স্বামীর দুটি কিডনিই নষ্ট হয়ে গেছে। খোঁজ করেও কোথাও কিডনি না পেয়ে অবশেষে স্বামীকে নিজের একটি কিডনি দিয়ে দিলেন স্ত্রী। বললেন, বাঁচলে একসঙ্গে বাঁচব, মরলেও একসঙ্গে মরব। সম্প্রতি রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেলে এমন ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে নেত্রকোনার ওই দম্পতি ফেসবুকে পোস্ট দিলে বিষয়টি সবার নজর কাড়ে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নেত্রকোনা পূর্বধলা উপজেলার হিরনপুর গ্রামের জহিরুল হক জুনাইদ (৩৯) ২০১৭ সালের মার্চে আটপাড়া উপজেলার সায়মা জাহান পলিকে (২৭) বিয়ে করেন। দেড় বছর আগে জুনাইদ উচ্চ রক্তচাপ জনিত কারণে অসুস্থ হন। চিকিৎসকের কাছে গেলে পরীক্ষা-নিরীক্ষার একপর্যায়ে ধরা পড়ে তার দুটি কিডনিই বিকল।
এখানে-সেখানে খোঁজ করে কিডনি না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়ে তার পরিবার। একপর্যায়ে পরীক্ষায় জহিরুলের সঙ্গে স্ত্রী সায়মার কিডনি মিলে যায়। এরপরই পলি নিজের একটি কিডনি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। কিডনি দেয়ার পর সুস্থ হন পলি। কিন্তু স্বামী জহিরুল এখনো পুরোপুরি সুস্থ হননি। তারা বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের চিকিৎসা নিচ্ছেন।
সোমবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় মুঠোফোনে কথা হয় জহুরুল হকের স্ত্রী সায়মা জাহান পলির সঙ্গে। গণমাধ্যমকে তিনি জানান, তাদের সাড়ে চার বছরের এক কন্যা সন্তান রয়েছে। তিনি যখন দেখলেন, কিডনি পাওয়া যাচ্ছে না তখন মনে ভয় এলো শিশুটি পিতৃহীন হয়ে বড় হবে! এটি তিনি মেনে নিতে পারবেন না। তখন সিদ্ধান্ত নিলেন নিজের কিডনি দেবেন।
তিনি বলেন, বাঁচলে একসঙ্গে বাঁচব। মরলেও একসঙ্গে মরব।
এ সময় তিনি কথা বলিয়ে দেন তার স্বামী জুনাইদের সঙ্গে। জুনাইদ জানান, তিনি নিষেধ করলেও স্ত্রী মানেননি। বলেন, এখনো পুরোপুরি সুস্থ হইনি। তবে নতুন জীবন পাওয়ার আনন্দটুকু বলে বুঝাতে পারবো না।
জানা গেছে, জহিরুল হকের বাবার নাম মো. মোজাম্মেল হক। তিনি বাবা-মায়ের পাঁচ সন্তানের মধ্যে বড়। রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করা জহিরুল একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। তার স্ত্রী সায়মা জাহান নেত্রকোনা সরকারি কলেজ থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর পাশ করেছেন। এই দম্পতির জুনাইনা জান্নাত রাইসা নামের সাড়ে চার বছরের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে।
জহুরুলের চাকরির সুবাদে বিয়ের পর থেকেই তারা ঢাকায় থাকতেন। গত বছরের ২৭ মে জহিরুল ছুটি নিয়ে গ্রামের বাড়িতে আসেন। ওই দিন অসুস্থ অনুভব করলে স্বজনরা তাকে নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালে কাছে নিয়ে যান। জরুরি বিভাগের চিকিৎসক পরীক্ষার পর উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষায় তার কিডনি রোগ ধরা পড়ে। তখন থেকে ময়মনসিংহ ও ঢাকায় বিভিন্ন স্থানে তিনি চিকিৎসা নেন। কিন্তু শারীরিক পরিস্থিতি ক্রমশ অবনতির দিকে যেতে থাকলে মাসখানেক আগে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন।
গত ৫ সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে কিডনি প্রতিস্থাপনের অস্ত্রোপচার করা হয়।
https://www.youtube.com/watch?v=5LjF8NLHzAU&t=28s
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post