দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিয়ে আমরা গর্ব করি। এই রিজার্ভের কল্যাণে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে আমাদের সচ্ছল ধারা বজায় থাকে। আর সেই রিজার্ভ গড়ে তুলতে অন্যতম ভূমিকা পালন করেন প্রবাসে কাজ করা বাংলাদেশি শ্রমিকরা। কিন্তু তাদের জীবন কীভাবে চলে সেই খবর আমরা কতটুকু রাখি।
বিদেশে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে অতিরিক্ত সময় কাজ করাসহ নানা কারণে বছরে তিন হাজারের বেশি শ্রমিক লাশ হয়ে দেশে ফেরেন। কোনো কোনো বছর এই সংখ্যা চার হাজারও ছাড়িয়ে যায়। শুধু মৃত্যু নয়, অনেকে কর্মক্ষমতা হারিয়ে দেশে ফেরেন। অভিবাসন বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রবাসে মারা যাওয়া শ্রমিকদের বড় একটি অংশেরই মৃত্যু হয় স্ট্রোকে। এরপর রয়েছে হৃদরোগ ও কিডনির সমস্যা। তা ছাড়া আছে কর্মক্ষেত্রে মৃত্যু ও সড়ক দুর্ঘটনা, অসুস্থতা, আগুনে পুড়ে মৃত্যু, আত্মহত্যা বা খুন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই প্রবাসীদের মৃত্যুর কারণ খতিয়ে দেখা হয় না। মেডিকেল রিপোর্টে মৃত্যুর যে কারণ উল্লেখ করা হয়, সেটাই মেনে নিতে হয়। এমনকি শরীরে জখম বা নির্যাতনের চিহ্ন থাকলেও তা নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ থাকে না।
বাংলাদেশে কর্মসংস্থানের অভাব থাকায় এবং কিছুটা উন্নত জীবনের প্রত্যাশায় অনেকে অনেকভাবে বিদেশে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কেউ কেউ মানবপাচারকারীদের হাতে পড়ে যান। মরুভূমিতে বেঘোরে জীবন দিতে হয়। ভূমধ্যসাগরে সলিল সমাধি হয়। থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়ার জঙ্গলে অতীতে অনেক বাংলাদেশির গণকবরও পাওয়া গেছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই চুক্তি অনুযায়ী কাজ ও বেতন পাওয়া যায় না। বিদেশে গিয়ে তারাই বেশি দুর্ভোগের শিকার হন।
বিদেশে গিয়ে তারা যখন দেখেন চুক্তির বেতনের অর্ধেকও পাচ্ছেন না, তখন অত্যধিক গরমের মধ্যে দ্বিগুণেরও বেশি সময় কাজ করতে হয়। খরচ বাঁচাতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকতে বাধ্য হন। তারাই এক সময় অসুস্থ হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। দূতাবাসগুলোও সেই অভিযোগ নিয়ে সক্রিয় হয় না এমন অভিযোগ প্রবাসীদের। এ ক্ষেত্রে দূতাবাসগুলোকে আরো সক্রিয় হতে হবে এমন মত অভিবাসন বিশেষজ্ঞদের।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post