যে রোগটি মানুষকে সবচেয়ে বেশি আতঙ্কে রাখে সেটি হলো ক্যানসার। এটি এমন একটি রোগ যে একজন রোগী ক্রমেই মৃত্যুর দিকে দ্রুত এগিয়ে যেতে থাকে। এ কারণে রোগটিকে মরণব্যাধি বলেও আখ্যায়িত করা হয়। রোগটি একবার শরীরে বাসা বাঁধলে সত্যি কি আর বাঁচার উপায় থাকে না রোগীর?
চিকিৎসাশাস্ত্র আর গবেষণার তথ্যানুযায়ী বিশেষজ্ঞরা এ বিষয়ে কি জানিয়েছেন তা জানার আগে জানা প্রয়োজন ক্যানসার রোগটি আসলে কী?
চিকিৎসাশাস্ত্রের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, ক্যানসার মূলত প্রাণীকোষ বিভাজন সংক্রান্ত একটি রোগ। এটিকে আরও সহজ করে বলা যায়। মানবদেহ অসংখ্য কোষ দিয়ে তৈরি। শরীরের এ কোষ আমাদের বেঁচে থাকার বয়স পর্যন্ত জীবিত থাকে না। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত প্রতিনিয়ত আমাদের শরীরের কোষগুলো একটি নির্দিষ্ট সময় পরপর মারা যায়। আবার নতুন কোষ তৈরি হয়। একটি শৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে এ কোষ চক্র অসংখ্যবার আমাদের শরীরে হয়।
কিন্তু শৃঙ্খল ভেঙে অনিয়ন্ত্রিতভাবে এ কোষ শরীরে বাড়তে শুরু করলেই আমাদের শরীরের মাংসপেশিতে দানা বা চাকা ভাব দেখা দেয়, যা প্রথমে টিউমার বলা হয়। এক জায়গায় অবস্থানকারী ও অন্য কোষে ছড়িয়ে পড়ে না এমন নিরীহ কোষের মাধ্যমে টিউমার তৈরি হলে এ অবস্থাকে ক্যানসার বলা হচ্ছে না। কিন্তু যে কোষগুলোর মাধ্যমে শরীরে টিউমার তৈরি হয়েছে সেই কোষ যদি অন্য কোষে বিভাজিত হয়ে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে তখন সে অবস্থাকে বলা হচ্ছে ক্যানসার।
এ রোগ ছোঁয়াচে ও সংক্রামক নয়। তবুও সারা বিশ্বে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মৃত্যুর কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে ক্যানসার। সমীক্ষা বলছে, ফুসফুস, স্তন, কোলন, রেকটাম আর প্রোস্টেট ক্যানসারেই আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বিশ্বে বেশি।
সমীক্ষায় আরও জানা গেছে, তামাকের সঙ্গে শরীরে ক্যানসার হওয়ার একটি যোগসূত্র রয়েছে। এদিকে গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বে প্রতিবছর ২ কোটি মানুষ ক্যানসারে আক্রান্ত হয় আর এর অর্ধেক মানে ১ কোটি মৃত্যুবরণ করে।
এ হিসাবে সহজেই আন্দাজ করা যায়, ক্যানসার মানেই রোগীর মৃত্যু নয়। এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যানসার বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. মামুন অর রশিদ বলেন, ক্যানসার মূলত কোষের জিনের ত্রুটিজনিত কারণে হয়।
জিনের এমন পরিবর্তনকে মিউটেশন বলা হয়। এ পরিবর্তনগুলোর জন্য যেসব উপাদান দায়ী তাদের বলা হয় কার্সিনোজেন। রোগীর শরীরে এ কার্সিনোজেন নিয়ন্ত্রণে আনতে পারলেই ক্যানসার ভালো হওয়া সুযোগ থাকে।
ডা. মো. মামুন আরও বলেন, রোগীর শরীরে কার্সিনোজেন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব কি না, তা জানার জন্য অনেক স্বাস্থ্যপরীক্ষা করেন চিকিৎসকরা। এরপর সিদ্ধান্তে পৌঁছান রোগীর সুস্থতা ও মৃত্যুর বিষয়ে। তাই ক্যানসার মানেই মৃত্যু এমন ধারণা সঠিক নয়।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post