ঢাকা ছেড়ে গ্রামে চলে যাচ্ছেন অনেকে—বাড়িওয়ালার বিপদে ভাড়াটিয়া খুশি, বাড়িওয়ালা ব্যাজার–সমালোচনা এইসেই কত কী! গ্রামে গেলে শহুরে খরচের অঙ্কটি কমে হয়ত আর্থিক উপকারটি হবে। কিন্তু বিপদও কম নয়। আপনার সম্পত্তি আর অধিকারে এতদিন রাজার হালে থাকা গ্রামের স্বজনের এলার্জি শুরু। প্রথম কয়েকদিন বেশ মেহমান মেহমান ভাব।এরপর যখন অধিকার বুঝতে যাবেন, আপনার বউ/স্বামী/সন্তান ফল, মাছ, গাছ নিয়ে কথা বলবেন— ক্যাচাল শুরু!
আপনার কি মনে হয়, গ্রাম এখনও ছায়ামায়ায় ভরপুর আছে? রাজনীতি, নেশা আর বখাটেপনা ভরপুর হয়েছে। বেহেশত বলে যেটাকে জানেন, গিয়ে দেখেন—স্বয়ংক্রিয় নরক হয়ে আছে ওটি। শহরে বড় হওয়া ছেলেমেয়েরা মানিয়ে নিতে বহু সমস্যায় পড়বে। এতো গেল গতানুগতিক বড়লোকের কথা!
এবার আসেন পকেটে!
জমানো টাকা বহুদিন খাওয়ার সামর্থ্য অনেকেরই নেই। এ সমস্যা সমাধানে, অনেকের মতে সমস্যায় আরও জড়াতে আছে ‘কিস্তি’! নূহ নবীর কিস্তি নয়! সমিতির কিস্তি! উঠানো লাগবে অনেকেরই। এরপর শুরু ঋণ আর বিবাদ! শহর থেকে গ্রামে যাওয়া মেয়েরা মানেই হল–আশপাশের বহু ক্ষেপণাস্ত্র ওইদিকে তাক করা শুরু। “ওই বাড়িতে একটা মাল আইছে”— এমন অদম্য অসভ্য বাসনায় ছোটবড় বহু কুত্তা বাড়ি কিংবা আশপাশে ঘুরঘুর করবে!
মাজাব্যাকা,দাঁত ফোকলা ছকিনার মায়রে নিয়া আজীবন ঘুমানো দাদু, রগরগে ছবির নিয়মিত দর্শক উঠতি কিশোর, রাজনীতি করে পাট নেয়া ঢেউটিন মার্কা বিড়িখোর বাবাখোরের লোলুপ দৃষ্টি থেকে কন্যা এমনকি বউ/ বোনকে রক্ষা করা কঠিন। বিলাস দ্রব্যেও নজর থাকবে অনেকের। আলতুর মায়ের যেমন জ্বলবে সোনার হার কিংবা চুরি দেখে, তেমনি চোরেরাও তক্কেতক্কে থাকবে– সুযোগ হবে কখন।
তাই বলে ডাকাত মহোদয়কেও ভুলবেন না। রাজনীতি ও প্রশাসনের ব্যাকআপে সবযুগেই দুর্বৃত্ত থাকে। যাদের ব্যাকগ্রাউন্ড অপকর্মে ভরা, অ্যাকশনের জন্য তারাই এগিয়ে। পুলিশের সোর্স, সহযোগী ভুঁইফোঁড় সংগঠন, দলীয় ক্যাডারের ইতিহাস তাই বলে।
★(বিষয়টি সার্বিক না হলেও চ্যালেঞ্জ নিবি না কেউ, খবরদার! চোখ হাতে নিয়া বড় হইনাই আমি) গরিব বিধবা, স্বামী নেই অথচ বয়ঃস্থা মেয়ে আছে এমন পরিবারকেও বিপদে পড়তে হবে বেশি করে!
★★ গ্রামকে কখনওই কোন সরকার কর্মসংস্থানের আদর্শ জায়গা করে গড়ে তোলেনি। মাঝেমাঝে আবেগের জায়গা তৈরি হলেও ঢাকায়ই ঘুরেছে সে স্বপ্ন!
এন্টাসিড খেলে যে রোগ ভালো হয়, সে চিকিৎসাও ঢাকায়, জয়পুরহাটের কলমি শাক কিংবা কচুর লতি বেচা হবে- ঢাকায়! ভালো কলেজ- ঢাকা, ভার্সিটি-ঢাকা, ইনকাম করবো- ঢাকা, ক্যারিয়ার গড়বো- ঢাকা! বহুত দালাল বলবে—অবকাঠামো এইসেই ভাতা আপনার চোখে পড়ে না? খুব পড়ে রে ছমেইদ্যার পো! পাকা রাস্তা আর পাকা ভবন মানেই অর্থনীতির মানদণ্ড নয়। কর্মসংস্থানকেন্দ্রিক ও জীবনযাপন, চিকিৎসা ও শিক্ষার কী কচুডা আছে কোন গ্রামে?? যা আছে তা কি পর্যাপ্ত? জনসংখ্যার দোহাই দিবি? এদেরকে জনশক্তি করতে দেখছস কখনও?
আরও পড়ুনঃ ওমান থেকে চালু হচ্ছে বাংলাদেশের ফ্লাইট
সরকারি বরাদ্দের কোন টাকাটা হালাল উপায়ে তোমার গ্রামে ব্যয় হয়? দোষ কি ঢাকার? একটা সিস্টেম দাড়িয়ে গেছে, মীরজাফরের বংশধর আমরা। গ্রামে পয়দা হয়েছি অথচ সেই গ্রামের অর্থনীতি কখনও চাঙা করিনি। খামার, মাছ চাষ, কৃষি করার কথা কইবেন? কারও প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা আছে এ বিষয়ে? আমার আছে তিনবছর ধরে, বহু ইতিহাস রচিত হয়েছে এ খাতে। কিস্তিঅলা আর ফিডঅলা বাচ্চাঅলারা সরকারের মাথায় লবণ রেখে কাঁঠাল খায়— এসব তাই জমছে না। গ্রামের দফারফা সারা হইছে, এবার শহরেরডাও মারা হবে!!
লেখকঃ খবির মিজানুর
* প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব। প্রবাস টাইম-এর সম্পাদকীয় নীতি/মতের সঙ্গে লেখকের মতামতের অমিল থাকতেই পারে। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য প্রবাস টাইম কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না।
আরও দেখুনঃ প্রবাসীদের উদ্দেশ্যে ভিপি নুরের লাইভ
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post