যাদের কঠোর পরিশ্রমে অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রায় দেশের অর্থনীতির চাকা সচল থাকে, সেই প্রবাসীরাই দেশে ফিরে এসে খুন হন। সর্বস্ব হারান হয়রানির শিকার হয়ে। তাদের নিজেদের প্রাণের মূল্য যেন এখানে তুচ্ছ।
কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য এসব হত্যাকান্ডের কোনোটিতেই সুবিচার পাননি প্রবাসীদের পরিবার। সবসময়ই পার পেয়ে যায় দায়ীরা। ফলে বিমানবন্দর থেকে শুরু করে নিজ এলাকা- সবখানেই নিরাপত্তাহীন ভাবেন প্রবাসীরা।
১৯৯৬ সালে বিমানবন্দরের অভ্যন্তরে সুরত হত্যাকান্ডের ঘটনার ক্ষত শুকানোর আগেই ২০০১ সালের জুন মাসে মুঘল কোরাইশি (২২) নামের সিলেটের এক যুবক খুন হন। তিনি যুক্তরাজ্য থেকে দেশে বেড়াতে এসেছিলেন। ছুটি কাটিয়ে যুক্তরাজ্যে ফেরার পথে সিলেট থেকে বিমানে ঢাকায় যান তিনি। সেখানে বিমানের তত্ত্বাবধানে তাকেসহ অন্যদের রাখা হয় হোটেলে। কিন্তু পরদিন তিনি আর বিমানবন্দরে পৌঁছাননি। তাকে ছাড়াই ছেড়ে যায় বিমানের ফ্লাইট। দুই দিন পর বিমানবন্দর থেকে ১০ মাইল দূরে পাওয়া যায় মুঘলের লাশ। পরে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তার পাসপোর্ট ছিনিয়ে নিতে তাকে অপহরণ করা হয়েছিল। পরে খুন করা হয়।
যুক্তরাজ্য প্রবাসী কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব ও সাংবাদিক আহাদ চৌধুরী বাবু জানান, বিমানের তত্ত্বাবধানেই মুঘল কোরাইশিকে হোটেলে রাখা হয়েছিল। অথচ তাকে অপহরণ করে খুন করা হয়। ওই ঘটনায় বিমান অফিস ঘেরাও করে আন্দোলন হয়। কিন্তু মুঘলের পরিবার বিচার পায়নি। ২০১১ সালের ২৬ জুন যুক্তরাজ্যের রচড্যাল এলাকার বাসিন্দা বৃদ্ধ তাহির আলী নিজের পৈতৃক বাড়ি সিলেটের বিশ্বনাথে আসেন। কয়েকদিন পর নিজ বাসায় খুন হন তিনি। জমি সংক্রান্ত বিষয়ে তাকে হত্যা করা হয়। এ ঘটনারও বিচার পাননি তাহির আলীর পরিবার।
প্রবাসী সাংবাদিক কে এম তাহির জানান, বাসায় ঢুকে মুখোশধারীরা হত্যা করে তাহির আলীকে। এ ঘটনায় থানায় মামলাও হয়। কিন্তু বিচার মেলেনি।
সুনামগঞ্জের পাটলি গ্রামের রেহানা বেগম নিজের স্বামী ও সন্তানকে নিয়ে ২০১৩ সালের ১৭ জুলাই যুক্তরাজ্য থেকে দেশে বেড়াতে আসেন। ওই বছরের ২ আগস্ট ১২ বছর বয়সী সন্তানের সামনে তাকে ১৮ বার ছুরিকাঘাত করে হত্যা করা হয়। টাকা ও স্বর্ণের লোভে তার আত্মীয়দের চারজন এ ঘটনা ঘটায় বলে জানা যায়।
প্রবাসী সাংবাদিক নবাব উদ্দিন জানান, রেহানা বেগমের খুনের ঘটনা ছিল নৃশংস। ছোট্ট ছেলের সামনে নির্মমভাবে তাকে হত্যা করা হয়। ভয়ংকর সেই ঘটনার দুঃসহ স্মৃতি বয়ে বেড়াচ্ছে তার পরিবার। কিন্তু খুনের বিচারটুকু তারা পায়নি।
২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে শ্রীমঙ্গলের একটি রিহ্যাব সেন্টার থেকে উদ্ধার করা হয় জালাল উদ্দিন নামের এক ব্রিটিশ বাংলাদেশি তরুণের লাশ। চিকিৎসার জন্য সেখানে ভর্তি করেছিলেন তার পরিবার। পেয়েছিলেন শরীরে অসংখ্য আঘাতে জর্জরিত লাশ।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post