লন্ডন প্রবাসী পাঁচজন ভুয়া শেয়ারের মাধ্যমে বীমা কোম্পানির পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। গণমাধ্যমের অনুসন্ধানে জানা যায়, হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্সের পাঁচ প্রবাসী পরিচালক জাল শেয়ার সার্টিফিকেট দেখিয়ে ১৭ বছর ধরে কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদে রয়েছেন। এই জালিয়াতির মাধ্যমে তারা লভ্যাংশ, বোর্ড মিটিং ফি, ঢাকা-লন্ডন আসা যাওয়ার বিমান ভাড়াসহ কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। গণমাধ্যমের অনুসন্ধান অনুসারে, এই পাঁচ প্রবাসী পরিচালক জাল শেয়ার সার্টিফিকেট তৈরি করে অন্য এক পরিচালকের শেয়ার জালিয়াতি করে নিজেদের নামে দেখিয়েছেন। এই ঘটনায় বীমা কোম্পানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি উঠেছে।
হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স নামের কোম্পানিটির বয়স ২৬ বছর। ১৭ বছর ধরে পরিচালনা পর্ষদে আছেন লন্ডন প্রবাসী জামাল মিয়া, কামাল মিয়া, আব্দুল হাই, আব্দুল আহাদ ও জামাল উদ্দিন। হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা ড. বিশ্বজিৎ কুমার মন্ডল বলেন, হোমল্যান্ড ইন্স্যুরেন্সে বর্তমানে ১৯ জন ডিরেক্টর। এর মধ্যে ৯ জন থাকেন লন্ডনে। এরিমধ্যে দুই পরিচালক আব্দুল হাই ও আব্দুল আহাদের শেয়ার সার্টিফিকেট রহস্যজনকভাবে একই দিনে হারিয়ে যায়। দিনটি ছিলো ২০১৪ সালের ৯ সেপ্টেম্বর। কিন্তু ঘটনার দেড় বছর পর অর্থাৎ ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে থানায় জিডি করেন দুই ভাই।
হোমল্যান্ড লাইফের লন্ডন প্রবাসী অপর দুই পরিচালক জামাল মিয়া ও কামাল মিয়া। তাদের কোম্পানির মালিকানার শেয়ারগুলোও একই দিনে হারিয়ে যায়। ২০১৪ সালের ১০ মে তাদের শেয়ার হারালেও সিলেটের বালাগঞ্জ থানায় তারা জিডি করেন ঘটনার ১৫ দিন পর। প্রবাসী আরেক পরিচালক জামাল উদ্দিনেরও ১০ হাজারটি শেয়ার সার্টিফিকেট হারিয়ে যায় ২০১৪ সালের মে মাসে। এর দুই বছর পর ২০১৬ সালের ১২ মে একই দিনে একই পত্রিকায় হারানো বিজ্ঞপ্তি দেন ঐ পাঁচ প্রবাসী পরিচালক।
আইডিআরএ’র সাবেক সদস্য সুলতান আবেদীন মোল্লা বলেন, এমন জালিয়াতির কথা অন্য কোম্পানিতে আমরা শুনিনি। অনুসন্ধান বলছে, জামাল মিয়া, কামাল মিয়া, আব্দুল ওহাব, আব্দুল হাই ও জামাল উদ্দিনের নামে একটিও শেয়ার ছিলো না। এ কারণে অরিজিনাল শেয়ার হারানোর নাটক সাজান এই পাঁচ পরিচালক। অনুসন্ধানে জানা গেছে, কথিত পাঁচ পরিচালকের সবগুলোর শেয়ারের আসল মালিক; কোম্পানির আরেক উদ্যোক্তা পরিচালক কাজী এনাম উদ্দিন আহমেদ। যিনি নিজের ৮০ হাজার শেয়ার ২০০৫ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন ওরিয়েন্টাল ব্যাংক ও বর্তমানের আইসিবি ইসলামি ব্যাংক লিমিটেডে বন্ধক রেখে ঋণ নিয়েছিলেন।
আইসিবি ইসলামি ব্যাংকের প্রশাসন ও রিকভারি প্রধান ক্যাপ্টেন (অব:) সাখাওয়াত হোসেন বলেন, হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মোট ৮০ হাজার শেয়ার, যার মূল্য ৮০ লাখ টাকা আমাদের ভল্টে অর্জিনাল কপি আছে। হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা ড. বিশ্বজিৎ কুমার মন্ডল বলেন, ২০২২ সালে আমি জয়েন করার আগের বিষয়ে আমি অবহিত না।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করলে ঐ ৫ পরিচালকের হয়ে কথা বলেন আরেক লন্ডন প্রবাসী পরিচালক আব্দুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, ব্যাংকে যে শেয়ার রাখা হয়েছে- তা আমাদের জানা নেই। শেয়ার কেনা বেচার ওয়ান ওয়ান সেভেন ফর্মগুলো জালিয়াতির মাধ্যমে তৈরি করার অভিযোগ রয়েছে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post