মা কয় কিরে সন্ধ্যা হয়ে গেল এখনো বই নিয়ে বসলিনা.? আমি বললাম বসবো মা। কেরোসিনের কুপি/বাতি জ্বালিয়ে নিয়ে পড়তে বসলাম। “মেঘ দেখে কেউ করিসনে ভয় আড়ালে তার সূর্য হাসে” পরীক্ষার জন্য ভাবসম্প্রসারণ পড়ছি কয়দিন বাদে ফাইনাল পরীক্ষা, আর নিজের জীবনকে উপলব্ধি করছি। গভীর রাত বাইরে ঝিঁঝিঁ পোকার শব্দ, সাথে কুকচড়ার অশনি সংকেত আমার কানে বাজছে! এই বুঝি সব শেষ হয়ে গেল। তার পরেও নিজেকে নিজে প্রশ্ন করি! আমার জীবনের সূর্য কোনদিন হাসবে তো?
নারকেল গাছ থেকে পড়ে যাওয়া বুকের ক্ষত এখনো শুকায়নি কেবলমাত্র টান ধরেছে। প্রচন্ড খরায় পানির অভাবে ফেটে যাওয়া মাঠ-ঘাট যেমন টান ধরে ঠিক ওরকম করে। গায়ে অনেক ব্যথা, জ্বর জ্বর অনুভব করছি, তারপরও জীবন যুদ্ধে হার মানলে চলবেনা ঘুরে দাঁড়াতে হবে। বই খুলে বসে আছি পড়ায় মন নেই তাই জীবন নিয়ে ভাবছিলাম, তারপরও পড়ছি আর মাঝে মাঝে নিজের জীবন নিয়ে ভাবছি।
সামনে এসএসসি পরীক্ষা ফর্ম ফিলাপ করার মত টাকা নেই, এমন কারো কথাই মনে পড়ছেনা যে আমাকে টাকা দিয়ে সাহায্য করবে, সত্যিই বড় অসহায় বোধ করছি। দুশ্চিন্তার নির্ঘুম রাত সকাল হওয়ার বাকি এদিকে কুপির তেলও প্রায়ই শেষ, তাই নিভু নিভু করে জ্বলছে আমি বাতিটা নিভিয়ে দিয়ে শুয়ে পড়লাম।
আরও পড়ুনঃ জীবনের গল্প পর্ব-১
অজ পাড়াগাঁয়ের এক গ্রামে আমার জন্ম আধুনিকতার ছোঁয়ায় এখনো পৌঁছায়নি আমাদের গাঁয়ে, বলতে গেলে প্রযুক্তি থেকে অনেক অনেক দূরে আর নাগরিক সুযোগ সুবিধা নাই বললেই চলে। জরাজীর্ণ আর কাদা মাখা পথ গুলো আমাদের নিত্যদিনের সঙ্গী হয়। অনেক কষ্ট করে গায়ের মানুষ আর পাড়া প্রতিবেশীর কাছ থেকে ফর্ম ফিলাপের টাকাটা ধার করে জোগাড় করলাম। ধার নেওয়ার সময় বলেছি পরীক্ষা শেষে কাজ করে টাকা শোধ দেব।
যথারীতি মধুখালি এসএসসি পরীক্ষার সিট পরে আমার, মধুখালী আমাদের বাড়ি থেকে অনেক দূরে, তাই পরীক্ষা দেওয়ার জন্য থাকতে হবে সেখানে, কিন্তু কি করে সম্ভব? সেখানে আপন তো দূরের কথা দূর সম্পর্কের কোনো আত্মীয়-স্বজনও নেই, যে তাদের বাড়ি থেকে পরীক্ষা দিব। হাতে টাকা পয়সা না থাকায় অন্য কোন পথ খোঁজার রাস্তাটায় যেন বন্ধ, কি করব ভেবে পাচ্ছি না! তাই পরীক্ষা দেওয়ার আনন্দ শুরু হতেই শেষ হয়ে যায়।
এদিকে আমার সমবয়সী অনেকেই চাকরি করার জন্য গ্রাম থেকে ঢাকায় যাচ্ছে, শুনেছি অনেকের ঢাকাতে সোনার দোকানে ভালো চাকরি হয়েছে। ওদেরকে আমি চিনতাম ওরা সবাই আমার গ্রামের পাড়াতো ভাই। এই মুহূর্তে আমার একটা চাকরি দরকার তাই ওদেরকে আমি খুব করে ধরলাম, ভাই যদি পারো আমার জন্য একটা চাকরির ব্যবস্থা করে দিও বড় উপকার হয়। যতবারই ওদের বলেছি একটা চাকরির ব্যবস্থা করে দিও বড় বিপদে আছি ভাই, ততবারই আমাকে আশ্বস্ত করেছে কিন্তু পরে আর কোন খবর নেয়নি আমার।
এরপর ওরা কেউ কখনো গ্রামে আসলে আমার সাথে দেখা তো দূরের কথা, আমি জানতেই পারতাম না ওরা কবে এসে ঘুরে গেছে। এদিকে পরীক্ষা শেষে ধার করা টাকা শোধ দিব বলে কথা দিয়েছি, এরই মধ্যে আমি বুঝে ফেলেছি ওদের আশায় থেকে আর কোনো লাভ নেই, তাই শেষবারের জন্য একবার মধুখালী ঘুরে আসতে চাই যেখানে আমার পরীক্ষার সিট পড়েছে।
https://www.youtube.com/watch?v=kundm1jK7YM&t=254s
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post