দীর্ঘ সাড়ে তিন বছরের বিবাদ নিরসনে সমঝোতায় একমত হয়েছে সৌদি আরব এবং কাতার। এই দুই দেশের সমঝোতাকে স্বাগত জানিয়েছে তুরস্ক। তুর্কি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে জানায়, দুই দেশের বিরোধ নিষ্পত্তিতে পারস্পরিক সীমান্ত খুলে দেওয়ার এই উদ্যোগ একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
২০১৭ সালের মাঝামাঝি কাতারের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে সৌদি আরব। সীমান্ত বন্ধ করে দেয়া হয়। সৌদির উপর দিয়ে কুয়েতের বিমান চলাচলও বন্ধ করে দেয়া হয়।
গালফ কোঅপারেশন কাউন্সিলের শীর্ষ বৈঠকের প্রাক্কালে সোমবার সৌদির সীমান্ত খুলে দেয়ার ঘোষণা করেন কুয়েতের বিদেশমন্ত্রী আহমেদ নাসের আল-সাবাহ। তিনি জানিয়ে দেন, রিয়াধ তাঁদের স্থল সীমান্ত কুয়েতের জন্য খুলে দেবে। আকাশ ও সমুদ্র পথও খুলে দেয়া হবে।
কুয়েতের বিদেশমন্ত্রী জানিয়েছেন, কুয়েতের আমির কথা বলেছেন সৌদির যুবরাজ এবং কাতারেরআমিরের সঙ্গে। তিন নেতা একত্রিত হয়ে বিবৃতিতে সই করবেন এবং ভাতৃত্বসুলভ সম্পর্ক শুরু হবে।
কী নিয়ে বিরোধ
২০১৭ সালের মাঝামাঝি নাগাদ সৌদি আরব ও কাতারের মধ্যে উত্তেজনা চরমে ওঠে। সৌদি আরব তখন কাতারের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে। সীমান্ত বন্ধ করে দেয়া হয়। বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিন্ন করা হয়।
আমিরাত, বাহরাইন এবং মিশরও একই ধরনের ব্যবস্থা নেয়। এই চার দেশের অভিযোগ ছিল, দোহা কট্টরপন্থীদের সমর্থন করছে এবং তারা সৌদির বিরোধী ইরানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হচ্ছে।
সম্পর্ক স্বাভাবিক করার জন্য এই চার দেশ ১৩ দফা প্রস্তাব দিয়েছিল কাতারকে। তার মধ্যে ইরানের সঙ্গে দূরত্ব ছাড়াও আল জাজিরা নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দেয়ার শর্ত রাখা হয়েছিল। এর মধ্যে কতগুলি শর্ত কাতার মেনেছে, তা এখনো জানা যায়নি।
আরো পড়ুনঃ নিয়ন্ত্রণের বাইরে করোনা, দেশে দেশে ফের লকডাউন
কাতার হলো এই অঞ্চলে সব চেয়ে বড় মার্কিন সামরিক ঘাঁটি। তাদের বক্তব্য ছিল, চার দেশ যে ব্যবস্থা নিয়েছে, তাতে কাতারের সার্বভৌমত্বের উপর আঘাত করা হয়েছে। মধ্যস্থতায় কুয়েত
একদিকে সৌদি সহ চার দেশ, অন্যদিকে কাতার, এই দুই তরফের ঝগড়ায় মধ্যস্থতার ভূমিকা নেয় কুয়েত। ২০২০-র ডিসেম্বরে কুয়েতের বিদেশমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে। সংশ্লিষ্ট সব দেশই আরব ও উপসাগরীয় দেশগুলির ঐক্যের পক্ষে।
সে সময় কাতারের বিদেশমন্ত্রী বলেছিলেন, কোনো দেশই তাদের দাবি অন্য দেশের উপর চাপিয়ে দিতে পারে না। প্রতিটি দেশ স্বাধীনভাবে নিজের বিদেশনীতি নিয়ে চলবে। মধ্যস্থতাকারী কুয়েত শেষপর্যন্ত সাফল্য পেল।
হোয়াইট হাউসের এক উচ্চপদস্থ অফিসার জানিয়েছেন, তাঁদের আশা, অন্য তিন দেশও সৌদির মতো কাতারের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবে।
জ্যারেড কুশনারের জয়?
গতবছর ডিসেম্বরের গোড়ায় গালফ দেশগুলি সফর করেন হোয়াইট হাউসের সিনিয়ার অ্যাডভাইসার জ্যারেড কুশনার। সোমবার হোয়াইট হাউস দাবি করেছে, বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের জামাই কুশনারের সফরের ফলে জট খুলেছে। তিনি সৌদি আরব ও কাতারের মধ্যে সমঝোতায় সই করার অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পারেন।
হোয়াইট হাউসের অফিসার জানিয়েছেন, এটা বিশাল ঘটনা। এর ফলে ওই অঞ্চলে স্থয়িত্ব আসবে।
কুশনার এর আগে একাধিক আরব দেশের সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন। এই কূটনৈতিক প্রয়াসের পিছনে অ্যামেরিকার একটা উদ্দেশ্য আছে। তা হলো, ইরানের বিরুদ্ধে এই অঞ্চলের দেশগুলিকে একজোট করা।
আরো পড়ুনঃ ওমানে ফের ঊর্ধ্বমুখী করোনা
একই সঙ্গে সংকট নিরসনে কুয়েতসহ অন্য দেশগুলোর প্রচেষ্টার প্রশংসা করেছে তুর্কি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তুর্কি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আমাদের প্রত্যাশা, পারস্পরিক সার্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধার ভিত্তিতে এই বিরোধের একটি পূর্ণাঙ্গ ও স্থায়ী সমাধানে পৌঁছাতে হবে। কাতারের জনগণের বিরুদ্ধে অন্যান্য নিষেধাজ্ঞাগুলোও অবিলম্বে প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছে আঙ্কারা।
কাতারবিরোধী ওই অবরোধ প্রত্যাহারে ১৩ দফা দাবি তুলে ধরেছিল সৌদি জোট। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল আল জাজিরা টেলিভিশন বন্ধ করে দেওয়া, কাতার থেকে তুরস্কের সামরিক ঘাঁটি প্রত্যাহার এবং মুসলিম ব্রাদারহুডের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করা।
আরো পড়ুনঃ করোনার নতুন সঙ্ক্রামন থেকে যেভাবে বাঁচবেন
তবে সৌদি জোটের দাবি প্রত্যাখ্যান করে উল্টো তুরস্কের দিকে আরও বেশি ঝুঁকে পড়ে কাতার। তুরস্কও কাতারের সমর্থনে এগিয়ে আসে। গত কয়েক মাস থেকেই কুয়েতের পাশাপাশি সৌদি-কাতার বিরোধ নিরসনে উদ্যোগী হয় ট্রাম্প প্রশাসন। এরই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার সৌদি আরবের দিক থেকে কাতার সীমান্ত খুলে দেওয়ার কথা জানায় কুয়েত।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post