ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় বিতরণ করা ত্রাণসামগ্রীর মধ্যে মাদক বড়ি পাওয়ার ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। গাজার সরকারি গণমাধ্যম কার্যালয় জানায়, মার্কিন ও ইসরায়েলি ত্রাণকেন্দ্রের মাধ্যমে সরবরাহকৃত আটার বস্তার ভেতরে পাওয়া গেছে ‘অক্সিকোডোন’ নামের একটি অত্যন্ত শক্তিশালী ও আসক্তিকর ব্যথানাশক ওষুধ।
বিষয়টি নিশ্চিত করে গাজা কর্তৃপক্ষ জানায়, অন্তত চারজন প্রত্যক্ষদর্শীর কাছ থেকে প্রমাণ পাওয়া গেছে, যারা বিতরণ করা ত্রাণের প্যাকেটে এই বড়ি পেয়েছেন। এমনকি কিছু ক্ষেত্রে মাদক গুঁড়ো করে অথবা দ্রবীভূত করে ইচ্ছাকৃতভাবে আটার সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, অক্সিকোডোন সাধারণত ক্যানসার রোগীদের তীব্র ব্যথা কমাতে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু এটি অত্যন্ত আসক্তিকর এবং অতিমাত্রায় গ্রহণ করলে শ্বাসকষ্ট, মানসিক বিভ্রম এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে।
আরও পড়ুন
ঘটনার পর সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া কিছু ছবিতে আটার ব্যাগের সঙ্গে মাদকের বড়ি দেখা গেছে। এ নিয়ে স্থানীয় এক ফার্মাসিস্ট ওমর হামাদ একে ‘গণহত্যার এক নিকৃষ্ট রূপ’ বলে আখ্যা দেন। অপরদিকে গাজার চিকিৎসক খলিল মাজেন আবু নাদা মন্তব্য করেছেন, ‘এই মাদক আমাদের সামাজিক চেতনা ধ্বংসের হাতিয়ার।’
গাজার গণমাধ্যম কার্যালয় এই ঘটনাটির জন্য ইসরায়েলকেই দায়ী করেছে। তাদের ভাষ্য, ‘ত্রাণের আড়ালে মাদক প্রবেশ করিয়ে গাজাবাসীকে ধ্বংসের পথে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।’
এদিকে বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে গাজায় সক্রিয় একটি মার্কিন-ইসরায়েলি সংস্থা — গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ)। সংস্থাটি বর্তমানে গাজায় ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে। তবে আন্তর্জাতিক ১৫টি মানবাধিকার ও আইনি সংস্থা এরইমধ্যে জিএইচএফের বিরুদ্ধে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির অভাবের অভিযোগ তুলে এর কার্যক্রম স্থগিতের দাবি জানিয়েছে।
গাজার স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, গত এক মাসে জিএইচএফ পরিচালিত কেন্দ্রগুলোর আশেপাশে ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৫১৬ ফিলিস্তিনি। ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম হারেৎজ প্রকাশ করেছে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর কয়েকজন সদস্য স্বীকার করেছেন, তারা ওই ত্রাণকেন্দ্রের আশেপাশে নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিদের লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছেন।
ঘটনা প্রসঙ্গে মিডল ইস্ট আই জিএইচএফের কাছে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলেও সংস্থাটি এখনো কোনো বিবৃতি দেয়নি।