আমার বিয়ে হয়েছে প্রায় তিন বছর। দুই বছরের একটি ছেলেও আছে। আমার স্বামী প্রায় দুই বছর ধরে বিদেশে থাকে। একরকম সবার অমতে আমাদের বিয়ে হয়েছিল। এই তিন বছরে আমি কখনো আমার স্বামীর বাড়িতে যাইনি। যাইনি বললে ভুল হবে, তারা আমাকে নেয়নি। এমনকি আমার স্বামীও আমাদের খরচ দেয় না। আবার আমাকে তালাকও দিতে চায় না। এ অবস্থায় আমার কী করা উচিত?
উত্তর: আপনার প্রশ্নের জন্য ধন্যবাদ। বাংলাদেশে প্রচলিত পারিবারিক আদালত অধ্যাদেশ ১৯৮৫ বলে দাম্পত্য অধিকার পুনরায় প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। দাম্পত্য অধিকার পুনরুদ্ধারের বিষয়টি পারিবারিক আদালতের এখতিয়ারে দেওয়া রয়েছে এবং আইনানুযায়ী আদালত ডিক্রি জারি করতে পারেন। আপনার স্বামী যেহেতু কোনো কারণ ছাড়া আপনাকে তাঁর বাড়িতে তুলে নিচ্ছেন না, তাই দাম্পত্য অধিকার দাবি করে আপনি পারিবারিক আদালতে প্রতিকার চাইতে পারেন। যেহেতু আপনার স্বামী কোনো আইনসংগত কারণ ছাড়া আপনার সঙ্গে একত্রে বসবাস বন্ধ করেছেন, সে ক্ষেত্রে স্ত্রী হিসেবে আপনি দাম্পত্য অধিকার চাইতে পারেন এবং স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা করতে পারেন।
দাম্পত্য অধিকার উদ্ধারের বিষয়টি সাধারণত আদালতের বিবেচনার ব্যাপার। উভয়ের মধ্যে বিয়ে কার্যকর আছে কি না, তা আদালত দেখতে চাইবেন। এই অধিকার প্রতিষ্ঠায় আপনাকে প্রমাণ করতে হবে যে আপনার স্বামী কোনো কারণ ছাড়াই আপনাকে তুলে নিচ্ছেন না।
এবার আসা যাক ভরণপোষণ বিষয়ে। ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন অনুযায়ী, খোরপোষ বা ভরণপোষণ স্ত্রীর আইনগত অধিকার। স্ত্রীর খোরপোষ স্বামীর জন্য বাধ্যতামূলক। স্ত্রী স্বামীর সঙ্গে বসবাস না করেও খোরপোষ দাবি করতে পারেন। যত দিন বিয়ে বলবৎ থাকবে, তত দিনই স্বামী খোরপোষ দিতে বাধ্য থাকবেন। খোরপোষের পরিমাণ নির্ধারণ করার সময় সালিসি পরিষদ স্ত্রীর পরিবারের সামাজিক পদমর্যাদা, স্বামীর উপার্জন এবং অন্যান্য বিষয় বিবেচনা করে খোরপোষের পরিমাণ নির্ধারণ করবে।
ভরণপোষণ আদায়ের জন্য আপনি স্থানীয় চেয়ারম্যানের কাছে আবেদন করতে পারবেন। চেয়ারম্যান বিষয়টি সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণের উদ্দেশ্যে একটি সালিসি পরিষদ গঠন করবে। ওই সালিসি পরিষদ স্বামী কর্তৃক খোরপোষ হিসাবে দেয় টাকার পরিমাণ নির্ধারণ করে একটি সার্টিফিকেট ইস্যু করতে পারে। যেকোনো পক্ষ নির্ধারিত পদ্ধতিতে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্ধারিত ফি জমা দিয়ে ইস্যুকৃত সার্টিফিকেটটি পুনর্বিবেচনার উদ্দেশ্যে সহকারী জজের কাছে আবেদন করতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সহকারী জজের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হবে এবং এর বৈধতা সম্পর্কে কোন আদালতে প্রশ্ন উত্থাপন করা যাবে না। এরপর এই ভরণপোষণ যথাসময়ে দেওয়া না হলে, এটা বকেয়া রাজস্বের আকারে আদায়যোগ্য হবে।
কোন শর্ত ভঙ্গ করলে, চেয়ারম্যান কর্তৃক সালিসি পরিষদের সিদ্ধান্ত না মানলে এবং আদালতের নিয়ম–নির্দেশ অমান্য করলে স্বামীর বিরুদ্ধে আদালতের আশ্রয় নিতে পারেন স্ত্রী। সন্তানের ভরণপোষণ ও অভিভাবকত্ব মুসলিম আইন ও রাষ্ট্রীয় আইন অনুযায়ী, বাবাই সন্তানের প্রকৃত অভিভাবক। তাই সন্তানের ভরণপোষণের সব দায়দায়িত্ব হচ্ছে বাবার। সন্তানেরা পারিবারিক আদালতে মামলা করে ভরণপোষণ আদায় করতে পারবে।
🖊️ ব্যারিস্টার মিতি সানজানা
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post