পারিবারিক কলহের জেরে কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার কণ্ঠনগরে ফারজানা আক্তার নামে এক গৃহবধূকে মেরে লাশ হাসপাতালে রেখে পালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে এক প্রবাসী স্বামীর বিরুদ্ধে।
রবিবার (২৮ জুলাই) বিকালে স্ত্রীর গলায় আঘাতের চিহ্ন নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায় স্বামী। পরে হাসপাতালের চিকিৎসক পরীক্ষা করে ফারজানাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এদিকে হাসপাতালে পুলিশ আসার খবর শুনে স্বামী ফরহাদ ও তার মা-বাবা পালিয়ে যায়।
জানা যায়, তিন বছর আগে পীরযাত্রাপুর ইউনিয়নের কণ্ঠনগর গ্রামের ইয়াছিন বাবুর্চি ছেলে মালদ্বীপ প্রবাসী ফরহাদ হোসেনের সঙ্গে একই উপজেলার হরিপুর উত্তরপাড়ার রিকশাচালক রফিকুল ইসলামের মেয়ে ফারজানার বিয়ে হয়। ফাহিম নামে ১৭ মাসের এক পুত্রসন্তান রয়েছে তাদের। সংসারের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ফারজানার শ্বশুর বাড়িতে পারিবারিক কলহ চলছিল।
এ বিষয়ে নিহত ফারজানার মা জুলেখা আক্তার জানান, তার মেয়েকে বিয়ে করে নেওয়ার পর থেকেই শ্বশুর–শাশুড়ি মানসিক ও শারীরিকভাবে নির্যাতন করে আসছে। এ নিয়ে সমাজ সালিশিও বসেছিল কয়েকবার। কয়েক মাস আগে মেয়ের স্বামী ফরহাদ হোসেন মালদ্বীপ থেকে বাড়িতে আসে। কিছুদিন স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক ভালো চললেও ইদানিং মেয়েকে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করে আসছে এবং শ্বশুর বাড়িতে যাওয়া বন্ধ করে দেয়।
মেয়ের স্বামী কয়েকদিন পর বিদেশে চলে যাবে এমন খবর শুনে জুলেখা আক্তার ঘটনার দিন সকালে মেয়ের শ্বশুর বাড়িতে দাওয়াত দিতে গেলে ফরহাদ হোসেন বলেন ‘আপনার মেয়ের সঙ্গে আমি আর সংসার করতে চাই না,আপনার মেয়েকে সঙ্গে করে নিয়ে যান, যত টাকা লাগে আমি দিয়ে দেব’ এই কথা বলার পর জুলেখা আক্তার জবাবে বলেন, আমার মেয়েকে আমি পাঁচ জন ছাড়া নিতে পারব না। এমন কথা বলে মেয়েকে সান্ত্বনা দিয়ে বাড়িতে চলে আসে। বিকালে খবর আসে ফারজানার লাশ হাসপাতালে রেখে স্বামী ফরহাদ হোসেন পালিয়ে গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চিকিৎসক জানান, ফারজানার লাশ নিয়ে এসে তার স্বামী ও তার শ্বশুর বাড়ির লোকজন চিকিৎসককে বলেন, তার স্ত্রী আত্মহত্যা করেছে। পরে চিকিৎসক তার গলায় আঘাতের চিহ্ন পায়।
ফারজানার মা জুলেখা আক্তার, বাবা রফিকুল ইসলাম ও মামা জামাল হোসেন দাবি করে বলেন, ফারজানাকে মেরে ফেলা হয়েছে। মেয়ের শরীরে আঘাতের চিহ্ন পেয়েছি। যদি সে ফাঁসি দিয়ে আত্মহত্যা করত তাহলে পুলিশের উপস্থিতিতে লাশ নামাত এবং শ্বশুর বাড়িতে জানাত। হাসপাতালে মেয়ের লাশ রেখে পালাত না। আমরা থানায় অভিযোগ করেছি।
অভিযোগের ভিত্তিতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, শ্বশুর বাড়ির লোকজন ঘরের দরজা তালা দিয়ে পালিয়ে গেছে। এ সময় তাদের পরিবারের কারও বক্তব্য নেওয়ার সম্ভব হয়নি। তবে স্থানীয় সুশীল সমাজের লোকজন ও নিহত ফারজানার বাবার বাড়ির লোকজন প্রশাসনের নিকট সঠিক বিচার চেয়েছেন।
অন্যদিকে অভিযোগ পেয়ে থানার তদন্ত ওসিসহ এসআই নূরুল ইসলাম ও এসআই নাছর উল্লাহ হাসপাতালে গিয়ে স্বামীর বাড়ির কাউকে পায়নি।
এ বিষয়ে বুড়িচং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসানাত খন্দকার বলেন, লাশ উদ্ধার করে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত করা হবে। তদন্ত প্রতিবেদন পেলে অভিযোগ পরিপ্রেক্ষিতে আইগত ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post