মোয়াজ্জেম হোসেন মারা গেছে প্রায় বছর খানেক আগে। কিন্তু মৃত্যুর পরও আঙুলের ছাপ দিয়ে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল তুলে চলেছেন তিনি। এমন তুঘলকি কান্ড ঘটেছে বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার চাঁপাপুর ইউনিয়নে। শুধু তাই নয়, এ ইউনিয়নের অনেক বাসিন্দা জানেনই না তার নামে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির কার্ড রয়েছে এবং নিয়মিত চালও তোলা হচ্ছে। এ ছাড়া প্রবাসী ব্যক্তির নামেও রয়েছে কার্ড। পুরুষের কার্ডে রয়েছে নারীর ছবি। এরকম বিভিন্ন উপায়ে ভুয়া কার্ড তৈরি করে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির সরকারি চাল আত্মসাৎ করছেন চাঁপাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, মেম্বার ও ডিলার।
ইউপি চেয়ারম্যান আবদুস সালাম এই প্রতিবেদকের কাছে স্বীকার করেন তিনি প্রায় এক বছর আগে মোয়াজ্জেম হোসেনের জানাজায় অংশ নিয়েছিলেন। খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ডিলার মাজেদ জানান, মোয়াজ্জেমের মৃত্যুর তথ্যটি চেয়ারম্যান ও উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রককে জানানো হয়েছে। কিন্তু নাম বাদ না যাওয়ায় তার নামে তার কোনো এক আত্মীয় চাল উঠিয়ে নেয়। কিন্তু সরেজমিনে দেখা যায়, চাল বিতরণের সময় মৃত মোয়াজ্জেম হোসেনের চাল তুলছে ডিলারের লোকজন। আঙুলের ছাপও দিচ্ছে তারা।
ইউনিয়নের বেজার গ্রামের গৃহবধূ লাভলী আক্তারের নামে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির একটি কার্ড রয়েছে। কার্ডের সূত্র ধরে তার বাড়িতে গেলে দেখা যায় কার্ডে লাভলী আক্তারের যে ছবি দেওয়া আছে, তার সঙ্গে বাস্তবের লাভলী আক্তারের কোনো মিল নেই। লাভলীর জাতীয় পরিচয় পত্রের নম্বর, বাবার নাম ঠিক থাকলেও ছবিটি তার শাশুড়ির। গৃহিণী হলেও পেশা দেওয়া আছে দিনমজুর। লাভলী আক্তার ও তার শাশুড়ি জানান, তাদের নামে যে কার্ড আছে সেটি তারা জানেনও না।
স্থানীয় ইউপি সদস্য ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘লাভলী আক্তারের ভাইয়ের পরিচয়ে এক ব্যক্তি কাগজ নিয়ে এসেছিল। তাই তার কার্ড করে দেওয়া হয়েছে।’ তবে অনুসন্ধানে দেখা যায়, লাভলী আক্তারের কার্ড দিয়ে চাল ওঠাচ্ছেন ডিলার নিজেই।
ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ভেনল্যা গ্রামের বাসিন্দা প্রবাসী শাহিদুল ইসলামের নামেও একটি কার্ড রয়েছে। তবে কার্ডে শহিদুলের ছবির পরিবর্তে রয়েছে তার স্ত্রীর ছবি। এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হয়নি শাহিদুলের পরিবার।
ইউপি চেয়ারম্যান আবদুস সালামের নাতি সোহাগ পারভেজকে চাল বিতরণের দায়িত্বে দেখা যায়। খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির তালিকায় তার নামও রয়েছে। এ বিষয়ে চেয়ারম্যান বলেন, ‘মেম্বারদের দায়িত্ব থাকে কারা কারা কার্ড পাওয়ার যোগ্য তাদের নাম ঠিকানা সংগ্রহের। মেম্বার আমার নাতিকে কার্ড দেওয়ার যোগ্য মনে করেছে তাই হয়তো কার্ড দিয়েছে।’
সম্প্রতি চাল বিতরণ করার সময় সরেজমিনে ইউনিয়নের বিহিগ্রাম এলাকায় দেখা যায়, ডিলারের নিয়োগকৃত লোকেরা চালের পরিবর্তে টাকা বিতরণ করছে। চাল বিতরণের সময় ট্যাগ অফিসার থাকার কথা থাকলেও কাউকে দেখা যায়নি।
অভিযোগের বিষয়ে ডিলার মাজেদ বলেন, ‘যাদের কার্ড আছে তাদের কার্ড কেউ নিয়ে এলে চাল দেই। চালের বদলে কাউকে টাকা দেওয়া হয় না।’
চাঁপাপুর ইউপি চেয়ারম্যান আবদুস সালাম বলেন, ‘মেম্বাররা যাদের নাম দিয়েছে তাদের নামেই কার্ড করে দেওয়া হয়েছে। ডিলার চাল দিচ্ছে নাকি টাকা দিচ্ছে এসব খতিয়ে দেখব। আর নাম একজনের ছবি অন্যজনের এটা হতে পারে না। কার্ড করার সময় সবাইকে আসতে হয়েছিল ইউনিয়ন পরিষদে।’ উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক গোলাম রব্বানী বলেন, ‘আপনার মাধ্যমে বিষয়গুলো জানতে পারলাম। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব।’
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post