দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গোপন নথি চুরি করে পালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ তুলেছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। এর মধ্যে সহকারী ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মো. আনোয়ার হোসেন পালিয়ে গেছেন কানাডায়।
আর প্রতিষ্ঠানটির বাণিজ্যিক তত্ত্বাবধায়ক সোহান আহমেদ বেসরকারি বিমান সংস্থা ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সে যোগ দিয়েছেন। এই দুই কর্মকর্তাই বিমানের চাকরি থেকে ইস্তফা চেয়ে চিঠি দিয়েছিলেন। কিন্তু বিমানের দাবি, এই দুই কর্মকর্তার কাছে সংস্থাটির গোপন নথি রয়েছে। তারা এসব গোপন নথি চুরি করে নিরুদ্দেশ হয়েছেন।
যা প্রকাশ হলে বিপদ হতে পারে। তাদের পাওয়া না গেলে তথ্য পাচার করার সমূহ আশঙ্কা রয়েছে। এ জন্য তাদের ইস্তফাপত্র গ্রহণ করা হয়নি। বাণিজ্যিক তত্ত্বাবধায়ক সোহান আহমেদের ইউএস-বাংলায় চাকরি নেওয়া আইনবিরোধী বলে দাবি করেছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স।
সংস্থাটি বলছে, কোনো কর্মচারী একটি এয়ারলাইন্সের চাকরি থেকে ইস্তফা দিলেও আইনত অনাপত্তি সনদ ছাড়া কোনো এয়ারলাইন্স সেই কর্মচারীকে চাকরি দিতে পারবে না।
এ বিষয়টি উল্লেখ করে বৃহস্পতিবার বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও এমডি শফিউল আজিম ইউএস-বাংলার ব্যবস্থাপনা পরিচালককে চিঠি দিয়ে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন।
চিঠিতে বলা হয়েছে, বিমানের বাণিজ্যিক তত্ত্বাবধায়ক সোহান আহমেদ গত ৭ ডিসেম্বর থেকে কর্তৃপক্ষের বিনা অনুমতিতে কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে গত ১৫ জানুয়ারি বিমানবন্দর থানায় সাধারণ ডায়েরি (নং-৬৭৭) করা হয়েছে। তার কাছে বিমানের গোপনীয় চুক্তি ও আরআই পলিসি এবং স্পর্শকাতর সফটওয়্যার (ঞবপযহরপধষ) রয়েছে।
২০১৬ সালে ইউএস বাংলা বিমানের বিরুদ্ধে রিট পিটিশন দায়ের করে। ২০১৮ সালে এই মামলার রায় হয়। যেখানে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের কার্যবিবরণী উল্লেখ আছে যে, এয়ারলাইন্সে কর্মরত পাইলট এবং ইঞ্জিনিয়ারগণ অন্য এয়ারলাইন্সে চাকরি গ্রহণের ও নিয়োগকারী এয়ারলাইন্স থেকে অনাপত্তি সনদ (ঘ.ঙ.ঈ) গ্রহণ করবেন। রায় অনুযায়ী অনাপত্তি সনদ (ঘ.ঙ.ঈ) বাধ্যতামূলক।
কিন্তু বিমানের অনাপত্তি সনদ (ঘ.ঙ.ঈ) ছাড়াই বিমানের টেকনিক্যাল জ্ঞানসম্পন্ন স্পর্শকাতর তথ্যসমৃদ্ধ কর্মচারীকে আপনার প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ সম্পূর্ণ আইনবিরোধী, এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয় চিঠিতে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইউএস-বাংলার মহাপরিচালক (জনসংযোগ) মো. কামরুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, সোহান আহমেদ আমাদের এখানে জয়েন করেছেন কিনা তা এখনই বলতে পারছি না। এইচআর থেকে জেনে বলতে হবে। তবে অনাপত্তি ছাড়া কোনো এয়ারলাইন্সের কোনো কর্মচারীকে চাকরি দেওয়া উচিত নয়, এনওসি নিয়েই রিক্রুটমেন্ট হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি বলেন, রায়ে পাইলট এবং ইঞ্জিনিয়ারদের কথা বলা হয়েছে, অন্য কর্মচারীদের বিষয়ে স্পেসিফিক কিছু বলা হয়নি। ইউএস-বাংলা থেকেও অনেকে বিমানে যাচ্ছে, অন্য এয়ারলাইন্সেও যাচ্ছে। তবে বিমানের চাকরি ছেড়ে অন্য এয়ারলাইন্সে যাওয়ার ঘটনা খুবই কম।