ঠিক এগারো বছর আগে শোবিজে নাম লিখিয়েছিলেন একটি নতুন মুখ। লাক্স চ্যানেল আই সুপারস্টার ২০০৯ সুন্দরী প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে হাজারো প্রতিযোগীকে পেছনে বিজয়ীর মুকুট ছিনিয়ে নিয়েছিলেন চট্টগ্রামের শান্তশিষ্ট ও লাজুক স্বভাবের একটি মেয়ে, তার নাম মেহ্জাবীন চৌধুরী। মডেলিং তারপর অভিনয় দুই জায়গাতেই হয়ে উঠেন অনন্য। অভিনয় নৈপুণ্যে দর্শক মনে ঠাঁই করে নেওয়া এ অভিনেত্রী বর্তমান সময়ে টেলিভিশন পর্দার এক অপরিহার্য নাম।
চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন মেহ্জাবীন। পুরো নাম মেহ্জাবীন চৌধুরী আর ডাক নাম জেনিফার। জেনিফার নামে তাকে শুধু তার পরিবার ও বন্ধুরাই ডাকেন। এর বাইরে তাকে সবাই মেহ্জাবীন নামেই চেনেন। জন্মের এক বছরের মাথাতেই বাবার চাকুরীর সুবাদে তাকে চলে যেতে হয় সুদূর ওমানে। তাই চট্টগ্রামে জন্মালেও তার বেড়ে উঠা ওমানে।
মাতৃভাষা বাংলা শেখার সুযোগ না পাওয়া সেই মেয়েটি বড় হয়েছে ইংরেজি ভাষা শিখে। সেখানকার ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়াশোনা বেশ ভালোই চলছিলো। বন্ধুপ্রিয় এই মানুষটির সঙ্গে বেশ কয়েকজনের ভালো বন্ধুত্ব গড়ে উঠে। সেখানে পড়াশোনা চলাকালীন সময়েই অর্থাৎ কিশোরী বয়সেই ওমানের শীর্ষস্থানীয় ম্যাগাজিন ‘টাইমস অব ওমান’ এর কাভার স্টোরিতে স্থান পায় ছোট্ট মেহ্জাবীন। ওই সময়ে সেখানকার জুয়েলারির জন্য আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ‘ ডি ড্যামাস’ ব্র্যান্ডের হয়েও কাজ করেছিলেন তিনি।
২০০৮ সালের শেষের দিকে মাত্র ছ’ মাসের জন্য বাংলাদেশে আসেন মেহ্জাবীন। এখানে কোনো বন্ধু না থাকায় অনেকটা ডিপ্রেশনে চলে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়েছিলো তার। এরপর মাথায় চিন্তা এলো যদি এখানে শোবিজে কাজ করা যায় তাহলে হয়তো কিছু বন্ধু পেতে পারেন। সেই চিন্তা থেকেই ২০০৯ সালে ‘লাক্স চ্যানেল আই সুপারস্টার’ সুন্দরী প্রতিযোগিতায় নাম লেখান তিনি।
সেসময় বয়স তুলনামূলক কম হওয়ায় অডিশনের দিন অনেকেই তাকে নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করেছিলেন, প্রতিযোগিতার অযোগ্য ভেবে বিচারকদের সামনে পর্যন্তও যেতে দিচ্ছিলেন না। সেসব মানুষদের ধারণাকে ভুল প্রমাণিত করে হাজারো প্রতিযোগীকে পেছনে ফেলে নিজের মেধা, বুদ্ধিমত্তা এবং অভ্যন্তরীণ সৌন্দর্যস্পৃহা দিয়ে ২০১০ সালে সেই কম বয়সী তরুণী-ই জয় করে নিলেন বিজয়ীর মুকুট। তিনিই হাসলেন চূড়ান্ত হাসি।
২০১০ সালেই প্রথম অভিনয়ে নাম লিখান। নাটকের নাম তুমি থাকো সিন্ধুপাড়ে। ইফতেখার আহমেদ ফাহমি পরিচালিত এ নাটকে মেহ্জাবীনের বিপরীতে ছিলেন মাহফুজ আহমেদ। নাটকটি প্রচারে আসে একই বছরের ২১ ফেব্রুয়ারিতে। সেই থেকে শুরু। এরপর ক্রমান্বয়ে বিজ্ঞাপন, নাটকে নিজেকে মেলে ধরতে থাকেন তিনি।
২০১৬ সাল পর্যন্ত ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকে তার ব্যস্ততা এবং ভালো কাজের পরিমাণ। এরপর ২০১৭ সালে মিজানুর রহমান আরিয়ান পরিচালিত ‘বড় ছেলে’ নাটক দিয়ে জিয়াউল ফারুক অপূর্বর সঙ্গে জুটি বেঁধে রীতিমত বাজিমাত করে দেন মেহ্জাবীন। এরপর থেকে ছোট পর্দায় একচ্ছত্র অভিনয়ে তিনি ছাপিয়ে গেছেন অন্যদের।
অনেক বার সেরা মডেলের পুরস্কার অর্জন করেন মেহ্জাবীন। দেখতে দেখতেই এই অঙ্গনে কেটে গেলো ১১টি বছর। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে অভিনয় করেছেন প্রায় ৪৩০টির মতো নাটকে। এই অঙ্গনে পা মারিয়ে একটু একটু করেই করেই অভিনয় নৈপুণ্যে নিজের একটা শক্ত অবস্থান তৈরি করে নিয়েছেন। হাঁটতে চান আরও অনেকটা পথ।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post