মধ্যরাতে পার্লামেন্টের স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারের পদত্যাগের পর অনাস্থা ভোটে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর পদ হারান ইমরান খান। শনিবার মধ্যরাতে পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজের (পিএমএল-এন) জ্যেষ্ঠ সাংসদ ও প্যানেল স্পিকার আয়াজ সাদিকের সভাপতিত্বে অনাস্থা ভোটে হেরে পাকিস্তানের সাত দশকের কোনো প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার মেয়াদ পূর্ণ করতে না পারার ইতিহাসের অংশ হলেন সাবেক এ ক্রিকেট তারকা।
ইমরানের বিদায়ের খবরে পার্লামেন্টে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন বিরোধীরা। এরইমধ্যে হেলিকপ্টারে করে ইসলামাবাদ ছেড়েছেন ইমরান।
পাকিস্তানের আর্থিক দুরবস্থা ও ভুল পররাষ্ট্রনীতির অভিযোগে ইমরানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনে বিরোধী দলগুলো। তবে এ প্রস্তাবকে ‘অসাংবিধানিক’ আখ্যা দিয়ে ৩ এপ্রিল তা খারিজ করে দেন জাতীয় পরিষদের ডেপুটি স্পিকার কাসিম খান সুরি।
সেদিনই প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে জাতীয় পরিষদ ভেঙে দেন প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি। এ পরিস্থিতিতে স্বপ্রণোদিত হয়ে নোটিশ দেন সুপ্রিম কোর্ট। বিরোধীরাও আদালতের দ্বারস্থ হন। টানা পাঁচ দিন শুনানি শেষে সুপ্রিম কোর্ট ৭ এপ্রিল অনাস্থা প্রস্তাব খারিজ ও জাতীয় পরিষদ ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্তকে অসাংবিধানিক বলে ঘোষণা করেন এবং অনাস্থা প্রস্তাবের ওপর ভোট আয়োজনের নির্দেশ দেন।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা মেনে দেশটির সংসদের নিম্নকক্ষ জাতীয় পরিষদের স্পিকার আসাদ কায়সারের সভাপতিত্বে শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় অধিবেশন শুরু হয়। দিনভর চলে নাটকীয়তা। কয়েক দফায় অধিবেশন স্থগিত করা হয়।
পাকিস্তানের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষের স্পিকার আসাদ কায়সার গতকাল রাতে পদত্যাগ করেছেন এবং তিনি বলেন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে ক্ষমতাচ্যুত করার বিদেশি ষড়যন্ত্রের অংশ হতে পারবেন না। পরে দায়িত্ব নেন আয়াজ সাদিক। এরপর শুরু হয় ভোটগ্রহণ।
এদিকে, পাকিস্তানের বর্তমান ইস্যু নিয়ে বাংলাদেশের সাংবাদিক ও কলামিস্ট আশরাফুল ইসলাম রানা বলেন, “পাকিস্তান এমন দেশ যাকে নিয়ে বাংলাদেশে বসে আন্তর্জাতিক দৃষ্টির বিশ্লেষণ লেখা কঠিন। পাকিস্তান নাম নিলেও এদেশের কিছু সম্মানিত মানুষ জামায়াত-শিবির ভেবে ভুল করে। তারা সাধারণত দেশটিকে শুধুই একাত্তরের দৃষ্টিতে ব্যাখ্যা করে।
আমি তাদের চেতনাকে অবজ্ঞা করি না। পাকিস্তান যেহেতু বাংলাদেশে বর্বরতা চালিয়েছে সেহেতু এটি হতে পারে। কিন্তু আন্তর্জাতিক দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ চেতনা মিলিয়ে ফেলা কতটুকু যৌক্তিক?
সাংবাদিক ও কলামিস্ট আশরাফুল ইসলাম রানাখুব বিনয়ের সঙ্গে বলি, দয়া করে বোঝার চেষ্টা করুণ। পৃথিবীতে বাংলাদেশ, ইন্ডিয়া, ক্যানাডা, ব্রাজিল, সোমালিয়া, সুইডেন, জাপান যেমন একটি করে দেশ তেমনি পাকিস্তানও একটি দেশ। আর দেশ হিসেবে বিশ্বের কাছে প্রত্যেকেরই নিজস্ব গুরুত্বের ইনডিকেটর রয়েছে। ভৌগোলিক ও কৌশলগত ইনডিকেটরের কারণে কারও গুরুত্ব কিছুটা বেশি।
পাকিস্তান তেমনই একটি দেশ। এর ভূ-কৌশলগত অবস্থান, সামরিক শক্তি, পারমাণবিক অস্ত্র, সমুদ্রসীমা ইত্যাদি কারণে বিশ্বে দেশটির গুরুত্ব বাংলাদেশের তুলনায় বেশি। তাই বলে বাংলাদেশ বিশ্বের কাছে গুরুত্বহীন ব্যাপারটা তা নয়। ভিন্ন ইন্ডিকেটরে আমাদের গুরুত্ব পাকিস্তানের চাইতে বেশিও হতে পারে। যেমন আমাদের তৈরি পোশাক শিল্প। আমি যেহেতু শুধু ভূ-কৌশলগত দিকটা নিয়ে আলোচনা করছি কাজে সেটাই বোঝার চেষ্টা করুণ।
