আদালতের অনুমতি ছাড়া বিদেশ যেতে পারবেন না পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা জাকির হোসেন। মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের মামলায় এ আদেশ দিয়েছেন চেম্বার আদালত। এছাড়া হাইকোর্টের দেওয়া তার জামিন বহাল রাখেন আদালত। তবে পাসপোর্ট আদালতে জমা দিতে বলা হয়েছে। বুধবার চেম্বার আদালতের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম এ আদেশ দেন। আদালতে দুদকের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান। তিনি বলেন, ১৭ সেপ্টেম্বর জাকির হোসেনকে জামিন দেন হাইকোর্ট। পরে এই জামিন আদেশ স্থগিত চেয়ে আবেদন করে দুদক।
জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে ১৪ মার্চ মামলা করেন দুদকের প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া। কমিশনের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১ এ মামলাটি দায়ের করা হয়। এজাহারে তার নামে স্থাবর-অস্থাবরসহ ১৫ কোটি ৩৯ লাখ ৯৭ হাজার ৬৭৬ টাকার সম্পদের তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। দুদকের অনুসন্ধানে এসব সম্পদের বৈধ উৎস দেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন তিনি।
মামলার এজাহারে তার স্থাবর সম্পদ হিসেবে রাজধানীর ধানমন্ডির ১ নং রোডের ৫ নং বাড়িতে ৫০ লাখ ৮৪ হাজার ৮শ’ টাকা মূল্যের একটি ফ্ল্যাট, ঢাকার খিলগাঁওয়ের নন্দিপাড়ায় ২৬৩ অযুতাংশ জমির উপর পাঁচ তলা বাড়ির নির্মাণ ব্যয় ৭৫ লাখ ৭৫ হাজার ৭শ’ টাকাসহ মোট স্থাবর সম্পদ ১ কোটি ৫১ লাখ ১০ হাজার ২শ’ টাকার উল্লেখ করা হয়।
আর অস্থাবর সম্পদের মধ্যে সঞ্চয়পত্রই রয়েছে ১৩ কোটি টাকার। ব্যাংকে গচ্ছিত ৭২ হাজার ৫০৬ টাকা, হাতে নগদ রয়েছে ১৯ লাখ ১৯ হাজার ৯৭০ টাকা। টয়োটা ব্রান্ডের ১৫০০ সিসির প্রাইভেট কার ক্রয় করেছেন ৩৮ লাখ ৯৫ হাজার টাকায়। সর্বমোট ১৩ কোটি ৮৮ লাখ ৮৭ হাজার ৪৭৬ টাকার অস্থাবর সম্পদের উল্লেখ করা হয় মামলায়।
দুদক অভিযোগ করে, জাকির হোসেন স্থাবর-অস্থাবরসহ মোট ১৫ কোটি ৩৯ লাখ ৯৭ হাজার ৬৭৬ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন এবং তা ভোগ-দখল করছেন।
এজাহারে আরও বলা হয়, জাকির হোসেনের নামে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকে বাগেরহাট জেলা শাখায় সাতটি হিসাবে ৩১ কোটি ৭০ লাখ ৬০ হাজার ৯১৩ টাকা, ঢাকায় সোনালী ব্যাংকের ভিকারুননিসা নুন স্কুল অ্যান্ড কলেজ শাখায় একটি হিসাবে ৪ কোটি ৩ লাখ ১০ হাজার ৯৩০ টাকা ও পদ্মা ব্যাংকের ঢাকাস্থ ধানমন্ডি শাখায় ১৫টি মেয়াদী এফডিআর হিসাবে ৫ কোটি ৬২ লাখ ৩৫ হাজার ১৫৯ টাকাসহ সর্বমোট ৪১ কোটি ৩৬ লাখ ৭ হাজার ২ টাকার লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। ওইসব লেনদেনের ক্ষেত্রে অর্থের বৈধ উৎস সংক্রান্ত কোনো রেকর্ডপত্র পাওয়া যায়নি।
তিনি একজন সরকারি কর্মকর্তা হয়েও অসৎ উদ্দেশ্যে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার মানসে অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গ ও ক্ষমতার অপব্যবহার করায় দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় এবং ওইসব হিসাবসমূহে অবৈধ কার্যক্রমের মাধ্যমে উপার্জিত অপরাধলব্ধ আয়ের ৪১ কোটি ৩৬ লাখ ৭ হাজার ২ টাকা হস্তান্তর, রূপান্তর ও স্থানান্তরের মাধ্যমে অবস্থান গোপন করায় মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের ৪(২) ও ৪(৩) ধারায় মামলা করে দুদক।
এজাহারে বলা হয়, জাকির হোসেন ১৯৯২ সালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যোগদান করেন। তারপর তিনি ১৯৯৫ সালে কুয়েত দূতাবাসে এবং ২০০৯ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ হাইকমিশন কেনিয়ার নাইরোবিতে প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে তিনি দেশে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post