চিহ্নিত করে তাদেরকে শাস্তির আওতায় আনার দাবি করি। পাশাপাশি তদন্তের আগে সরকারের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক হীনস্বার্থে ঢালাওভাবে বিরোধী মতের লোকদের দায়ী করে বক্তব্য দেয়া সুষ্ঠু তদন্তে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করবে বলে মনে করি।’
মামুনুল হক বলেন, ‘ছাত্রসমাজের এই যৌক্তিক আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষদের গণগ্রেফতার করা হচ্ছে। রিমান্ডে নিয়ে লোমহর্ষক নির্যাতন করা হচ্ছে। বিভিন্নজনকে নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে। সরকার দলীয় নেতাকর্মীরা হামলা মামলার ভয় দেখিয়ে চাঁদাবাজি করছে। অনুমতি ব্যতিত ফোন-ব্যাগসহ ব্যক্তিগত আসবাবপত্র চেক করে মানুষের ব্যক্তিগত জীবনে হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে। কোনো সভ্য সমাজ ও রাষ্ট্রে এর কোনো নজির নেই। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘বর্তমান সরকারের কাছে মানুষের জীবনের কোনো মূল্য নেই। একটি স্বাধীন দেশে অধিকার চাইতে গেলে লাশ ও রক্তাক্ত হতে হবে কেন? গুলি টিয়ারশেল নিক্ষেপ করার জন্য হেলিকাপ্টার ব্যবহার করে মানুষকে রক্তাক্ত করার মতো পরিবেশ সৃষ্টি করা হলো কেন? এভাবে মানুষকে হত্যা ও নির্যাতন করে ক্ষমতায় থাকা যায় না। সুতরাং সরকারের পদত্যাগই হচ্ছে একমাত্র সমাধান। এ বিষয়টি সরকার যত তাড়াতাড়ি বুঝবে ততই তাদের জন্য ও দেশের জন্য কল্যাণ হবে। অন্যথায় সরকারের জন্য ভয়াবহ পরিণতি অপেক্ষা করছে। যাদের হাত ছাত্রসমাজ ও সাধারণ মানুষ এবং আলেম-ওলামাদের রক্তে রঞ্জিত তাদেরকে এক মুহূর্তের জন্যও দেশের মানুষ ক্ষমতায় দেখতে চায় না।’
তিনি বলেন, ‘এ সরকার দেশের সকল প্রশাসনিক ব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়েছে। পুলিশ, বিজিবি, র্যাব এমনকি সেনাবাহিনীর গৌরব, ঐতিহ্য ও মান সম্মান ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছে। তাদেরকে দলীয় কর্মী ও ক্যাডার বাহিনীর মতো ব্যবহার করা হচ্ছে। এভাবে একটি দেশ চলতে পারে না। সুতরাং আমরা আহ্বান করছি, সেনাবাহিনীকে দ্রুতই ব্যারাকে ফিরিয়ে নিন। কারফিউ উঠিয়ে নিন। এবং পদত্যাগ করে দেশকে শান্তির পথে ফিরিয়ে দিন।’
সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আজকের সংবাদ সম্মেলন থেকে আমরা জোর দাবি জানাচ্ছি, অবিলম্বে গ্রেফতার শিক্ষার্থী, রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষকে মুক্তি দিতে হবে এবং সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। নির্বিচারে গ্রেফতার, রাজনৈতিক নেতাদের আটক করা ও রিমান্ডে নেয়া বন্ধ করতে হবে। নিহতদের পরিবারকে যথাযথ রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ও ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। আহতদের চিকিৎসা এবং পঙ্গুদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিয়ে, ক্যাম্পাসে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টিকারী ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।’
তিনি আহ্বান জানান, ‘দল-মত নির্বিশেষে দেশের সকল মানুষ এই ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে অঘোষিত ঐক্যের মঞ্চ তৈরি করে ফেলেছে। কেউই আর চায় না এ সরকার ক্ষমতায় থাকুক। অতএব সকল রাজনৈতিক দলের প্রতি আমাদের আহ্বান থাকলো, আসুন সকল ভেদাভেদ ভুলে, দেশ ও উম্মাহকে বাঁচাতে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলি। পারষ্পরিক ভেদাভেদ দূরে ঠেলে দিয়ে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে রাজপথে শিষাঢালা প্রাচীর গড়ে তুলি।’
তিনি আরো বলেন, ‘চলমান আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করছি, যারা আহত হয়েছেন তাদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি দেশবাসীর প্রতি হতাহতদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানাচ্ছি এবং ক্ষতিগ্রস্থদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি।’
আমিরে মজলিস শায়খুল হাদিস আল্লামা ইসমাঈল নুরপুরীর সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা ইউসুফ আশরাফ, নায়েবে আমির মাওলানা রেজাউল করিম জালালী, মাওলানা খুরশিদ আলম কাসেমী, মুফতি সাঈদ নুর, যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ, মাওলানা আতাউল্লাহ আমীন, মাওলানা কোরবান আলী কাসেমী, মাওলানা আব্দুল আজীজ, মুফতি শরাফত হোসাইন, মাওলানা মহবুবুল হক, মাওলানা তোফাজ্জল হোসাইন মিয়াজী, অফিস ও সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুর রহমান হেলাল, সাংগঠনিক সম্পদক মাওলানা এনামুল হক মুসা, মাওলানা মুহাম্মদ ফয়সাল, মাওলানা আবুল হাসানাত জালালী, মাওলানা আবু সাঈদ নোমান, সমাজ কল্যাণ সম্পাদক মাওলানা সামিউর রহমান মুসা, কেন্দ্রীয় বায়তুলমাল সম্পাদক মাওলানা নিয়ামতুল্লাহ, প্রশিক্ষণ সম্পাদক মাওলানা মুহসিনুল হাসান, কেন্দ্রীয় প্রকাশনা সম্পাদক মাওলানা হারুনুর রশীদ ভূঁইয়া, সহ-সমাজ কল্যাণ সম্পাদক মাওলানা শরীফ হোসাইন, সহ-বায়তুলমাল সম্পাদক মাওলানা ফজলুর রহমান, সহ-প্রশিক্ষণ সম্পাদক মাওলানা জহিরুল ইসলাম, নির্বাহী সদস্য মাওলানা সাব্বির আহমদ উসমানী, মাওলানা জসিম উদ্দীন, মাওলানা রুহুল আমীন খান, মাওলানা মুহসিন উদ্দীন বেলালী, মাওলানা হেদায়াতুল্লাহ হাদী, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি মুফতি নুর মোহাম্মদ আজিজী, সাধারণ সম্পাদক মাওলানা ছানাউল্লাহ আমিনী, ঢাকা মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আনোয়ার হোসাইন রাজী, ইসলামী ছাত্র মজলিসের কেন্দ্রীয় সভাপতি মুহাম্মদ আশিকুর রহমান জাকারিয়া প্রমুখ।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post