বিমানের নিজস্ব হ্যাঙ্গারে এক দল প্রকৌশলী ও মেকানিকের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় মাত্র কয়েক ঘন্টার মধ্যে ফেটে যাওয়া উইন্ডশিল্ড প্রতিস্থাপন করে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বোয়িং ৭৮৭-৯ ড্রিমলাইনার অচিন পাখি মঙ্গলবার দুপুরে দাম্মামের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়।
সিঙ্গাপুর থেকে আনা বোয়িং সার্টিফাইড উইন্ডশিল্ড লাগানো হয়েছে অত্যন্ত সুচারু ও দক্ষতার সঙ্গে। এতে বিমানের নিজস্ব জনবলের সক্ষমতা আবারও ফুটে ওঠে। এত স্বল্প সময়ে ড্রিমলাইনার অচিন পাখির ককপিটের সামনের কাচ
প্রতিস্থাপন করা সম্ভব হবে এটা ছিল অবিশ্বাস্য।
প্রকৌশলীদের কর্মদক্ষতায় বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও শফিউল আজিম ও পরিচালক প্রকৌশল এয়ার কমোডর মোয়াজ্জেম হোসেনও সন্তুষ্টি প্রকাশ করে গণমাধ্যমকে বলেন, ‘অত্যন্ত দ্রুততম সময়ে অচিন পাখির ফেটে যাওয়া উইন্ডশিল্ড প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। সারারাত বিমানের নিজস্ব হ্যাঙ্গারের একদল দক্ষ কর্মীবাহিনীর প্রচেষ্টায় এটা সম্ভব হয়েছে।
বিমান সূত্র জানিয়েছে, গত শনিবার অচিন পাখি যাত্রী নিয়ে ঢাকা থেকে দাম্মাম রওয়ানা হয়ে ভারতের আকাশসীমায় পৌছার পর পইলট ইন কমান্ড তানিয়া রেজার চোখে পড়ে উইন্ডশিল্ড ফাটা। তিনি তাৎক্ষণিক ঢাকায় যোগাযোগের পর বেশ সাহসিকতা ও দ্রুততার স্েঙ্গ ফিরে এসে নিরাপদে অবতরণ করেন হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। তার পর এ সংবাদ প্রকাশ হওয়ায় বেশ তোলপাড় চলে।
এভিয়েশানসহ বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন দেখা দেয় – বোয়িংয়ের ম্যানুফাকচারিংয়ের মান নিয়ে। এ নিয়ে বিমানও যথেষ্ট বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে। বিশেষ করে বর্তমানে বিমানের কাছে এয়ার বাস ও বোয়িং যখন প্লেন বিক্রির জন্য প্রতিযোগিতায় নেমেছে, ঠিক এ সময়ে এ ঘটনা যথেষ্ট বিব্রতকর হয়ে পড়ে বিমানের কাছে।
এ অবস্থায় বিমান রবিবারই বোয়িংয়ের কাছে চিঠি লিখে প্রকৃত কারণ জানতে চায়। পাশাপাশি দ্রুততম সময়ে ক্ষতিগ্রস্ত অচিন পাখির কাচ মেরামত বা রিপ্লেস করার ওপর মনোযোগ দেওয়া হয়। এজন্য বোয়িংয়ের স্পেয়ার পার্টসের নিকটবর্তী সরবরাহকারী দেশ সিঙ্গাপুরে যোগাযোগ করে বিমান।
ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েই রবিবারই সিঙ্গাপুর যোগাযোগ করে উইন্ডশিল্ড সংগ্রহের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। সোমবার সন্ধ্যায় আনা হয় নতুন উইন্ডশিল্ড। রাতেই সেটা পুনঃস্থাপনের জন্য বিমানের নিজস্ব হ্য্ঙ্গাারে শুরু হয় কাজ।
সিঙ্গাপুর থেকে ৯৫ হাজার ডলারে কেনা উইন্ডশিল্ড আনার পর হ্যাঙ্গারে ছুটে যান ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিউল আজিম ও পরিচালক এয়ার কমোডর মোয়াজ্জেম হোসেন।
তাদের উপস্থিতিতেই প্রধান প্রকৌশলী, মেকানিক ও অন্যান্য দক্ষ কর্মীরা অচিন পাখির ককপিটের কাচটি প্রতিস্থাপন করায় মনোযোগী হন। সারারাত সেখানে কাজ চলে। সকালেই অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে রিপ্লেস করা হয় ফাটা কাচ সেটা কয়েক দফা টলারেন্স টেস্টিংয়ের পর দুপুরের দিকে উড্ডয়যোগ্য করা সম্ভব হয়। এর পর যাত্রী নিয়ে দাম্মামের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করে।
বিমান প্রকৌশল বিভাগ জানিয়েছে, অচিন পাখির উইনশিল্ড ফেটে যাবার প্রকৃত কারণ এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়। বোয়িং কোম্পানির নির্মিত এই কাচটির মেয়াদও উত্তীর্ণ হয়ে গিয়েছিল। এর ওয়ারেন্টি ছিল চার বছরের। পাঁচ বছরের মাথায় এটা ফেটে গেছে। তদন্ত কমিটির রিপোর্টে এ রহস্য উদঘাটন হবে বলে আশাবাদী পরিচালক এয়ার কমোডর মোয়াজ্জেম হোসেনের।
তিনি বলেন, আমরা খুব কম সময়ের মধ্যেই নতুন উইনশিল্ড সিঙ্গাপুর থেকে আনার পর পুনঃস্থাপন করতে সক্ষম হয়েছি। পাশাপাশি কেন কোন পরিস্থিতিতে এমনটি ঘটেছে সেটাই এখন খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বোয়িংও এ নিয়ে কাজ করছে।
এ সম্পর্কে বিমানের একজন পাইলট বলেন, ড্রিমলাইনারের ককপিটের উইন্ডশিল্ড ফেটে যাওয়ায় যতটা আর্থিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তার চেয়ে বেশি বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে বোয়িংয়ের ম্যানুফাকচারির কোয়ালিটি নিয়ে।
এভাবে কাচ ফেটে যাবার কারণ রহস্য উদঘাটন করার পর নতুন করে আবার কৌতূহল দেখা দেবে। বিমানকেও এ জাতীয় ঘটনা থেকে ভবিষ্যতে আরও সতর্কও হতে হবে। নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের পাশাপাশি বোয়িং কোম্পানির সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগে থাকতে হবে। এখানে নির্মাতা কোম্পানির দায় কতটুকু সেটাও আমলে নিতে হবে।
উল্লেখ্য, ২৮৫ যাত্রী নিয়ে শনিবার বিকেলে নিয়মিত ফ্লাইটে সৌদি আরবের দাম্মামে যাচ্ছিল। ঘণ্টাখানেক চলে সেটি দেশের আকাশসীমা পেরিয়ে ভারতের আকাশসীমায় প্রবেশ করে।
এরপরই ককপিটের কাচে ফাটল চোখে পড়ে পাইলটের।পরে ঢাকায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নিরাপদে ফিরিয়ে আনেন ক্যাপ্টেন ছিলেন তানিয়া রেজা। ড্রিমলাইনার অচিন পাখি ঢাকা থেকে ওড়ার আগে নিয়ম অনুযায়ী চেক করার সময় সবকিছু ঠিকঠাক ছিল।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post