আসমানি কিতাব অর্থ আল্লাহর দেয়া গ্রন্থ। প্রধান আসমানি গ্রন্থগুলো হলো কোরআন, তাওরাত, যবুর, ইঞ্জিল। কিতাব শব্দের সহজ অর্থ পুস্তক বা গ্রন্থ। সহজ কথায়, যে মহান গ্রন্থে আল্লাহর বাণী লিপিবদ্ধ আছে তাকে আসমানি কিতাব বলে। অর্থাৎ নবী-রসুলগণ যাতে সঠিকভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করতে পারেন, সেজন্য তাদের কাছে ওহি বা আল্লাহর বাণী আসত। এ বাণীসমূহের সমষ্টি আসমানি কিতাব নামে অভিহিত।
আসমানি কিতাবসমূহের প্রতি ঈমান আনয়ন করা ঈমানের অন্যতম রুকন। আসমানি কিতাবগুলোর প্রতি ঈমান আনয়নের অর্থ হলো দৃঢ় বিশ্বাস করা যে এগুলো সত্য ও সঠিক। আরো বিশ্বাস করা যে, এগুলো আল্লাহ তাআলার কালাম। তাতে রয়েছে হিদায়াত, নুর এবং যাদের প্রতি এগুলো নাজিল করা হয়েছে, তাদের জন্য এগুলোই যথেষ্ট।
আসমানি কিতাবগুলো থেকে আল্লাহ তাআলা যেগুলোর নাম উল্লেখ করেছেন, সেগুলোর প্রতি আমরা বিশ্বাস স্থাপন করি। যেমন কোরআন, তাওরাত, ইঞ্জিল ও যবুর। আর যেগুলোর নাম আল্লাহ তাআলা কোরআনুল কারিমে উল্লেখ করেননি, সেগুলোর প্রতিও বিশ্বাস করি।
কেননা আল্লাহ তাআলার আরো অনেক কিতাব রয়েছে, যা তিনি ছাড়া অন্য কেউ জানে না। বর্তমান পৃথিবীতে কোরআনই আল্লাহর দেয়া কিতাব। আল্লাহর মনোনীত ধর্ম শুধু ইসলাম। ইসলাম এসে পূর্বের সব ধর্ম রহিত করে দিয়েছে। তাই পৃথিবীতে আল্লাহর হুকুম মেনে ইসলামকেই ধর্ম হিসেবে মানতে হবে। অন্য ধর্ম পালন করলে সে পরকালে মুক্তি পাবে না।
আল্লাহ কোরআনে বলেন, আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দীন পূর্ণাঙ্গ করলাম ও তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দীন মনোনীত করলাম’ (সুরা মায়িদা ৩) অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, নিশ্চয় ইসলামই আল্লাহর নিকট একমাত্র দীন।
আর যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছিল তারা কেবল পরস্পর বিদ্বেষবশত তাদের নিকট জ্ঞান আসার মতানৈক্য ঘটিয়েছিল। আর কেউ আল্লাহর আয়াতসমূহে কুফরি করে, তবে নিশ্চয় আল্লাহ দ্রুত হিসাব গ্রহণকারী। (সুরা আলে ইমরান ১৯)
মানুষের বিবেক-বুদ্ধি যেহেতু সীমিত এবং সেটা দ্বারা ক্ষতিকর ও কল্যাণকর বস্তুর মধ্যে পার্থক্য মোটামুটিভাবে বুঝতে সক্ষম হলেও তারা কল্যাণকর ও ক্ষতিকর বিষয়গুলো বিস্তারিতভাবে জানতে সক্ষম নয়। তাই তাদের জন্য আসমান থেকে কিতাব পাঠানোর বিশেষ প্রয়োজন ছিল। এ জন্য আল্লাহ তাআলা তাদের প্রতি দয়াশীল হয়ে নবী-রসুলদের মাধ্যমে অনেক কিতাব পাঠিয়েছেন।
আল্লাহ তাআলা বলেছেন, এরপর যখন আমার পক্ষ থেকে হিদায়াত তোমাদের কাছে পৌঁছাবে তখন যারা আমার হিদায়াতের অনুসরণ করবে তাদের জন্য থাকবে না কোনো ভয় এবং তারা চিন্তিতও হবে না। (সুরা আল বাকারা ৩৮)
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন, হে বনি আদম! তোমাদের কাছে যখন তোমাদের মধ্য থেকে রসুলগণ এসে তোমাদেরকে আমার আয়াতসমূহ বিবৃত করে, তখন যারা সতর্ক হবে এবং নিজেকে সংশোধন করবে, তাদের কোনো ভয় থাকবেনা এবং চিন্তিতও হবে না। (সুরা আরাফ ৩৫)
আসমানি কিতাবগুলোর ব্যাপারে লোকেরা তিনভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। এক শ্রেণীর লোক সমস্ত আসমানি কিতাবকে অস্বীকার করেছে। নবী-রসুলদের দুশমন কাফের, মুশরিক ও দার্শনিকরা এ শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত।
