বিশ্ব চিকিৎসা বিজ্ঞানে নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা হলো। প্রথমবারের মতো জেনেটিক্যালি মডিফাইড (জিএম) শূকরের ফুসফুস মানবদেহে প্রতিস্থাপন করেছেন চিকিৎসকরা। যদিও প্রতিস্থাপিত ফুসফুস মাত্র নয় দিন কার্যকর ছিল, বিশেষজ্ঞরা এটিকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হিসেবে দেখছেন। বিষয়টি সম্প্রতি দ্য গার্ডিয়ান-এর এক প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয়েছে।
চিকিৎসা বিজ্ঞানে দীর্ঘদিন ধরেই অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ প্রতিস্থাপন একটি বড় চ্যালেঞ্জ। হৃদপিণ্ড, ফুসফুস, কিডনি বা যকৃত বিকল হলে রোগীর জীবন বাঁচাতে প্রতিস্থাপনের বিকল্প নেই। কিন্তু বিশ্বজুড়ে অঙ্গের চাহিদা সরবরাহের তুলনায় বহুগুণ বেশি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে, মাত্র ১০ শতাংশ রোগী প্রয়োজনীয় অঙ্গ প্রতিস্থাপনের সুযোগ পান। এই ঘাটতি পূরণে চিকিৎসকরা ‘জেনোট্রান্সপ্লান্টেশন’ কৌশলের দিকে ঝুঁকছেন, যেখানে এক প্রজাতির অঙ্গ অন্য প্রজাতির শরীরে প্রতিস্থাপন করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সিটির এনওয়াইইউ ল্যাঙ্গোন ট্রান্সপ্লান্ট ইনস্টিটিউটে সম্প্রতি একজন ব্রেইন-ডেড রোগীর শরীরে শূকরের জিএম ফুসফুস প্রতিস্থাপন করা হয়। গবেষণায় নেতৃত্ব দেন সার্জন ডা. জাস্টিন চ্যান। তিনি জানান, প্রতিস্থাপনটি দীর্ঘমেয়াদে সফল হয়নি, তবে এটি ভবিষ্যতের জন্য আশাব্যঞ্জক অগ্রগতি। তার মতে, এই পরীক্ষার মাধ্যমে বোঝা গেছে মানবদেহে শূকরের ফুসফুস টিকে থাকার জন্য এখনও আরও গবেষণা প্রয়োজন।
আরও
এই মতের সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন যুক্তরাজ্যের নিউক্যাসল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুসফুস বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক অ্যান্ড্রু ফিশার। তিনি বলেছেন, “বিশ্বজুড়ে লক্ষ লক্ষ রোগী অঙ্গ বিকলতার কারণে মৃত্যুর মুখোমুখি হন, অথচ প্রতিস্থাপনের সুযোগ পান খুব অল্পসংখ্যক মানুষ। শূকরের অঙ্গ প্রতিস্থাপন যদি কার্যকর করা যায়, তবে এটি হবে অসংখ্য রোগীর জন্য নতুন আশার আলো।”
বিশেষজ্ঞদের মতে, ফুসফুস মানুষের সবচেয়ে জটিল ও স্পর্শকাতর অঙ্গগুলোর একটি। এটি শরীরে অক্সিজেন সরবরাহ করে, আবার রোগজীবাণুর প্রবেশ ঠেকাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এই কারণেই ফুসফুস প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে সফলতা পাওয়া তুলনামূলকভাবে কঠিন। তবুও সাম্প্রতিক পরীক্ষাটি চিকিৎসা বিজ্ঞানে এক বড় পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, যা ভবিষ্যতে গুরুতর রোগীদের জন্য নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত করতে পারে।











