পৃথিবীর দ্বিতীয় জনবহুল রাষ্ট্র চীন। এই চীনের একটি গ্রাম রয়েছে যা বর্তমানে দেশের অনেকেরই নজর কেড়েছে। আসুন চীনের জিয়াংশু প্রদেশে অবস্থিত এই গ্রামটি সম্পর্কে জেনে নিই কিছু অজানা তথ্য।
চীনের বিভিন্ন প্রদেশে অবস্থিত গ্রামগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ধনী গ্রাম হুয়াক্সি। সারা বিশ্ব জুড়েই এই গ্রাম ‘সুপার ভিলেজ’ নামে পরিচিত।
গ্রামটি চীনের জিয়াংসু প্রদেশে অবস্থিত। এই গ্রামে প্রায় দুই হাজার মানুষ বসবাস করেন। প্রতিটি বাসিন্দার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে রয়েছে কমপক্ষে প্রায় এক কোটি টাকা।
গ্রামটির বাসিন্দাদের স্বাস্থ্য, শিক্ষাসহ সবকিছু বিনামূল্যে দেওয়া হয়। এছাড়াও এখানকার লোকদের কাছে রয়েছে আধুনিক সুযোগ সুবিধাযুক্ত বিলাসবহুল বাড়ি আর অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্রান্ডেড গাড়ি।
গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে পরিবারের সদস্য সংখ্যা অনুযায়ী কম করে হলেও দুটি করে গাড়ি রয়েছে। শুধু তাই নয় একথা শুনলে অবাক হবেন এখানকার মানুষরা দূরবর্তী কোনো জায়গায় যেতে হেলিকপ্টার ব্যবহার করেন।
গ্রামটিতে রয়েছে সবসমেত সাতটি বহুজাতিক শিল্প প্রতিষ্ঠান। যার শেয়ার হোল্ডার বা অংশীদার এই গ্রামের গ্রামবাসীরাই।
বিশাল বিশাল শিল্পপ্রতিষ্ঠান থেকে তারা বছরে প্রায় ৮০০ কোটি মার্কিন ডলার উপার্জন করেন। হুয়াক্সিতে সবাই ধনী হলেও সেখানকার সবকিছুই অনেক রহস্যময়। গ্রামের অবস্থিত প্রতিটি ঘরের আকার এবং নকশা একই রকমের। বাড়িগুলো দেখতে অনেকটাই জমিদার বাড়ির মতো।
এখানকার স্থানীয় বাসিন্দারা সবাই নামিদামি ব্র্যান্ডের জিনিসপত্র ব্যবহার করেন। সব বাসিন্দা একসঙ্গে সমবেত হওয়া ও খাওয়ার জন্য বিশাল জায়গা থাকলেও গ্রামের জুয়া খেলা ও মাদক সেবন পুরোপুরি নিষিদ্ধ।
আধুনিক সভ্য সমাজের মতো সুযোগ সুবিধা থাকলেও সেখানে নেই কোনো ক্লাব, মদের দোকান, নাইট ক্লাব এমনকি পার্টি করার জন্য কোনো রেস্তোরাও নেই।
২০১১ সালে এই গ্রামটির ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ৩২৮ মিটার লম্বা একটি হোটেল তৈরি করা হয়, যা আইফেল টাওয়ারের থেকে অনেকটাই বড়। এই ভবনের চূড়ায় সম্পূর্ণ স্বর্ণের তৈরি একটি ষাঁড়ের ভাস্কর্যও রয়েছে। একটন ওজনের এই ভাস্কর্যের বর্তমানে মূল্য ৪৩ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি।
এই গ্রামে আগত পর্যটকদের কাছে অন্যতম প্রধান আকর্ষণ এই হোটেলটিকে বলা হয় হুয়াক্সির ঝুলন্ত গ্রাম। আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে এই গ্রামের কর্মরত শ্রমিকদের কোনো ছুটির দিন নেই। তাদেরকে সপ্তাহের সাতদিনই কাজ করতে হয়। গ্রামে বসবাসকারী কোনো সদস্যের গণমাধ্যমের সামনে কথা বলার অনুমতিও নেই।
এমনকি দূর দূরান্ত থেকে আগত পর্যটকদের সঙ্গে কথাও বলতে পারবে না তারা। তবে গ্রামবাসীদের অর্জিত সম্পদটি আসলে তাদের নিজেদের নয়, পুরোটাই কর্পোরেশনের অধীনে। গ্রামের সম্পদ গ্রামেই থাকবে এই নীতিতে বিশ্বাসী হুয়াক্সিবাসি। তাই কেউ গ্রাম ছেড়ে যেতে চাইলে সঙ্গে করে কিছুই নিয়ে যাওয়ার অনুমতি নেই।
১৯৬১ সালে গড়ে ওঠে গ্রামটি। স্থানীয়দের মতে প্রথম দিকে আর পাঁচটা সাধারণ গ্রামের মতোই ছিল হুয়াক্সি। তখন গ্রামের বাসিন্দারা খুবই দরিদ্র ছিল।
প্রথম থেকে মাত্র ৬০০ মানুষ বসবাস করত সেখানে। তবে গ্রামটি সম্পূর্ণ আধুনিক রূপ পায় স্থানীয় কমিউনিস্ট পার্টির সাবেক সেক্রেটারি রেনবাওয়ের অক্লান্ত প্রচেষ্টায়। তিনিই এই গ্রামের উন্নয়নের জন্য রোড ম্যাপ প্রস্তুত করেছিলেন।
রেনবাও ১৯৯০ সালের শেষের দিকে গ্রামটিতে বারোটি কর্পোরেশন এবং একটি শেয়ারবাজারের কার্যক্রম শুরু করেন। পাশাপাশি তিনি পোশাক এবং বিভিন্ন ধাতু তৈরি কারখানাও তৈরি করেন। তারপর তাকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। রাতারাতি গ্রামের ভাগ্য বদলে যায় এবং হুয়াক্সি বিশ্বের সবচেয়ে ধনী গ্রামে পরিণত হয়।
চীনের সবচেয়ে জনপ্রিয় কৃষক উপাধি পাওয়া এই ব্যক্তিটি ২০১৩ সালে মারা যান। তখন থেকেই তার পরিবারের সদস্যরা এই গ্রামেই নিয়ন্ত্রণ করে আসছে। হুয়াক্সিকে সোশালিস্ট তকমা দিয়েছেন গ্রামবাসীরা। এটা দাবি করা হয় একসময় যারা চাষাবাদ করতেন তারা এখন প্রায় সবাই কোটিপতি।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post