‘জ্বীনের বেগম’ পরিচয় দিয়ে দিনাজপুরে এক প্রবাসী নারীর কাছে প্রায় তিন কোটি টাকা প্রতারণার অভিযোগে দুই নারীসহ চারজনকে আটক করেছে পুলিশ। এ অভিযোগে ৪ জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করে আদালতের পাঠানো হয়েছে। অধিকতর তদন্ত ও স্বীকারোক্তির জন্যে আটককৃতদের বিরুদ্ধে আদালতে রিমান্ড চেয়েছে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা।
রবিবার (৫ মার্চ) দুপুরে দিনাজপুর পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিং এসব তথ্য জানিয়েছেন পুলিশ সুপার শাহ্ ইফতেখার আহম্মেদ। আটককৃত আসামিরা হলেন- দিনাজপুর শহরের পাটুয়াপাড়া (সমাজসেবা অফিস সংলগ্ন) এলাকার বাবুর স্ত্রী মিসেস লাইজু (৪০), আলতাফ হোসেনের (৫২) এবং তার মেয়ে আঁখি সুবর্ণা (৩০) ও ছেলে অনুরাগ আল ইমরান আনন্দ (২৭)।
পুলিশ সুপার শাহ্ ইফতেখার আহম্মেদ জানান, দিনাজপুর শহরের বালুবাড়ী এলাকার বাসিন্দা আমেরিকা প্রবাসী মোছা. রোকেয়া রহমানকে প্রতারণায় ফেলে নিজেকে জ্বীনের বেগম পরিচয় দিয়ে মিসেস লাইজু এবং তার বোন জামাই (ভগ্নিপতি) আলতাফ হোসেন ও তার মেয়ে আঁখি সুবর্ণা এবং ছেলে অনুরাগ আল ইমরান আনন্দ ২০২০ সালের ৭ এপ্রিল হতে ২০২২ সালের ২০ মার্চ পর্যন্ত প্রায় তিনকোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। বিদেশ প্রবাসী ধর্মভীরু রোকেয়া রহমান দেশে বেড়াতে এলে রাজধানী ঢাকার নিউ মার্কেট মহিলা মসজিদে ২০২০ সালের ৭ এপ্রিল প্রথমে পরিচয় হয় কথিত জ্বীনের বেগম মিসেস লাইজুর সাথে।
পরে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ছদ্মবেশে জ্বীনের বেগম পরিচয় দিয়ে লাইজু এবং তার তিন সহযোগিতা বেহেসতে জ্বীনের মসজিদ বানানোর কথা বলে বিকাশ ও মার্কেন্টাইল ব্যাংকে আঁখি সুবর্ণার নিজস্ব ব্যাংক একাউন্ট এর মাধ্যমে তিনকোটি টাকা হাতিয়ে দেয়। রোকেয়া রহমান টাকা না দিলে তাদের পরিবারের খুবই ক্ষতি হবে বলেও কথিত জ্বীনের বেগম ও তার তিন সহযোগি ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে।
আখিঁ সুবর্ণা দিনাজপুরস্থ মার্কেন্টাইল ব্যাংকে অফিসার পদে কর্মরত। তার স্বামী রাশেল ইটালি প্রবাসী। প্রতারণাকৃত টাকা দিয়ে আঁখি সুবর্ণা এবং তার স্বামী রাশেল ইটালিতে একটি সুপার শপিং মল তৈরি করেছেন। অন্যদিকে মিসেস লাইজু স্বামী পরিত্যক্তা। তিনি দিনাজপুরের ভগ্নিপতির পরিবারের সাথেই থাকেন।
এ ঘটনায় প্রতারিত রোকেয়া রহমানের ছেলে সারোয়ার রহমান তার মাকে প্রতারণ করা হচ্ছে জানতে পেয়ে কথিত জ্বীনের বেগম মিসেস লাইজু এবং তার তিন সহযোগির সাথে দেখা করেন এবং আর প্রতারণা না করার অনুরোধ জানিয়ে মায়ের টাকা ফেরত চান। এতে উলটো সারোয়ার রহমানের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন তারা। পরে সারোয়ার রহমান শনিবার (৪ মার্চ) বিষয়টি পুলিশকে জানান। পুলিশ দিনাজপুর কোতয়ালী থানার মামলা নেন।
এই মামলার তদন্তকারী অফিসার হিসেবে রয়েছেন এসআই(নিঃ) ইন্দ্র মোহন রায়। পুলিশ সাড়াশি অভিযান চালিয়ে রাতেই তাদের আটক করে। তাদের কাছে উদ্ধার করা হয় ৪টি দামি মোবাইল ফোন, একটি ১৫০ সিসি মোটরসাইকেল, চেকবই, ক্রেডিট ভিসা কার্ডসহ বেশ কিছু কাগজ-পত্র।
প্রসঙ্গত: কথিত জ্বীনের বেগম খ্যাত মিসেস লাইজু এবং তার ভগ্নিপতি আলতাফ হোসেনের গ্রামের বাড়ি গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ থানায়। প্রতারণার অভিযোগে ইতোপূর্বেও তাদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা হয়েছে।
এছাড়াও জ্বীনের বেগম পরিচয় দিয়ে সম্প্রতি লাইজু সৌদি প্রবাসী ফারুক নামে এক ব্যক্তির কাছেও মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে পুলিশের কাছে অভিযোগ এসেছে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post