সাদেক রিপন, কুয়েত প্রতিনিধিঃ
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে কিংবা করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তির লাশ দাফনে স্বজনদের অবহেলার খবর প্রায়ই গণমাধ্যমে উঠে আসছে। এই ব্যক্তিগুলো তাদের জীবদ্দশায় হয়তো কখনো কল্পনাও করেননি যে মৃত্যুর পর তাদের লাশের পাশে কান্না করার মতো কেউ তো থাকবেনই বরং তাদের মরদেহ নিয়ে তৈরি হবে জটিলতা।
এমনই এক নিষ্ঠুর ও অমানবিক ঘটনার শিকার হলেন চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার ৫নং ওসমান পুর ইউনিয়নের সাহেবপুর কালা বক্স বাড়ির কুয়েত প্রবাসী ছালেহ আহমদ। খোলা আকাশের নিচে দিনভর বৃষ্টিতে ভিজে রোদে শুকিয়েছে এই প্রবাসীর মরদেহ, ছিলোনা কোন আত্মীয়স্বজন এমনকি আপনজন। দিন শেষে খবর পেয়ে ছুটে এসে দাফন কাফন সম্পন্ন করেন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন শেষ বিদায়ের বন্ধু সংগঠনের সদস্যরা।
যেই পরিবারের কথা চিন্তা করে নিজের সুখ আর স্বাদ বিসর্জন দিয়ে হাড় ভাঙ্গা পরিশ্রম করেছিলো বিদেশের মাটিতে। নিজের সুখ আর আনন্দের সময় টুকু প্রবাস নামের দেয়াল বিহীন জেলখানায় কাটিয়ে দিয়েছিলো। সেই প্রবাসীর মরদেহ দাফনে পাশে ছিলোনা পরিবারের কেউ!
যানা গেছে, করোনায় মৃত্যু ছালেহ আহমদ দীর্ঘদিন কুয়েতে ছিলেন। প্রবাস জীবন শেষে দুই বছর আগে দেশে চলে আসেন। দেশে এসে পরিবার নিয়ে চট্টগ্রাম শহরে থাকতেন। প্রাণঘাতী করোনায় গত ৩জুন চট্টগ্রামে মারা যায় ছালেহ আহমদ। তার মৃত্যুর পর দাফন কাফনে মরদেহের সাথে পরিবারের কোন সদস্য নিজ স্ত্রী এমনকি সন্তানও আসেনি। বুধবার ভোরে মৃত্যুর বড় ভাই নুর আহম্মদ মরদেহ নিয়ে গ্রামের বাড়ীতে আসেন দাফন কাফনের জন্য।
নিজের আপনজন কেউ না আসার কারণে করোনার ভয়ে শেষবারের জন্য চোখের দেখাও দেখেতে আসেনি বাড়ীর অন্য লোকজন। সবাই চলে যায় অন্যত্র এমনকি আসেনি গ্রামবাসীও। দিনভর বাড়ীর উঠানে ঘরের কোণে মসজিদের খাটিয়ার উপর পড়ে ছিলো নিথর দেহ খানা। চাদরে ডাকা দেহ দিনভর বৃষ্টিতে ভিজেছে, আবার রোদে শুকিয়েছে।
আরও পড়ুনঃ বৈদেশিক মুদ্রার সর্বোচ্চ রেকর্ড করলেও প্রবাসীদের সঠিক মূল্যায়ন হচ্ছে না
সারাদিন বৃষ্টিতে ভিজে রোদে শুকানো মর্মান্তিক খবর পেয়ে মিরসরাই উপজেলার সম্প্রতি করোনা পরিস্থিতিতে গঠিত শেষ বিদায়ের বন্ধু নামের সংগঠন এসে দাফন কার্য সম্পন্ন করে। শেষ বিদায় বন্ধু সংগঠনের উদ্যোক্তা মিরসরাই প্রেস ক্লাবের সভাপতি নুরুল আলম বলেন, যেই পরিবার যাদের জন্য এত বছর এত কিছু করলো নিজের সবকিছু বিলিয়ে দিলো, আজ সেই মানুষটার সঙ্গে শেষ সময়ে এমন আচরণ কারোই কাম্য নয়। তিনি আরও জানান, মিরসরাইয়ে যদি কোন মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান, তার দাফন কাফন সামাজিক ভাবে অনিচ্ছা প্রকাশ করে তাহলে আমাদের খবর দিলে দাফন কাফনের ব্যবস্থা করবো। আমরা ধর্মীয় রীতিনীতি নিয়ম অনুযায়ী স্বাস্থ্য সুরক্ষা বজায় রেখে দাফন কাফনের ব্যবস্থা করবো।
https://www.youtube.com/watch?v=j8h_tu4CmCY
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post