নিজের কিশোরী ২ মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগে বাবাকে ১৩৩ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। দুই মেয়েকে ধর্ষণ এবং যৌন হয়রানির পৃথক দুটি মামলায় ৪২ বছর বয়সী ওই ব্যক্তিকে এই সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
চাঞ্চল্যকর এই ঘটনাটি ঘটেছে ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য কেরালার মালাপ্পুরম জেলায়। বুধবার (৭ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিজের ১৩ এবং ১১ বছর বয়সী দুই মেয়েকে ধর্ষণ ও যৌন হয়রানির দুটি মামলায় মঙ্গলবার মালাপ্পুরমের মঞ্জেরি বিশেষ ফাস্ট-ট্র্যাক আদালত ৪২ বছর-বয়সী এক ব্যক্তিকে ১৩৩ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছে। একটি মামলায় তাকে ১২৩ বছর এবং অন্য মামলায় তাকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
উভয় কারাদণ্ড একই সাথে চলবে। এছাড়া ঘোষিত রায়ে বিশেষ বিচারক আশরাফ এ এম অভিযুক্তকে ৮ লাখ ৮০ হাজার রুপি জরিমানাও করেছেন। একইসঙ্গে জরিমানার এই অর্থ আদায় করে ভুক্তভোগীদের কাছে হস্তান্তর করা উচিত বলেও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। এছাড়া আদালত ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য জেলা আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষকেও নির্দেশ দিয়েছেন।
কেরালার ওই ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টের বিচারক আশরাফ এ এম বড় মেয়েকে ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের জন্য মোট চারটি ধারায় অভিযুক্ত বাবাকে দোষী সাব্যস্ত করেছেন। ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৬(৩) ধারায় ১৬ বছরের কম বয়সী মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগে, পকসো আইনের ৫(১) ধারায় বার বার যৌন নির্যাতনের অভিযোগে ও পকসো আইনের ৫(এম) ধারায় ১২ বছরের কম বয়সী শিশুর ওপর যৌন নির্যাতনের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন ওই ব্যক্তি।
প্রতিটি ধারার জন্য ৪০ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে জুভেনাইল জাস্টিস অ্যাক্টের ৭৫ ধারায় শিশুর ওপর অত্যাচারের অভিযোগে আরও তিন বছরের সাজা দিয়েছেন আদালত। সব মিলিয়ে ১২৩ বছরের সাজা দেওয়া হয়েছে বড় মেয়েকে ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের অভিযোগে। পাশাপাশি সাত লাখ রুপি আর্থিক জরিমানাও করা হয়েছে।
অন্যদিকে ১১ বছর বয়সী মেয়েকে যৌন হয়রানির দ্বিতীয় মামলায় আদালত অভিযুক্ত এই ব্যক্তিকে ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং আরও ১ লাখ ৮০ হাজার রুপি জরিমানা করেছেন। ২০২২ সালের ২৬ মার্চ তার বাড়িতে এই অপরাধটি ঘটে। অভিযুক্ত সেসময় তার ছোট মেয়েকে যৌন নির্যাতন করে এবং ভুক্তভোগী তার মাকে ঘটনা জানিয়ে দেয়। এরপরই মর্মান্তিক সেই ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসে।
টাইমস অব ইন্ডিয়া বলছে, এই ঘটনা শোনার পর শিশুটির মা তখন শঙ্কিত হয়ে ওঠেন এবং বড় মেয়ের সাথেও এমনটি ঘটেছে কিনা খতিয়ে দেখেন। তখন বড় মেয়েও জানায়, যখন মা দূরে ছিলেন তখন তার বাবা তাকে একাধিকবার যৌন নির্যাতন করেছে।
বড় মেয়ে তার মাকে আরও জানায়, যদি সে বিষয়টি কাউকে বলে, তাহলে বাবা তার বোনকেও যৌন নিপীড়নের হুমকি দিয়েছে। মা তখন স্থানীয় মহিলা পঞ্চায়েত সদস্যকে বিষয়টি জানান, যার পরে চাইল্ডলাইন এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে এবং ভুক্তভোগী মেয়েদের বক্তব্য রেকর্ড করে। এরই জেরে এডভান্না থানার পুলিশ মামলা দায়ের করে ওই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন পরিদর্শক আব্দুল মজিদ।
স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর এ সোমাসুন্দরন বলেছেন, আদালত প্রসিকিউশনের হেফাজতে বিচারের আবেদন গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, ‘আসামি গত দেড় বছর ধরে বিচার বিভাগীয় হেফাজতে ছিল। এর মধ্যে তিনি বেশ কয়েকবার জামিনের চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু আমরা জানিয়েছি, তাকে জামিন দেওয়া হলে সেটি তার স্ত্রী এবং মেয়েদের জন্য ঝুঁকির কারণ হবে।’
এর পাশাপাশি স্ত্রী ও ভুক্তভোগী মেয়েরাও অভিযুক্তকে জামিন দেওয়ার বিরোধিতা করেছিলেন বলে তিনি জানান। সোমাসুন্দরন বলেন, দোষী ব্যক্তিকে কমপক্ষে ৪৩ বছর কারাগারে থাকতে হবে। তাকে তাভানুর কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post