সালতানাত অব ওমান। তেল সমৃদ্ধ এ দেশটি মধ্যপ্রাচ্যের সবচে বেশী বৈচিত্র্যপূর্ণ ও পরিবেশের অধিকারী। আরব বিশ্বের প্রাচীনতম স্বাধীন রাষ্ট্র টি ১৯৭০ সাল পর্যন্ত মাস্কাট এবং পরে ওমান নামে পরিচিতি লাভ করে। সেসময় কৃষক আর জেলেদের দেশ হিসেবে পরিচিত ওমান। তখন অবকাঠামো বলতে তেমন কিছুই ছিল না। বাইরের পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন ওমান তখন দারিদ্র্য পীড়িত একটি দেশ। ১৯৭০ সালের ২২ জুলাই সুলতান কাবুস আনুষ্ঠানিকভাবে যখন তার পিতার নিকট হতে ক্ষমতা গ্রহণ করেন, তখন ওমান জুড়ে ছিল মাত্র ৩টি স্কুল। সাড়া দেশে ছিলো না একটি ভালো হোটেল। খাবার পানির অভাব ও যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল খুবই খারাপ।
কিন্তু সেই গরিব ওমান আজ আরব বিশ্বের একটি আধুনিক ধনি রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত। উন্নত অবকাঠামো আর নাগরিকদের সচ্ছল জীবন যাপনের জন্য ওমান অন্যতম সুখী আর শান্তিপূর্ণ একটি দেশ। ১৯৮৬ সালে প্রতিষ্ঠিত দেশের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় ‘সুলতান কাবুস বিন সাঈদ আল সাঈদ বিশ্ববিদ্যালয়’ বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যের গুরুত্বপূর্ণ বিদ্যাপীঠ। ওমানে বর্তমানে শিক্ষার হার ৯১.১ ভাগ। তেলের পর পর্যটন, মৎস্য এবং খেজুর দেশটির আয়ের অন্যতম উৎস। পৃথিবীর মধ্যে ওমানি ঘোড়া বেশ জনপ্রিয়।
দেশটির আয়তনে বিশাল হলেও জনসংখ্যা মাত্র ৪৬ লাখের মত। যেখানে ওমানি জনসংখ্যা ২৮ লাখ। ২০২২ সালে দেশটির সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে, দেশটিতে প্রবাসী নাগরিক রয়েছে ১১ লাখের বেশি। যার মধ্যে বাংলাদেশী, ভারত, পাকিস্তান ও ইরান থেকে আগত বিদেশী কর্মী। বর্তমানে দেশটিতে প্রায় সাড়ে ছয় লাখ বাংলাদেশী প্রবাসী রয়েছেন।
ওমানের আকর্ষণীয় পর্যটন স্থলসমূহের মধ্যে রয়েছে মনোমুগ্ধকর প্রকৃতি, সৈকত, প্রাচীন বাজার, দুর্গ, প্রাচীন বসতি, স্তম্ভ এবং জাতিসংঘের ইউনেস্কো স্বীকৃত ঐতিহ্য এলাকাসমূহ। দর্শনার্থীরা ভ্রমণ, পাহাড়ে আরোহণ কচ্ছপ ডলফিন ও পাখি দর্শন এবং মরুভূমিতে সাফারিসহ বিভিন্ন আনন্দ দায়ক কর্মকান্ডে অংশ নিতে পারেন। ইউনেস্কো ওমানের দক্ষিণাঞ্চলীয় সালালাহ নগরী এবং বহু প্রাচীন নিদর্শন স্থল বিশ্ব ঐতিহ্য এলাকা হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে।
ওমান একটি মুসলিম দেশ, তবুও জনসংখ্যার প্রায় ১৩% হিন্দু ধর্মের মানুষ বসবাস করে ওমানে। প্রায় তিন-চতুর্থাংশ মুসলমানদের পড়াশোনার জন্য অনেক বিদ্যালয় রয়েছে। অভিবাসী হিসেবে খ্রিস্টান, বৌদ্ধ, ইহুদি, হিন্দু ধর্মের মানুষ ওমানে বসতি স্থাপন করে বসবাস করছে। শান্তিপূর্ণ এই দেশটিতে খুন, খারাবি, হামলা, বিক্ষোভ এইধরনের কোন সংবাদ দেখা যায়না বললেই চলে। দেশটি এতোটাই নিরাপদ যে, গভীর রাতে কোটি টাকা নিয়ে যাতায়াত করতেও ভয় নেই।
এমনকি রাতে নির্জন পথে মেয়েরাও গাড়ি নিয়ে যেতে পারেন নির্ভয়ে। লোকমুখে শুনা যায় দেশটির সালালাহ অঞ্চলে এবং আদি ওমানিদের ঘরে অবিবাহিত মেয়ে থাকলে বাড়ির ছাদে লাল পতাকা টানিয়ে দেওয়া হতো। অর্থাৎ কোনো ওমানির যদি ৪ টি মেয়ে থাকে, তাহলে তার বাড়ির ছাদে ৪ টি লাল পতাকা উড়ত। মেয়েদের বিয়ে হয়ে গেলে আবার সেই পতাকা নামিয়ে ফেলা হতো। দেশটিতে বিয়ে করতে বেশ অর্থ খরচ করতে হয় ছেলেদের। ধর্মীয় এবং রাষ্ট্রীয় আইন অনুযায়ী একজন ছেলেকে দেন মোহর পরিশোধ করে এরপর বিয়ে করতে হয়।
আরো পড়ুন:
ছুটিতে দেশে এসে সৌদি প্রবাসীর মৃত্যু
বেড়েছে প্রবাসী আয়, রিজার্ভ ৩৭ বিলিয়ন ডলার
হুন্ডিতে টাকা নিলে বিপদে পড়বেন প্রবাসীর স্বজন
মৃত্যুকূপ পাড়ি দিয়ে ইতালিতে পৌঁছেছে ৩৮ বাংলাদেশি
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post