পাকিস্তান কিভাবে বিশ্ব পরাশক্তিগুলোর কাছে অনেকের চাইতে গুরুত্বপূর্ণ। ভৌগোলিকভাবে পৃথিবীর কয়েকটি ছোট-বড় দরজা রয়েছে। তার মধ্যে পাকিস্তান একটি বড় দরজা। দেশটি পৃথিবীর সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল মধ্যপ্রাচ্য এবং অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল দক্ষিণ, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কেন্দ্রে অবস্থিত। আবার আমেরিকার বন্ধু ইন্ডিয়া, শত্রু ইরান, আফগানিস্তান ও চীনের মাঝখানে পাকিস্তান। হয়তো আমেরিকা আফগানিস্তান আক্রমণের সাহসই করতো না যদি পাকিস্তান তার সমুদ্র এবং মাটি মার্কিন সেনাদের ব্যবহার করতে না দিতো।
একইভাবে পাকিস্তানকে ছাড়া ইরান আক্রমণ করা আমেরিকার পক্ষে প্রায় অসম্ভব। আবার চীনের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় লড়তে পাকিস্তানকে প্রয়োজন আমেরিকার। এভাবে ইন্ডিয়াকে বশ করে রাখতে, পারমাণবিক বোমার কারণে, আরব সাগর ও ওমান সাগরে আধিপত্য বজায় রাখতে পাকিস্তানকে প্রয়োজন আমেরিকার। এরকম অনেক কারণ রয়েছে যার জন্য পাকিস্তানকে পরাশক্তি আমেরিকার ভীষণ প্রয়োজন।
একইভাবে চীনের দিক থেকে, ভারতের দিক থেকে, রাশিয়ার দিক থেকে, মধ্যপ্রাচ্যের দিক থেকে পাকিস্তানের আলাদা আলাদা গুরুত্ব রয়েছে। সব লিখতে গেলে ঢের সময় লাগবে। আর পুরো প্রক্রিয়াটি লিখতে গেলে প্রচুর কথা খরচ হবে। তবে তার প্রয়োজন দেখছি না, সম্মানিত পাঠকগণ নিশ্চয় বুঝতে সক্ষম হবেন।
বাংলাদেশি হিসাবে আমাকে যদি ১৯৭১ সালের শত্রুতা ধরে আজকের পাকিস্তানকে বিশ্লেষণ করতে হয় তাহলে একজন আমেরিকান, একজন জার্মান একজন জাপানি দেশটিকে বিশ্লেষণ করবে কিসের ভিত্তিতে? জাপানের সঙ্গে তো পাকিস্তানের বিবাদ নেই।
এরপরও কি তারা ১৯৭১ সাল ধরে পাকিস্তানকে ঘৃণা করবে? দেশটির মূলা নিয়েও লিখতে গেলে সেই ঘৃণার ভূমিকা টেনে আনবে? একটি দেশ নিয়ে লেখা আন্তর্জাতিক দৃষ্টিভঙ্গি বিশ্বের সকল মানুষের দৃষ্টিভঙ্গিতে লেখা উচিৎ কি-না? লেখা উচিৎ হলে দু একটি কথা পাকিস্তানের পক্ষে যাওয়া স্বাভাবিক নয় কি? গেলে সেটি একাত্তরের চেতনা বিরোধী হয় কি করে?
আর তাছাড়া একটি দেশের প্রতি আরেকটি দেশ এতো দীর্ঘ সময় এতো ঘৃণা পুষবেই বা কেন? কই ব্রিটিশদের তো আমরা একটুও ঘৃণা করি না! ইন্ডিয়ানরাও করে না। উলটো শ্রদ্ধা করে, ভক্তি করে। ঘৃণা শব্দটি কখনোই মানুষের ভাষা হতে পারে না। এমনকি আমি শয়তানকে ঘৃণারও বিরোধী।
ভিয়েতনামে আমেরিকা টানা ১০ বছর বোমা ফেলেছে, জাপান বিশ্বের একমাত্র দেশ যেখানে দুটি পারমাণবিক বোম মেরেছে অথচ দুটি দেশই এখন আমেরিকার বিশ্বস্ত বন্ধু। জার্মানিও তাই। বাংলাদেশের দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদরা নিজেদের ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে পাকিস্তান ঘৃণার বিজ সমাজে সুকৌশলে বপন করে দিয়েছে। দেশটি তাদের কাছে একটি ট্রাম-কার্ডও বটে। বিরোধী মত দমন করতে এই ট্রাম-কার্ড তারা প্রতিদিন চেলে যাচ্ছে।”
আরো পড়ুন:
সবাই আমার স্ত্রীকে চোরের বউ বলে আমাকে জামিন দেন
ওমানে বাড়লো প্রবাসীদের ওয়ার্ক পারমিটের মেয়াদ
ওমানে মর্মান্তিক পাহাড়ধসে আরো এক প্রবাসীর মরদেহ উদ্ধার
তুরস্কের হায়া সোফিয়ায় ৮৮ বছরে প্রথম তারাবি হতে চলেছে
হিজাব ইস্যুতে মেয়েদের টার্গেট করা হচ্ছে: মিস ইউনিভার্স
প্রবাসীদের মাঝে সহজ শর্তে ঋণ দেওয়া শুরু
ওমান থেকে টাকার মেশিনটি বাক্সবন্দী হয়ে দেশে ফিরছে!
ওমানে ব্যাংক থেকে টাকা চুরির অভিযোগে চার প্রবাসী গ্রেপ্তার
ওমানে পাথর ধ্বসের পর এবার মাটিধসে এক প্রবাসী নিহত
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post