পবিত্র রমজান মাস নিয়ে এবার নতুন নিয়ম জারি করেছে সৌদি আরব। যা নিয়ে তীব্র সমালোচনা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বিভিন্ন মুসলিম দেশ। চলতি বছর রমজানে ইবাদত পালনের ক্ষেত্রে বেশ কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করেছে সৌদি আরব। এর মধ্যে মসজিদে লাউডস্পিকারের সংখ্যা হ্রাস, শেষ ১০ দিন ইতিকাফকারীদের ওপর নজরদারী ও মসজিদে নামাজের ছবি তোলা ও নামাজের লাইভ সম্প্রচার নিষিদ্ধ করার নির্দেশনাও রয়েছে।
শুক্রবার দেশটির ইসলাম বিষয়ক মন্ত্রী আবদুল লতিফ আল শেখের বরাতে এ খবর জানায় মিডল ইস্ট মনিটর। এই নির্দেশনার মধ্যে রয়েছে, জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ইমাম ও মুয়াজ্জিন মসজিদে অনুপস্থিত থাকতে পারবেন না। এবং তারাবি নামাজ দীর্ঘ করা যাবে না। এছাড়া রমজানের শেষ ১০ দিন ফজর আজানের আগেই তাহাজ্জুদ শেষ করতে হবে, যাতে ফজর নামাজ পড়তে আসা মুসল্লিদের সমস্যা না হয়।
নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, নামাজ আদায়ের সময় ইমাম এবং মুসল্লিদের ছবি তোলার জন্য ক্যামেরা ব্যবহার করা যাবে না। সবধরনের মিডিয়ায় নামাজের সম্প্রচার করা যাবে না। একই সঙ্গে মসজিদে ইতিকাফের অনুমোদন দেবেন ইমাম এবং তিনিই ইতিকাফকারীদের তথ্য জানার দায়িত্ব পালন করবেন।
মসজিদে ইফতারের জন্য মুসল্লিদের থেকে আর্থিক অনুদান সংগ্রহ থেকেও নিষেধ করা হয়েছে মন্ত্রণায়লের পক্ষ থেকে। ইফতার এবং এজাতীয় আয়োজনের জন্য মসজিদের ভেতরের জায়গার পরিবর্তে বাহিরের জায়গা ব্যবহারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং এসব আয়োজন ইমাম ও মুয়াজ্জিনের দায়িত্বে পরিচালনার কথা বলা হয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আরোপ করা বিতর্কিত নির্দেশনাগুলোর মধ্যে রয়েছে, চলতি ও গত বছরের ধারাবাহিকতায় আজানের জন্য ব্যবহার করা লাউডস্পিকার ও ভলিউম সীমাবদ্ধ রাখা। এর পাশাপাশি মসজিদে নামাজ এবং তেলাওয়াতেও সীমাবদ্ধতা রাখা হয়েছে এবং অভিভাবকের সঙ্গে শিশুদের নামাজে নিয়ে আসার ক্ষেত্রেও সীমাবদ্ধতা আরোপ করা হয়েছে।
সৌদি আরবের এমন সিদ্ধান্তে সমালোচনা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বিভিন্ন মুসলিম দেশ। তবে এই সিদ্ধান্তে উদ্বেগের কিছু নেই বলে জানিয়েছেন সৌদি মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র, আবদুল্লাহ আল-আনাজি। তিনি আল-সৌদিয়া চ্যানেলকে দেওয়া এক সাক্ষাত্কারে বলেছেন, ‘মন্ত্রণালয় মসজিদে ইফতার করতে বাধা দিচ্ছে না, বরং আয়োজনটি সুশৃঙ্খলভাবে পালন করতে ও মসজিদের পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতা রক্ষা করতে এমন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’
নামাজের ছবি তোলা ও সম্প্রচারে নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়ে তিনি বলেন,‘ইমামদের ওপর অবিশ্বাসের কারণে এ নিয়ম জারি করা হয়নি বরং ইমামদের বক্তব্যে অনিচ্ছাকৃত ভুল এড়ানোর জন্য এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।’ এদিকে, বিশ্লেষক সামি হামদি একটি টুইট করে জানিয়েছেন, সৌদি আরব বর্তমানে ইসলামকে আর মূল স্তম্ভ হিসেবে মনে করে না। ফেল সেই পরিচিতি থেকে ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসতেই ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে এই দেশ।
সৌদি প্রশাসনের নতুন আইন নিয়ে মুসলিমদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে। কারও কারও মকে, এই নিয়মগুলির পিছনে নির্দিষ্ট যুক্তি রয়েছে। কেউ আবার মনে করছেন এই নিয়মে আদতে সেন্সরশিপের সমান। রমজান এবং খুশির ঈদ উপলক্ষে সৌদি আরবে পৌঁছান বহু সংখ্যক মুসলিম। তাঁদের এই মিলনের মুহূর্তগুলিকে নিয়মের বেড়াজালে বেঁধে দেওয়া অনুচিত বলেই মনে করছেন অধিকাংশ মানুষ।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post