করোনাকালীন এই সময়ে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে অনেক প্রবাসীর মৃত্যু হয়েছে। এদের অধিকাংশই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। প্রবাসে একজন প্রবাসীর মৃত্যুর পর সাধারণত দেখা যায় দীর্ঘদিন তার মরদেহ মর্গে পরে থাকে। প্রবাস থেকে একটি মরদেহ দেশে পাঠাতে বিভিন্ন ধরনের কাগজপত্রের প্রয়োজন হয়, এছাড়াও প্রয়োজন পরে বিপুল পরিমাণ অর্থের। এসবকিছু মিলিয়ে একজন প্রবাসীর বাস্তব চিত্র তুলে ধরেছেন ওমান প্রবাসী লেখক মোহাম্মদ গোলাম রব। আমাদের প্রবাস টাইমের পাঠকদের জন্য হুবহু তার লেখাটি তুলে ধরা হইলো:
“গত এপ্রিলে আমি ফেসবুকে অ্যালান করেছিলাম, বলতে পারেন ওসিয়ত করেছিলাম যে, এ যাত্রা যদি মৃত্যুবরণ করি আমার লাশটি যেন ওমানে দাফন করা হয়, কারণ আমি ওমান প্রবাসী বাংলাদেশি।
আমি চাই না প্রবাসে আমার মৃত্যুর পরে, পায়ের বুড়ো আঙুলে একটি মৃত্যুর টোকেন নিয়ে হাসপাতালের হিমঘরে বাংলাদেশের ফ্লাইটের অপেক্ষায় পচতে থাকি মাসের পর মাস। এটা আমার একটি প্রিভেন্টিভ অ্যাকশন বা ওসিয়ত। আমি চাই না, প্রবাসে আমার লাশের জন্য আমার পরিবারের মধ্যে একটি দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হোক। এইজন্য আমি আমার স্ত্রী আমার মা এবং প্রবাসে কাছের বন্ধুদের সঙ্গে আমার আশার কথা জানিয়েছি।
বিভিন্ন খবরে প্রকাশ, করোনা ভাইরাস ও হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিন প্রবাসী বাংলাদেশি কর্মীর মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে। বর্তমানে ফ্লাইট বন্ধ থাকায় বাংলাদেশিদের লাশ জমা হচ্ছে বিভিন্ন হাসপাতালের হিমঘরে। পরিবারের সম্মতি না পাওয়ায় স্থানীয়ভাবে লাশগুলো দাফনও করা যাচ্ছে না। সত্যিই আমি অবাক, কিসের আশায়, কিসের নেশায় দেশের ঐ রক্তচোষাগুলো স্থানীয়ভাবে লাশগুলো দাফনের সম্মতি দিচ্ছে না!
তারা কি দাফনের আগে মরা মুখটি একবার দেখতে চান? দেশে নিয়ে লাশ দাফনে সোয়াব বেশি? নাকি, বাপ-দাদার কবরের পাশে কবর দিয়ে ধন্য হবেন?
আসলে দেশে প্রবাসীদের ভালোবাসার রক্তচোষাদের লাশের ওপর কোনো ফিলিংস না থাকলেও লাশের সঙ্গে যে দুটো ব্যাগ ছাড়াও আরও নজর থাকবে। কোম্পানি কত টাকা দিয়েছে? ব্যাগের মধ্যে কী কী আছে? মৃত্যুর পূর্বে ইন্সুরেন্স ছিল কিনা? প্রবাসী মন্ত্রণালয় থেকে কত টাকা পাওয়া যাবে? বিদেশের ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে কত টাকা ছিল? ইত্যাদি ইত্যাদি অনেক কিছু।
আমাদের দেশে ব্যাপকভাবে যে প্রথাটি চালু আছে তা হলো, সঙ্গত কারণ ছাড়াই অনর্থক লাশ কাফন-দাফন করার ক্ষেত্রে বিলম্ব করা হয়। ছেলে-মেয়ে, আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে যদি কেউ দেশের বাইরে গিয়ে থাকে, তাহলে তাদের দেশে ফেরা পর্যন্ত লাশ দাফন করা হয় না। অনেক সময় দেখা যায় ভিসা জটিলতার কারণে লাশ দেশে ফিরতে অনেক দেরি হয়। এতদিন পর্যন্ত লাশ কবরস্থ করা হয় না। কিন্তু আত্মীয়-স্বজনের একটি লিখিত সম্মতিতেই এই দেশের ইসলামিকভাবে তার লাশ দাফন কাফন করা যেতে পারে।
কিন্তু লাশ কাফন-দাফনের ক্ষেত্রে এ ধরনের বিলম্ব করার কোনো অনুমতি ইসলামে নেই। আর এটা জানার জন্য এখন আর কোনো বিজ্ঞ আলেমের কাছে যাওয়ার প্রয়োজন নাই। বরং রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্পষ্টভাষায় বিলম্ব করা থেকে নিষেধ করেছেন। অনেক সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।
আরও পড়ুনঃ ওমানে বৃষ্টির কারণে বেড়েছে বিপজ্জনক সাপের উপদ্রব
আর এজন্য প্রবাসীরাই দায়ী। কারণ মৃত্যুর পূর্বে সে নির্দিষ্টভাবে কোনো ওসিয়ত করে যায় না। বর্তমান প্রেক্ষাপটে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে প্রবাসী মুসলমানদের উচিত হবে, মৃত্যুর পূর্বেই আত্মীয়-স্বজনদেরকে ওসিয়ত করা যে, যদি মধ্যপ্রাচ্যে মৃত্যু হয়, অতি দ্রুত যেন আরব দেশেই দাফন কাফন সম্পন্ন করা হয়। বাংলাদেশ নিয়ে দাফন করার চাইতে, আরবদেশে দাফন করা কি বেশী উত্তম নয়? আল্লাহ তা’আলা আমাদেরকে সঠিক বুঝ দান করুন। আমীন
লেখক: মোহাম্মদ গোলাম রব, ওমান প্রবাসী
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post