মধ্যযুগীয় আঁকাবাঁকা সড়কের পাশে গথিক স্থাপত্যের সুবিশাল ক্যাথিড্রালগুলো পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ। ইউরোপের বৈচিত্র্যময় ও অনিন্দ–সুন্দর স্থাপত্যশৈলী শতকের পর শতক ধরে নন্দিত হয়ে আসছে। একই সঙ্গে এগুলো পাশ্চাত্য সভ্যতার এক বড় নিদর্শন হিসেবেও স্বীকৃত। অনেকেই জানেন না যে ইউরোপীয় স্থাপত্যশৈলীর একটি উল্লেখযোগ্য অংশই অনুপ্রাণিত হয়েছে ইসলাম ও প্রাচ্য থেকে।
লেখক-গবেষক ডায়ানা ডার্কে তাঁর স্টিলিং ফ্রম দ্য সারাসিনস: হাউ ইসলামিক আর্কিটেকচার শেপড ইউরোপ বা সারাসিন থেকে চুরি: কীভাবে ইসলামি স্থাপত্য ইউরোপকে গড়ে তুলল শিরোনামে রচিত বইটিতে এ তথ্যই তুলে ধরেছেন। উল্লেখ্য, সারাসিন বলতে সাধারণত মধ্যযুগের আরব ও তুরস্কসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিস্তৃত মুসলিম অঞ্চলকে বোঝানো হয়ে থাকে।
বইটি নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে ফাইনান্সিয়াল টাইমস–এ বলা হয়েছে, এমন নয় যে ইউরোপীয় স্থাপত্যশৈলীতে ইসলামী স্থাপত্যের প্রভাব ও অনুকরণের বিষয়টি খুব অজানা। বরং বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন মানুষ এটি তুলে ধরেছেন। বলা হয়ে থাকে যে খ্রিষ্টান ক্রুসেডাররা এসব স্থাপত্যের নকশার ধারণা মুসলিম জগত থেকে নিয়ে গিয়েছিল। এই বইয়ে সেগুলোর সূত্র উল্লেখসহ বাড়তি কিছ তথ্য ও বিশ্লেষণ দেয়া হয়েছে। ডার্কে দেখাচ্ছেন যে ক্রুসেডেরও আগে সিসিলি ও আমলফি বাণিজ্যকেন্দ্র দিয়েই এসব স্থাপত্যের নকশা ইউরোপে প্রবেশ করেছিল। উত্তর ইউরোপের চিরচেনা গথিক স্থাপত্যের বেশির ভাগ বৈশিষ্ট্য—যেমন চূড়া, খিলান, রঙিন কাঁচ ইত্যাদি—এসেছে মূলত মধ্যযুগের আরব-তুর্কি তথা মুসলমানদের কাছ থেকে।
অনেকেই এখন এ কথা জানেন যে রোমের পতনের পর ইউরোপের অন্ধকার যুগে প্রাচ্যে বাগদাদের মতো শহর ছিল জ্ঞানচর্চার এক সহিঞ্চু কেন্দ্র। সেখানকার সড়কবাতি এবং পরিষ্কার পানির প্রবাহ বিদেশিদের কাছে ছিল বিস্ময়কর।
পশ্চিমা বিশ্ব এখন ধীরে ধীরে জানতে শুরু করেছে যে ইউরোপের ক্রুসেডাররা মধ্যপ্রাচ্যে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে এবং সেখান থেকে ফেরার সময় ইউরোপকে গড়ার মতো বহুবিধ ধারণা নিয়ে এসেছে। ডারকে বলতে চান, আরব তথা ইসলামী বিশ্ব শুধু গ্রিক দর্শন আর গণিতেরই অনুবাদ করেনি, বরং সমৃদ্ধ ইউরোপ গড়ে ওঠার পেছনে তাদের অবদান বহু দূর পর্যন্ত বিস্তৃত। গথিক চার্চের চূড়াগুলো মসজিদের মিনার দিয়ে অনুপ্রাণিত হয়েছে, গথিক খিলানগুলো মসজিদ ও প্রাসাদের বাঁকানো পাকা গাথুনিতে গড়া।
এ বইটি প্রধানত স্থাপত্যের ওপর আলোকপাত করেছে। তবে ইসলামের ইতিহাসের কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা এবং তার প্রভাব বইটিতে স্থান পেয়েছে। স্টিলিং ফ্রম দ্য সারাসিন্স: হাউ ইসলামিক আর্কিটেকচার শেপড ইউরোপ; ডায়ানা ডার্কে, হার্সট, লন্ডন, ২০২০
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post