প্রবাসীরা জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) করতে পদে পদে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। বিদেশে বসবাসকারী বাংলাদেশিদের জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) তৈরি করা একটি দীর্ঘ ও জটিল প্রক্রিয়া। তাদের পাসপোর্ট ও জন্ম সনদে নাম, বাবা-মায়ের নাম, জন্ম তারিখ, ঠিকানা ইত্যাদিতে বানান ভুল ও অসংগতি থাকায় এনআইডি পেতে তাদের নানা ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে।
এনআইডি না থাকায় বিশেষ করে ব্যাংকের লেনদেন ও জমিজমাসংক্রান্ত বিষয়ে অহরহ ঝামেলায় পড়তে হচ্ছে তাদের। এনআইডি সমস্যায় অনেক প্রবাসী পাসপোর্টও করতে পারছেন না। এতে প্রবাস জীবনে নানা হয়রানিতে পড়তে হচ্ছে তাদের।
নির্বাচন কমিশন বলছে, অনেক প্রবাসী এনআইডির জন্য আবেদন করলেও অনেক ক্ষেত্রে তদন্তে গিয়ে তাদের দেওয়া তথ্যের সত্যতা মিলছে না। ফলে এসব আবেদন বাতিল করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের দেশে এসেই আবেদন করতে হবে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, নীতিমালা অনুযায়ী, অবৈধভাবে বসবাসকারীদের বা বৈধ পাসপোর্ট যাদের নেই তাদের আবেদন আমলে নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আর প্রবাসীদের অনেকেই আবেদন করলেও তদন্তে গিয়ে সত্যতা মিলছে না। ফলে তাদের আবেদন বাতিল করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের দেশে এসেই আবেদন করতে হবে। তবে কেউ যাতে ভোগান্তিতে না পড়েন সেই নির্দেশনাও দেওয়া আছে।
জনশক্তি ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ ও আমেরিকারসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখেরও বেশি বাংলাদেশি নাগরিক অবস্থান করছেন। প্রবাসে বসবাসরত এসব বাংলাদেশির অধিকাংশেরই এনআইডি নেই। এ কারণে তারা দেশ-বিদেশে নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন।
প্রবাসীরা বলছেন, অনেকে দ্রুত প্রবাসে আসার জন্য বয়স পরিবর্তন করে পাসপোর্ট করেছিলেন। সে সময় জন্ম সনদেরও বাধ্যবাধকতা ছিল না। পরে জন্ম বা শিক্ষাসনদের সঙ্গে পাসপোর্টের জন্ম তারিখ ও তথ্যের অমিল থাকার বিষয়টি জটিলতা তৈরি করে। এনআইডি না থাকার ফলে প্রবাস জীবনে যেমন বাংলাদেশিদের পাসপোর্ট-সংক্রান্ত নানা ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে, তেমনি দেশেও।
প্রবাসীরা দেশে ফিরলে ব্যাংকের লেনদেন ও জমিজমাসংক্রান্ত নানা ঝামেলায় পড়তে হয় তাদের। এনআইডি জটিলতায় ব্যাংকে হিসাব খুলতে না পারায় টাকা নিজের নামে জমাতে পারছেন না কেউ কেউ। জমি কিনতে বা মোবাইল ফোনের সিম কিনতে বা ব্যবসার জন্য ট্রেড লাইসেন্স সব ক্ষেত্রেই তাদের এনাআইডি লাগছে।
ই-পাসপোর্ট করতে গেলেও লাগছে এনআইডি। দেশে এবং প্রবাসে বাংলাদেশিদের এমন নানা সমস্যা থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে প্রবাসে এনআইডি কার্যক্রম চালু করা হলেও যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাননি অনেকে।
ইসি সূত্র জানায়, গত বছরের সেপ্টেম্বরে প্রবাসীদের অনলাইনে আবেদনের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট দেশের দূতাবাসের মাধ্যমে এনআইডি পৌঁছে দেওয়ার কার্যক্রম শুরু করে ইসি। এতে ভালো সাড়াও পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু তথ্যে গরমিলের কারণে অনেকের আবেদনই অসমাপ্ত থেকে যাচ্ছে। নাকচ করে দেওয়া হচ্ছে অনেকের আবেদন। ফলে প্রবাসে এনআইডির কার্যক্রম চালু হলেও প্রবাসীদের ভোগান্তির অবসান হচ্ছে না।
নিয়ম অনুযায়ী, প্রবাসীদের এনআইডির আবেদন করতে অনলাইন জন্ম সনদ, বৈধ বাংলাদেশি পাসপোর্টের কপি, এসএসসি/সমমানের শিক্ষা সনদ, আবেদনকারীর পিতা/মাতা/ভাই/বোন অথবা একজন রক্তের সম্পর্কীয় নিকট আত্মীয়ের (বাংলাদেশে বসবাসকারী) এনআইডি নম্বরসহ নানা কাগজপত্র বা ডকুমেন্ট জমা দিতে হয়।
এছাড়া পাসপোর্ট ও জন্ম সনদের তথ্যের মধ্যে মিল থাকারও শর্ত রয়েছে। কিন্তু এসব ডকুমেন্টের একটির সঙ্গে আরেকটির তথ্যের মিল না থাকায় অনেক প্রবাসী আবেদন করতে পারছেন না। আবার আবেদন জমা হলেও ভুলত্রুটির কারণে এনআইডি পাচ্ছেন না তারা।
ইসির কর্মকর্তারা বলছেন, দেশে আর প্রবাসে এনআইডি দেওয়ার প্রক্রিয়া একই। প্রবাসীদের জন্য আলাদা কোনো নিয়ম নেই। প্রবাসে বাংলাদেশি নাগরিকরা আবেদন করার সময় যেসব তথ্য দেবেন, সেগুলো দেশে তদন্ত হবে। তদন্তে সবকিছু ঠিক থাকলে তিনি এনআইডি পাবেন। তবে ভুয়া কাগজ জমা দিলে এনআইডি পাওয়া যাবে না বা রোহিঙ্গা যারা নানাভাবে প্রবাসে গেছেন, তাদেরও ভোটার হওয়ার সুযোগ নেই।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post