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, সহকারী ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মো. আনোয়ার হোসেন কানাডা পালিয়ে গেছেন। গত ২৪ অক্টোবর বেলা ৩টা পর্যন্ত দিব্যি অফিস করেন তিনি। কিন্তু বেলা পৌনে ৪টার দিকে কাউকে কিছু না বলে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অপেক্ষমাণ বিজি-৩০৫ ফ্লাইটযোগে পাড়ি জমান কানাডার টরন্টোতে। কোনো কর্মচারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে বিমানের ক্লিয়ারেন্স ছাড়া সেই কর্মচারী তাদের বিমানে চড়ে বিদেশে যায় কীভাবে।
আর দেশে থাকা সোহান আহমেদ গত অক্টোবরে বিমান কর্তৃপক্ষের কাছে ইস্তফা চেয়ে চিঠি দিয়েছেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষ তার সঙ্গে সেটেলমেন্ট না করায় ৭ ডিসেম্বর আবারও ইস্তফাপত্র দিয়ে অফিস ত্যাগ করেন। ত্যাগ করার আগে অ্যাডমিনে আইডি কার্ডও জমা দেন। এই দুই কর্মচারী অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারেন, থাকলে বিমানের ম্যানেজমেন্টের তা জানার কথা । তারা আগে কেন ব্যবস্থা নেয়নি।
প্রশ্ন উঠেছে, দুই কর্মকর্তা চাকরি থেকে নিরুদ্দেশ হয়েছেন দীর্ঘদিন হলো। তারা চাকরি থেকে ইস্তফাও দিয়েছেন। এতদিন পর কেন বিমান তাদের খোঁজ করছে। এতে বিমান প্রশাসনের দায়িত্বহীনতাই প্রকাশ পায়।
বিমান সূত্রে জানা গেছে, আনোয়ার হোসেনের গ্রামের বাড়ি চাঁদপুরের শাহরাস্তি থানার হরিয়ায়। সপরিবারে তিনি রাজধানীর মিরপুর মডেল থানার ৭ নম্বর সেকশনে বসবাস করতেন। তিনি কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই দেশ ছেড়েছেন। আর সোহান আহমেদ সপরিবারে রাজধানীর দক্ষিণখান থানার আশকোনা এলাকায় বসবাস করতেন।
গুরুত্বপূর্ণ নথি চুরি করে দুই কর্মকর্তা নিরুদ্দেশের বিষয়ে কথা বলার জন্য বিমানে একাধিক সিনিয়র নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে কেউই মন্তব্য করতে রাজি হননি। তারা বলছেন, কানাডায় পালিয়ে যাওয়া মো. আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
তবে বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শফিউল আজিম বলেছেন, অভিযুক্ত দুই কর্মকর্তা নিজেদের গা বাঁচাতে তারা নানা অসদুপায় অবলম্বন করেছেন বলে তথ্য রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। যে কর্মকর্তা কানাডায় পালিয়েছেন, তার পাসপোর্ট বাতিলের জন্য চিঠি দেওয়া হবে। অভিযুক্ত অন্যজন নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে রিজাইন দেওয়ায় তা গ্রহণ করা হয়নি। তারা যদি যথাসময়ে হাজির না হন এবং গোপন নথিপত্র কর্তৃপক্ষের কাছে বুঝিয়ে না দেন, তা হলে তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের করা হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিমানবন্দর থানার এসআই রুবেল শেখ বৃহস্পতিবার রাতে গণমাধ্যমকে বলেন, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ একটি জিডি করেছে। যে কোনো জিডির তদন্ত করার জন্য আদালতের অনুমতি লাগে। এই জিডির তদন্তের অনুমতি চেয়ে আদালতে আবেদন করা হয়েছে। আদালত আগামী বুধবার জিডির বাদীকে তলব করেছেন। সেদিন আদালত সিদ্ধান্ত দেবেন। সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post