প্রবাসীদের লুটের ঘটনায় ৫ ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী’ গ্রেপ্তার

গ্রেফতার

রাজধানীর সন্নিকটে রূপগঞ্জে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয় ব্যবহার করে প্রবাসী ব্যবসায়ীদের একটি দলের ওপর দুর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এই চাঞ্চল্যকর ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে একজন কর্মরত পুলিশ কনস্টেবল, একজন চাকরিচ্যুত পুলিশ সদস্য এবং নৌবাহিনীর একজন বরখাস্ত সদস্যসহ মোট পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শনিবার ভোর থেকে রাত পর্যন্ত রূপগঞ্জের পূর্বাচল ও মিরপুর ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় বিশেষ অভিযান চালিয়ে এই দুষ্কৃতকারীদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময়, ডাকাতদের কাছ থেকে লুণ্ঠিত বিপুল পরিমাণ মালামাল উদ্ধার করা হয়েছে।

গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে রয়েছেন – চাকরিচ্যুত পুলিশ কনস্টেবল কাজল ইসলাম, কর্মরত পুলিশ কনস্টেবল রুবেল এবং বরখাস্তকৃত নৌ সদস্য রিয়াজুল জান্নাত। পুলিশের পক্ষ থেকে গ্রেফতার হওয়া অপর দুই সদস্য সিয়াদাত রাজ ও রহমত আলীর বিস্তারিত পরিচয় তাৎক্ষণিকভাবে প্রকাশ করা হয়নি।

ডাকাতির শিকার হওয়া প্রবাসী জসিমউদ্দিন জানান, তিনি কক্সবাজারের বাসিন্দা এবং দীর্ঘদিন ধরে দুবাই থেকে বিভিন্ন পণ্য আমদানি করে ঢাকার নিউমার্কেট এলাকায় ব্যবসা করছেন। জসিমউদ্দিন এবং তার দুই বন্ধু সালাউদ্দিন ও শহীদ, দুবাই ফেরত যাত্রী ছিলেন। তিনি জানান, দুবাই থাকাকালীন মিরপুরের সজিব নামের এক ব্যক্তির সাথে তাদের পরিচয় হয়, যে পরবর্তীতে ব্যবসায় তাদের সাথে যুক্ত হয়। গত বৃহস্পতিবার ভোরে তারা একসঙ্গে মালামাল নিয়ে দেশে ফেরেন।

বিমানবন্দর থেকে প্রাইভেটকারে নিউমার্কেটের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার পর, নিউমার্কেটের কাছে পৌঁছালে তাদের সাথে থাকা সজিবের সহযোগিতায় ৮-৯ জনের একটি দল, নিজেদেরকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য পরিচয় দিয়ে তাদের গতিরোধ করে। অবৈধ মালামাল বহনের অভিযোগ তুলে তাদেরকে থানায় নিয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়। জসিমউদ্দিন ও তার বন্ধুদের সাথে প্রথমে তর্কবিতর্ক হলেও, একপর্যায়ে বলপূর্বক তাদেরকে পুলিশের ব্যবহৃত একটি ডাবল কেবিন পিকআপ ও একটি প্রাইভেটকারে তোলা হয়। অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, এই সুযোগে সজিব অন্য একটি গাড়িতে কৌশলে পালিয়ে যায়। তবে, থানায় না নিয়ে গিয়ে, মিরপুর ও পূর্বাচল ৩০০ ফিট সড়কের মাঝামাঝি একটি নির্জন স্থানে নিয়ে যাওয়া হয় এবং মুক্তিপণ হিসেবে ৫০ লক্ষ টাকা দাবি করা হয়। মুক্তিপণ দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাদের ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানো হয়।

পরবর্তীতে, পুলিশের তৎপরতায় মিরপুর ক্যান্টনমেন্ট এলাকা থেকে লুণ্ঠিত মালামালসহ তিন ডাকাত সদস্যকে আটক করা হয়। অন্যদিকে, পূর্বাচলের হাবিব নগর এলাকায় স্থানীয় জনতা ও পুলিশের যৌথ অভিযানে কনস্টেবল রুবেলসহ আরও দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে, র‍্যাব-১ তাদেরকে রূপগঞ্জ থানায় হস্তান্তর করে। উদ্ধারকৃত মালামালের মধ্যে রয়েছে ১৬ ভরি স্বর্ণালঙ্কার, ৭টি ল্যাপটপ, ২৮টি মোবাইল ফোন, ৫৩ কার্টুন সিগারেট, ৫৯ কৌটা গুঁড়া দুধ, ৭৮ সেট থ্রিপিস, ৩৮৪টি প্রসাধনী সামগ্রী। এছাড়াও, ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত পুলিশের একটি ডাবল কেবিন পিকআপ, একটি প্রাইভেটকার, একটি হ্যান্ডকাপ, একটি ওয়াকিটকি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পোশাক জব্দ করা হয়েছে।

রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লিয়াকত আলী জানান, এই সংঘবদ্ধ ডাকাত চক্র দীর্ঘদিন ধরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে প্রবাসীদের টার্গেট করে মালামাল লুট করে আসছিল। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে পুলিশ কনস্টেবল রুবেল পুলিশ হেডকোয়ার্টারে কর্মরত ছিলেন এবং তিনি পুলিশের গাড়ি ব্যবহার করে ডাকাতির কাজে অংশ নিয়েছিলেন।

এই ঘটনায় রূপগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। ওসি লিয়াকত আলী আরও জানান, লুণ্ঠিত মালামালের অধিকাংশই উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে এবং পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এই চক্রের সাথে আরও কারা জড়িত, সে বিষয়ে তদন্ত চলছে।

 

আরও দেখুনঃ

whatsappচ্যানেল ফলো করুন

প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন news@probashtime.com মেইলে।

Probashir city web post