রানা, রুবেল আর জসীম। তিন বন্ধুই দুর্ধর্ষ চোর। তবে তিন বন্ধু মিলে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যে ঘটনা ঘটিয়েছেন, তা রীতিমতো অবিশ্বাস্য। রানাকে তাঁর বন্ধু ও সহযোগীরা ডাকেন ‘স্পাইডারম্যান’। তাঁর নামে রয়েছে চুরি-মাদকসহ ১৮ মামলা। বিমানবন্দরের লকার রুম থেকে ৫৫ কেজি স্বর্ণ গায়েবের ঘটনা সামনে আসার পর এবার নতুন আলোচনায় ‘স্পাইডারম্যান রানা’।
ঘটনাটি মাসখানেক আগের। এত দিন বিষয়টি ছিল আড়ালে। গত ৩১ জুলাই রাত পৌনে ১টার দিকে তিন বন্ধু বিমানবন্দরের ক্যানপির পূর্ব পাশে টয়লেটসংলগ্ন এলাকার স্টিলের কেবলের ফাঁকা অংশ দিয়ে সিলিংয়ের ভেতরে ঢুকে পড়েন। সরু সিলিংয়ের ভেতর দিয়ে ধীরে ধীরে তারা ব্যাগেজ স্টোর ও কাস্টমস এলাকার দিকে এগোতে থাকেন। সবার সামনে ছিলেন রানা। আন্তঃবিমানবন্দর এলাকার আগমনী ১ নম্বর টার্মিনালের নিচতলায় ‘লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড’ ডিভিশনের ১৫ নম্বর কক্ষের ওপরে সিলিংয়ে অবস্থানকালে হঠাৎ ছন্দপতন! সিলিং ভেঙে রাত ১টা ১০ মিনিটের দিকে নিচে পড়ে যান রানা। ওই রাতে সেখানে কর্মরত ছিলেন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের স্টাফ আরিফুল ইসলাম। এত রাতে সিলিংয়ের ভেতর থেকে এক ব্যক্তি বিমানবন্দরের মতো প্রথম শ্রেণির কেপিআইভুক্ত এলাকায় পড়েছেন– এই দৃশ্য দেখে হকচকিত আরিফুল। দ্রুত তাঁকে আটক করে বিমানবন্দরে দায়িত্বরত আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের হাতে তুলে দেন। এরপর তাঁকে দেওয়া হয় বিমানবন্দর থানা পুলিশ হেফাজতে। জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে, ওই রাতে সিলিংয়ের ভেতর দিয়ে পড়ে যাওয়ার পর রানার অপর দুই সহযোগী জসীম ও রুবেল আর সামনে এগোননি। ধরা পড়ার ভয়ে সিলিংয়ের ভেতর দিয়ে তারা পালিয়ে যান।
সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, বিমানবন্দরের মতো স্পর্শকাতর এলাকা থেকে দামি মালপত্র চুরির বড় ধরনের ছক কষেছিলেন তারা। দীর্ঘদিন পরিকল্পনা করে দুর্ধর্ষ কায়দায় সিলিংয়ের ভেতর দিয়ে বিমানবন্দরে ঢোকেন। রানা ভেতরে মালপত্র চুরি করে তাঁর দুই সহযোগীর মাধ্যমে সিলিংয়ের ভেতর দিয়ে বাইরে সরানোর পরিকল্পনা সাজান। তবে সিলিং ভেঙে মধ্যরাতে এক কর্মকর্তার সামনে পড়ে যাওয়ায় তাদের সব পরিকল্পনা ভেস্তে গেছে। বড় ধরনের ঝুঁকি থেকে রক্ষা পাওয়া গেছে।
বিমানবন্দর রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। বিমানবন্দরের ভেতরের সব জায়গায় সিসিটিভি ক্যামেরার নজরদারি থাকে। বিমানবন্দরে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা কাজ করেন। এত নিরাপত্তার মধ্যে তিন বন্ধু যেভাবে হানা দিয়েছেন, তাতে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মূলত এই কৌশলে বিমানবন্দরের ভেতরে ঢোকার প্রথম ছক করেন রুবেল। তাঁর বাসা বিমানবন্দরসংলগ্ন কাওলায়। কিছুদিন তিনি দক্ষিণখানেও বাস করতেন। রুবেল এই পরিকল্পনার কথা রানা ও জসীমকে জানান। এরপর তারা একজোট হয়ে ওই মিশনে নামেন। এর আগে চকবাজারে একই কৌশলে একটি চুরির সঙ্গে রানা জড়িত ছিলেন। একাধিকবার গ্রেপ্তার হয়ে বিভিন্ন সময় কারাগারেও ছিলেন তিনি।
বিমানবন্দর থানার ওসি আজিজুল হক মিয়া বলেন, লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড বিভাগ থেকে মালপত্র চুরি করার লক্ষ্য ছিল তাদের। যেভাবে তারা ভেতরে ঢুকেছিল, এটা কল্পনা করাও কঠিন। অন্য দুই আসামিকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বিমানবন্দর থানার এসআই আল-আমিন কাউছার অপু বলেন, রানাকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল।
এ ঘটনায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা হলেও তদন্ত এখনও শেষ হয়নি। পলাতক দু’জনকে ধরতে একাধিক জায়গায় এখনও অভিযান চলছে। বিমানবন্দরের মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় চুরির চেষ্টার ঘটনা বলে বিষয়টি সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছি। টয়লেটের যে জায়গা দিয়ে তারা সিলিংয়ের ভেতরে ঢুকেছিল, সেখানে সাধারণত নিরাপত্তার কেউ থাকে না। এই সুযোগটি তারা নিয়েছে। একাধিকবার তারা ওই এলাকা রেকিও করে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post