আরেক শ্রেণীর লোক সমস্ত আসমানি কিতাবেই বিশ্বাস করে। এরা হলো ঐসব মুমিন, যারা সমস্ত নবী-রসুল এবং তাদের উপর অবতীর্ণ সমস্ত কিতাবের উপর ঈমান আনয়ন করে। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন, রসুল তার রবের পক্ষ হতে যে হিদায়াত নাজিল করা হয়েছে, তার প্রতি ঈমান এনেছেন।
মুমিনগণও ঈমান এনেছেন। তারা সকলেই আল্লাহর প্রতি, তার ফেরেশতাদের প্রতি, তার কিতাবসমূহের প্রতি এবং তার রসূলদের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছে। তারা বলে, আমরা রসূলদের একজনকে অন্যজন থেকে পৃথক করিনা। আর তারা বলে, আমরা নির্দেশ শুনেছি এবং অনুগত হয়েছি। হে আমাদের প্রভু! আমরা গুনাহ মাফের জন্য তোমার কাছে প্রার্থনা করছি। আমরা তোমার দিকেই ফিরে যাবো। (সুরা বাকারা ২৮৫)
আরেক শ্রেণীর লোক কিছু আসমানি কিতাবের প্রতি ঈমান আনয়ন করেছে, বাকিগুলোর প্রতি কুফুরি করেছে। এরা হলো ইয়াহুদি ও খ্রিষ্টান এবং তাদের অনুসারীগণ। তাদেরকে যখন বলা হয়, আল্লাহ যা কিছু নাজিল করেছেন তার উপর ঈমান আনো, তখন তারা বলে, আমরা কেবল আমাদের উপর যা কিছু নাযিল হয়েছে তার উপর ঈমান আনি। এর বাইরে যা কিছু এসেছে তার প্রতি তারা কুফুরি করছে। অথচ তা সত্য এবং তাদের কাছে পূর্ব থেকে যে কিতাব রয়েছে তার সত্যায়নকারী। (সুরা বাকারা ৯১)
আল্লাহ তাআলা আরো বলেন, তোমরা কি কিতাবের এক অংশের উপর ঈমান আনছো এবং অন্য অংশের সাথে কুফুরি করছো? অতএব তোমাদের যারাই এমনটি করে তাদের প্রতিফল দুনিয়ার জীবনে লাঞ্ছনা ভোগ ছাড়া আর কী হতে পারে? কিয়ামতের দিন তারা কঠিনতম শাস্তিতে নিক্ষিপ্ত হবে। তোমাদের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে আল্লাহ বেখবর নন। (সুরা বাকারা ৮৫)
আল্লাহ তাআলার হিকমতের দাবি অনুযায়ী, পূর্বকালের কিতাবগুলো ছিল নির্দিষ্ট সময়-সীমার জন্য। সেগুলোর সংরক্ষণ করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল মানুষের মধ্য থেকে সেটার বাহকদেরকে। আল্লাহ তাআলা বলেন, আমি তাওরাত নাজিল করেছি। তাতে ছিল হিদায়াত ও আলো। আল্লাহর অনুগত নবীগণ সে অনুযায়ী ইয়াহুদিদের যাবতীয় বিষয়ের ফায়সালা করতো। আর এভাবে রব্বানি ও আহবারগণও। কারণ তাদেরকে আল্লাহর কিতাব সংরক্ষণের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল এবং তারা ছিল এর উপর সাক্ষী। (সুরা আল মায়িদা ৪৪)
আর কুরআনুল কারীমের ব্যাপারে কথা হলো আল্লাহ তাআলা সেটাকে কিয়ামত পর্যন্ত সর্বযুগের সর্বস্থানের সমগ্র জাতির জন্য নাজিল করেছেন। তিনি নিজেই এটিকে সংরক্ষণের দায়িত্ব নিয়েছেন। কেননা পৃথিবীতে মানবজাতির অস্তিত্ব শেষ না হওয়া পর্যন্তকুরআনের দায়দায়িত্ব শেষ হবেনা। আল্লাহ তাআলা বলেন, নিশ্চয়ই আমি এ উপদেশ নাজিল করেছি এবং আমি নিজেই এর সংরক্ষক। (সুরা হিজর ৯)
আখেরি জামানায় এক রাতেই কুরআন উঠিয়ে নেয়া হবে। তখন মানুষের অন্তর ও মুসহাফ থেকে কুরআন উঠে যাবে। তাদের অন্তরে ও মুসহাফে কুরআনের কোন অংশই অবশিষ্ট থাকবেনা। পৃথিবী তখন পাপাচারে ভরে যাবে। এমনকি আল্লাহ আল্লাহ বলার মত কোন লোক থাকবে না। তখন সেই নিকৃষ্ট লোকদের উপর কিয়ামত প্রতিষ্ঠিত হবে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post