গাজা যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ৯৬ ভাগ সৌদি নাগরিক মনে করে যে আরব দেশগুলোর উচিত হবে ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করা। এছাড়া তাদের মধ্যে গাজাভিত্তিক ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের জনপ্রিয়তাও বেড়ে গেছে। জরিপে দেখা গেছে, ৮৭ ভাগ সৌদি বিশ্বাস করে যে ‘ইসরাইল এত বেশি দুর্বল এবং অভ্যন্তরীণভাবে বিভক্ত যে এটি একদিন পরাজিত হবে।’
ওয়াশিংটনভিত্তিক ইসরাইলপন্থী থিঙ্ক ট্যাংক ওয়াশিংটন ইনস্টিটিউট ফর নেয়ার ইস্টার্ন অ্যাফেয়ার্সের এক জরিপে এ তথ্য পাওয়া গেছে। মিডল ইস্ট আই এ জরিপের ফলাফল প্রকাশ করেছে।
জরিপে দেখা গেছে, ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে সৌদি আরবকে চাপ দিতে গিয়ে কঠিন অবস্থায় পড়েছে আমেরিকা।
গাজার যুদ্ধের আগে যুক্তরাষ্ট্র সক্রিয়ভাবে ইসরাইল-সৌদি আরব সম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় কাজ করছিল। বাহরাইন, মরক্কো, সংযুক্ত আরব আমিরাতের সাথে ইসরাইল যে ধরনের সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করেছিল, সে ধরনের কিছু করতে চাচ্ছিল যুক্তরাষ্ট্র।
এমনকি সেপ্টেম্বরে ফক্স নিউজকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান বলেছিলেন যে দুই দেশ এ ধরনের একটি চুক্তির জন্য ‘প্রতিদিনই’ আরো কাছাকাছি চলে আসছে।
কিন্তু এখন ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিকরণ প্রক্রিয়া থমকে গেছে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, সৌদি আরবে রাজতন্ত্র থাকলেও সেখানকার সিদ্ধান্ত গ্রহণপ্রক্রিয়ায় জনমত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
শুক্রবারে প্রকাশিত ওই জরিপে আরো দেখা যায় যে ৪০ ভাগ সৌদি এখন হামাসের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব প্রদর্শন করে। অথচ যুদ্ধের আগে পরিচালিত জরিপে তা ছিল মাত্র ১০ ভাগ।
জরিপে আরো দেখা গেছে, সৌদিদের ৮৭ ভাগ বিশ্বাস করে যে ‘ইসরাইল এত বেশি দুর্বল এবং অভ্যন্তরীণভাবে বিভক্ত যে এটি একদিন পরাজিত হবে।’
জরিপে দেখা গেছে যে জর্ডান, লেবানন ও মিসরেও হামাসের প্রতি সমর্থন বেড়ে গেছে।
জরিপে ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরাইলের হামলার ফলে আরব দুনিয়ায় ইসরাইলের প্রতি ক্ষোভ বাড়ার বিষয়টি প্রকটভাবে ফুটে ওঠেছে।
ইসরাইলি হামলায় গাজায় ২০ হাজারের বেশি লোক নিহত হয়েছে। নিহতদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু।
উল্লেখ্য, ভয়েস অব আমেরিকার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে গাজা উপত্যকায় ইসরাইলের সামরিক অভিযান এখন ইতিহাসের সবচেয়ে মারাত্মক ও ধ্বংসাত্মক ঘটনার অন্যতম হয়ে উঠেছে বলে বিশেষজ্ঞরা দাবি করেছেন।
মাত্র দু মাসের সামান্য বেশি সময়ে এই আক্রমণ যতখানি ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে তা ২০১২ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত সিরিয়ার আলেপ্পো, ইউক্রেনের মারিউপল কিংবা সেই অনুপাতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির উপর মিত্রবাহিনীর বোমাবর্ষণকে ছাড়িয়ে গেছে।
ইসলামিক স্টেট গ্রুপের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন জোটের তিন বছরব্যাপী অভিযানে যত বেসামরিক লোক প্রাণ হারিয়েছে, ইসরাইলের আক্রমণে নিহত হয়েছে তার চেয়েও বেশি বেসামরিক মানুষ।
ইসরাইলিরা গাজায় কী ধরণের বোমা এবং গোলন্দাজ ব্যবহার করছে সে সম্পর্কে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী কিছুই জানায়নি। কিন্তু ঘটনাস্থলে বিস্ফোরকের টুকরো এবং আক্রমণের ফুটেজ বিশ্লেষণ করে বিশেষজ্ঞরা এ ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েছেন যে ওই অবরুদ্ধ ছিটমহলে নিক্ষিপ্ত বোমার বেশির ভাগই যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি।
তারা বলছেন, এই সব অস্ত্র-শস্ত্রের মধ্যে রয়েছে ৯০০ কিলোগ্রাম ওজনের ‘বাংকার বাস্টার’ বোমা। আর এর ফলে বিপুল জন-অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে শত শত লোক নিহত হয়েছে।
এই ধ্বংসযজ্ঞের প্রতিবাদে আরব দুনিয়াজুড়ে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন প্রকাশ করে বিক্ষোভ হয়েছে। এছাড়া মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ইসরাইল-সম্পর্কিত ব্যবসা বয়কট করার জন্য রাস্তায় রাস্তায় বিক্ষোভ হয়েছে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post