১৯৮৯ সালে পুলিশের এসআই পদে নিয়োগের পর চাকরির ধারাবাহিকতায় বর্তমানে সিএমপির অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) কামরুল হাসান। এর মধ্যে তিনি গড়েছেন সম্পদের পাহাড়। বিলাসবহুল বাড়ি, গাড়িসহ তার ভাণ্ডারে যেন সবই আছে। শুধু নিজের নয়, স্ত্রীর নামেও গড়েছেন অঢেল সম্পদ।
দুদকের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে কিছু অবৈধ সম্পদের তথ্য। সেখানে স্ত্রী সায়রা বেগমকে পাঁচটি জাহাজ (বার্জ) কিনে দেওয়ার তথ্য মিলেছে। সম্প্রতি এসব সম্পদ ক্রোকের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
দুদকের অনুসন্ধান প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, সায়মা বেগমের নামে থাকা পাঁচ জাহাজের মধ্যে আছে– এমভি প্যাসিফিক রাইডার, এমভি পানামা ফরেস্ট-১, এমভি রাইসা তারাননুম, বার্জ আল বাইয়েত। এ পাঁচটি জাহাজের মধ্যে এক তৃতীয়াংশের মালিক সায়মা বেগম। এসব জাহাজে কাগজে-কলমে বিনিয়োগ দেখানো হয়েছে এক কোটি ৫১ লাখ ৩১ হাজার ৩৮০ টাকা। অথচ বাস্তবে এ বিনিয়োগ তিন থেকে চার গুণ বেশি হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এসব জাহাজ পরিচালনা করছে ‘সওদাগর নেভিগেশন’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান। ওই প্রতিষ্ঠানের মালিকও সায়মা। নগরীর আগ্রাবাদের পোর্টল্যান্ড সাত্তার টাওয়ারের চতুর্থ তলায় রয়েছে সওদাগর নেভিগেশনের অফিস।
এদিকে, দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে কামরুল হাসানের নামে ১২ কোটি ৭২ লাখ ৯২ হাজার ২১৬ টাকার স্থাবর এবং ১ কোটি ২৩ লাখ ৩৯ হাজার ২১৬ টাকার অস্থাবর সম্পত্তিসহ মোট ১৩ কোটি ৯৬ লাখ ৩১ হাজার ৯১১ টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া যায়।
জানা গেছে, পুলিশে ইন্সপেক্টর পদে পদোন্নতি পেয়ে চট্টগ্রামের ৮টি থানায় ওসি হিসেবে দায়িত্বপালন করেন নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা কামরুল হাসান। মূলত ওই সময়েই বিপুল অর্থ-সম্পদের মালিক হয়ে ওঠেন।
সূত্রের তথ্যমতে, দৃশ্যত কোনো আয় না থাকলেও কামরুল হাসানের স্ত্রী সায়মা বেগমের ২ কোটি ৫৩ হাজার ২৪০ টাকার সম্পদ থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। সায়মা বেগমের আছে ১ কোটি ২৫ লাখ টাকার স্থাবর ও ১ কোটি ৯৯ লাখ ২৮ হাজার টাকার অস্থাবর সম্পদ।
দুদক সূত্রে জানা যায়, কামরুল হাসানের চট্টগ্রাম নগরের সবচেয়ে অভিজাত খুলশী আবাসিক এলাকায় ‘ফয়জুন ভিস্তা’ অ্যাপার্টমেন্টের অষ্টমতলায় সি-৭ নামে ২ হাজার ৫৭০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট ও ১৩৬ বর্গফুটের গাড়ি পার্কিং রয়েছে। সোয়া সাত লাখ টাকায় ফ্ল্যাট ও মাত্র ২৫ হাজার টাকায় পার্কিং স্পেস কিনেছেন আয়কর নথিতে দাবি করলেও খুলশীতে আড়াই হাজার বর্গফুটের ফ্ল্যাটের বর্তমান বাজারমূল্য তিন কোটি টাকার বেশি।
চট্টগ্রাম নগরের পশ্চিম নাসিরাবাদে সাত শতক জমির উপর চারতলাবিশিষ্ট বাড়ি করেছেন কামরুল হাসান। জমিসহ এই ভবন নির্মাণে ১ কোটি ৬৫ লাখ টাকা খরচ দেখালেও নাসিরাবাদ এলাকায় এক শতক ভূমিই এক কোটি টাকার বেশি মূল্যে কেনাবেচা হচ্ছে। সেই হিসাবে ভূমি ও ভবনের বাজারমূল্য কমপক্ষে ৮ কোটি টাকা।
ঢাকার সাভারে ১০৭ শতক জায়গার উপর সাভার সিটি সেন্টার নামে ১২ তলা ভবনের চারজন অংশীদারের একজন এডিসি কামরুল। সেখানে তিনি কাগজ-কলমে সাত কোটি ৫২ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছেন। এ ভবনের বেজমেন্টে ৯০টি, প্রথমতলায় ১৪০টি, দ্বিতীয় তলায় ১৪৬টি, তৃতীয়তলায় ৮৯টি ও চতুর্থ তলায় ১০৩টি দোকান এবং ৫ হাজার বর্গফুটের ফুডকোর্ট, পঞ্চম তলায় অফিস ও ষষ্ঠতলায় ৬৭টি ফ্ল্যাট রয়েছে। বাজারমূল্যে এ সম্পদের মূল্য শতকোটি টাকারও বেশি।
এদিকে সাভার সিটি টাওয়ার নামে একটি ১০ তলা আবাসিক ভবনেরও অংশীদার কামরুল। সেখানে ৫৪টি ফ্ল্যাট রয়েছে। এছাড়া চট্টগ্রাম নগরের উত্তর হালিশহর, নাসিরাবাদ, চান্দগাঁও এলাকা শতাধিক ফ্ল্যাট ও দোকান রয়েছে কামরুলের। চট্টগ্রাম ও ঢাকার সাভারে ১৫৪ শতক জমি ও দুটি বাড়ি রয়েছে তার। পাশাপাশি কামরুলের ব্যাংকে ১ কোটি ১০ লাখ ৫০ হাজার টাকার বন্ড ও এফডিআর থাকার তথ্য উঠে এসেছে দুদকের অনুসন্ধানে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post