আমাদের অনেকেই যখন ১৫ হাজার টাকা বেতন পেতাম, তখনকার অবস্থা আর আজ দেড় লক্ষ টাকা বেতন পেয়েও অবস্থা একই। কারণ খরচটা বেড়ে গেছে। বেড়েছে পণ্য আসক্তি ও পণ্য দাসত্ব। আর বোকা এক শ্রেণীর মানুষ খুব সহজেই এতে পা দিচ্ছেন। যে টাকা আপনার না, ক্রেডিট কার্ডের নামে আপনি সেই টাকা খরচ করছেন।
বিয়ে করবেন? কিস্তিতে মিলছে সব ফার্নিচার, হানিমুনে যাবেন? বাকিতে বালি যান। টিকিট বাকিতে কেনেন। একটা ক্যামেরা নিবেন না? কিনেন বাকিতে? কিস্তি তো আছে। অল্প অল্প করে দেবেন।
আমরা প্রথমে সেই ফাঁদে পা দেই, ধরেন আপনি ৮০০০০ টাকা বেতন পান৷ ফুটানি মেরে বিয়ে করতে গিয়ে ধার করেছেন তিন লাখ। এবার বালি যাচ্ছেন বাকিতে। মাসে কিস্তি ৭০০০ টাকা মাত্র। বাসায় পাতলা টিভি এনেছেন।
ওখানে কিস্তি আর ৫০০০টাকা৷ বাসা ভাড়া দেন ৩০ হাজার। মাসে দুই চারবার ভুপে খেয়ে পোস্ট দিয়ে ফুটানি মারেন। কিন্তু টাকা আর শোধ হয় না। কিভাবে টাকা শোধ দিবেন এই নিয়ে সব সময় দুশ্চিন্তা। মন ভালো থাকে না। মেন্টাল শান্তি নাই। সামনে গরম কাল, এসি লাগাতে হবে ঘরে। আপনার মাথায় ঢুকে গেছে এসিই আপনার চোখে ঘুম এনে দিবে।
স্যার, বাকিতে এসি নেন। পরে আস্তে আস্তে শোধ করে দেবেন। বাকি বোঝা আরেকটু বাড়লো। এর মাঝে আপনার বউ প্রেগন্যান্ট। তাকে ডাক্তার দেখাতে হবে। বেতনের টাকা ভাড়া আর কিস্তি দিতে দিতে শেষ। এবার নতুন পরিসরে, কিস্তি আর কার্ড দিয়ে আর কুলাচ্ছেনা, এবার ধার করতে হবে।
নিজের ইমেজের ১২টা বাজিয়ে নিলেন ধার। বললেন ২০ দিন পর শোধ দেবেন। কিন্তু ২০ দিনে আপনার আয় বাড়বে কি? নাকি আবার ধার করবেন। ২০ দিন পেরিয়ে ২২ দিন হতে গেল। এবার বন্ধু আপনাকে ফোন দিলো।
আপনি ভাবলেন কি মিথ্যা অজুহাত দেয়া যায়। আচ্ছা দিলেন একটা কিছু। আপনার মিথ্যা বলার হাতে খড়ি। আপনি টয়লেটে গেলে বলেন মতিঝিল, আর মতিঝিল গেলে বলেন পীরের বাগ। ঠিক পলাতক আসামীর মতো।
এদিকে আবার এনিভারসারি, ফুটানি মেরে একটা কিছু তো কিনতেই হবে। আগের বন্ধু আর না, এবার চাবো কলিগের কাছে। ওমা, ওয়াইফের ডেলিভারি ডেট আসন্ন। পাঁচ তারকা মানের হাস পাতালে যেতে হবে। এবার আত্মীয়ের থেকে টাকা ধার করি।
নাহ, এতো টেনশন আর নিতে পারছি না। এবার আপনার বাবার অবসরে যাওয়ার পর যে কয়টা টাকা পেয়েছে তার দিকে নজর। তাই নিয়ে তুমুল ঝগড়া। বাবা শেষ মেশ কিছু টাকা দিলেন।
আরো পড়ুনঃ এয়ারপোর্টে নেমেই কান্নায় ভেঙ্গে পরেই ৫ ওমান প্রবাসী
কিন্তু হায়, আজ আবার পল্টুটার জন্মদিন। আবার ফুটানি মারার চেষ্টা, যা নেই তা নিয়ে বড়াই করা ও শো অফের চেষ্টা। যে টাকা আপনার না, যে টাকা আপনি কামাই করেন নাই, তাই খরচ করা আবার নতুন করে শুরু।
কি যে ভয়ানক এই সাইকেল, তা কেবল মাত্র এই সাইকেলে যারা পড়েছেন, তারাই জানেন। এতো টাকা আয় করেন, টাকা যায় কই? মনে তো কোন শান্তি নেই, টেনশন।
আমেরিকার মানুষ এখন তিন ট্রিলিয়ন ডলার লোণে ডুবে আছে। বাংলাদেশে যারা শহরে থাকেন, ও সারা বছরের আয় প্রায় ১০ লক্ষ টাকা, তাদের প্রত্যেকের প্রায় ৩-৪ লক্ষ টাকার লোণ রয়েছে।
এই টাকা কিভাবে শোধ দিবেন, সেই চিন্তা প্রতিনিয়ত আমাদের অসুস্থ করে তুলছে। অনেক বাবা মা সন্তানের জন্যে কিছু করার তালে ফ্ল্যাট কেনাকে জীবনের লক্ষ্য করে ফেলেন। বাবা মা হিসেবে সন্তানকে ভালো মানুষ করার লক্ষ্য দিতে হবে।
আপনি নিজেই যদি তাকে ফ্লাট করে দেন, তাহলে সে আর করবেটা কি? আয় বুঝে খরচ করুন। অপচয় ও ফুটানি ধর্মীয় দিক বিবেচনায়ও নিষিদ্ধ। আপনি কি মনে করেন, আপনার এই জীবন যাপন আজ থেকে ২০০ বছর পর আপনার পরের জেনারেশন মনে রাখবে? তারা কি আপনার মতো নিঃস্ব, কিস্তি জর্জরিত, ঋণগ্রস্ত মানুষকে মনে রাখবে?
আরো পড়ুনঃ কানাডায় চাকরির সুযোগ, আবেদন করবেন যেভাবে
বড়শি দিতে মাছ যেমন ধরা হয়, নেড়ে চেড়ে আধার খেতে দেয়, গলায় বিধে নিলে আর নিস্তার নাই। খাঁচার পাখি ভালো খেতে পায়, কিন্তু জীবনটা থাকে বন্দী। তেমনি ঋণ যে করে তারও নিজের উপর আর নিজের কন্ট্রোল থাকে না। ভালো হয় নিত্য দিন দানের অভ্যাস করুন। যে দান করে তার হাত উপরে থাকে আর যে ঋণ করে বা হাত পাতে তার হাত থাকে নিচে।
ফেসবুক থেকে সংগৃহীত
https://www.youtube.com/watch?v=SEwlZlYYBDM
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post