এক কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন আনোয়ার হোসেন। বাবা-মা আর তিন ভাইয়ের সংসারে তিনি সবার বড়। সংসারের হাল ধরতে ওমানে পাড়ি জমান তিনি। কাজের ফাঁকে ইউটিউবে কুল চাষ দেখে আগ্রহ হয় তার। তাই ৩ একর জায়গায় চাচা কবির মিয়াকে (৪৫) নিয়ে শুরু করেন কুল চাষ। অবশেষে বাজিমাত, কুলের বাম্পার ফলনে হাসি ফুটেছে আনোয়ারের মুখে।
আনোয়ার হোসেন নোয়াখালী সদর উপজেলার দাদপুর ইউনিয়নের কাশিপুর গ্রামের আক্কাছ মিয়া বাড়ির নুর আলমের বড় ছেলে। তিনি ১২ বছর থেকে ওমানে আছেন।
আনোয়ারের কুল বাগান ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি গাছে ভারত সুন্দরী কুল ও বল সুন্দরী কুল থোকায় থোকায় ঝুলছে। কুলের ভারে মাটিতে নুয়ে পড়েছে কিছু কিছু গাছের ডাল। রংটা ঠিক যেন আপেলের মতো সবুজ ও হালকা হলুদের ওপর লাল। কুলের পাশাপাশি বাগানে রয়েছে আখ।
জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে প্রবাসে থাকলেও আনোয়ারের কৃষি কাজের প্রতি একটু বেশিই আকর্ষণ ছিল। ২০২২ সালের জুন মাসে সুবর্ণচর উপজেলার চরওয়াপদা ইউনিয়নে প্রায় তিন একর পতিত জমিতে ভারত সুন্দরী কুল ও বল সুন্দরী কুলের প্রায় ৮০০ চারা রোপণ করেন তিনি। প্রথম বছরেই খরচ বাদ দিয়ে লাভের মুখ দেখেন। এ বছর বাগানেই দুই লাখ টাকার কুল বিক্রি করেছেন আনোয়ার। ব্যবসায়ীরা কুল বাগানে এসে ১০০ টাকা কেজিতে নিয়ে যান কুল। এ বছর আট থেকে ১০ লাখ টাকা কুল বিক্রির সম্ভাবনা আছে।
ওমান প্রবাসী আনোয়ার হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, আমি ওমান থাকি ১২ বছর ধরে। ফল তোলার সময় দেশে আসি। আবার চলে যাই। আমার কুল চাষের আগ্রহ তৈরি হয় ইউটিউব ও ফেসবুক দেখে। এ ছাড়া ওমানে যেখানে থাকি সেখানে উত্তরবঙ্গের অনেক মানুষ আছে। তাদের পরিবারের অনেকেই কুল চাষ করে। আমি তাদের থেকেও ধারণা পেয়েছি। দেশে এসে উত্তরবঙ্গে গিয়ে কুল চাষের পদ্ধতি দেখতে যাই। তারপর ২৮০ শতাংশ পতিত জমিতে কুল চাষ শুরু করি। এ বছর আমার আট থেকে ১০ লাখ টাকা বিক্রির আশা আছে।
আনোয়ার হোসেন আরও বলেন, আমাদের নোয়াখালীতে ঘরে ঘরে প্রবাসী। আমরা দেশে কিছু না করে সবাই বাইরে চলে যাই। উত্তরবঙ্গের দিকে এক বাড়িতে হয়ত একজন প্রবাসী। তারা দেশে কিছু করার স্বপ্ন দেখে। আমিও দেশে কিছু করতে চাই এই জন্য প্রবাসী হয়েও উদ্যোগ নিয়েছি। সারা জীবন প্রবাস করা যাবে না।
আর প্রবাসের টাকা দেশে পাওয়া গেলে সেটাই ভালো। আলহামদুলিল্লাহ আমি কৃষি অফিসের সহযোগিতা নিয়ে ভালো আছি। আমার কুলগুলো অত্যন্ত সুস্বাদু। এগুলো বেপারীরা চট্টগ্রাম, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্নস্থানে বিক্রি করে। এ ছাড়া আমার এই সফলতা দেখে কুল বাগান করতে অনেকেই উৎসাহিত হয়ে পরামর্শ নিতে আসেন।
আনোয়ারের চাচা কবির মিয়া গণমাধ্যমকে বলেন, আমার ভাতিজা বিদেশ থেকে আমাকে পরামর্শ দেয়। আমি দেশে সেভাবে পরিচালনা করি। বাগানের প্রতিটি গাছের ফলন অনেক ভালো হয়েছে। নোয়াখালীর মধ্যে এমন সুস্বাদু কুল আর কোথাও দেখিনি। বাগানের কুল বাগানেই বিক্রি হয়ে যায়।
সুবর্ণচরের বাসিন্দা মো. সেরাজ গণমাধ্যমকে বলেন, আমি আনোয়ার ভাইয়ের ভাগানের ফল খেয়েছি। অনেক স্বাদ ফলের। উনাকে দেখে আমার আগ্রহ বেড়েছে। বিভিন্ন পরামর্শের জন্য এসেছি। আমরা তার মতো উদ্যোক্তা হতে চাই।
আরেক বাসিন্দা বৃদ্ধা রেজাউল করিম গণমাধ্যমকে বলেন, আনোয়ার মিয়া যে বাগান করেছে তাতে আমরা খুব খুশী। এমন কুল সুবর্ণচরে আর কখনো দেখিনি। উনি লাভবান হলে আমাদেরও আনন্দ। তিনি মাঝেমধ্যে আমাদের কুল দেন।
সুবর্ণচর উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. ইমাম হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, আনোয়ার হোসেন ও তার চাচা কবির মিয়া অনেক পরিশ্রম করেছেন। তাই তারা সফল হয়েছেন। আমি যে ফলটা খেলাম এর থেকে স্বাদের ফল বাজারে নাই।
সুবর্ণচর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হারুন অর রশিদ গণমাধ্যমকে বলেন, সুবর্ণচর উপজেলায় প্রবাসী আনোয়ারের বাগানটি অন্যতম। তিনি কুল সংগ্রহের সময় দেশে আসেন। আনোয়ার ও তার চাচা সফলতার মুখ দেখেছেন। আমার মনে হয় আনোয়ার হোসেন বিদেশের থেকেও বেশি টাকা এই বাগানের মাধ্যমে আয় করবেন।
বিদেশের টাকা যদি দেশে অর্জন করতে পারে তাহলে আমরা কৃষি অফিস সব থেকে বেশি খুশি হই। কারণ, এই টাকা দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করে এবং কৃষি উন্নয়নে সহায়তা করে। আমরা বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে আসছি এবং সব সময় তাদের পাশে আছি।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post