চীনে নারীর তুলনায় পুরুষের সংখ্যা অনেক বেশি হওয়ায় বিয়ের বাজারে বিরাজ করছে চরম সংকট। বিশেষ করে গ্রামীণ অঞ্চলে হাজার হাজার অবিবাহিত পুরুষ জীবনসঙ্গী খুঁজে পাচ্ছেন না। এই পরিস্থিতি এখন ভয়াবহ মানবিক সংকটে রূপ নিয়েছে। অনেকেই ‘বউ সংগ্রহ’ করতে ঝুঁকছেন বাংলাদেশ, নেপাল ও মিয়ানমারের মতো দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর দিকে।
এই প্রক্রিয়া একদিকে যেমন সামাজিক অসাম্য তৈরি করছে, অন্যদিকে তা রূপ নিচ্ছে ভয়ংকর মানবপাচারে। নারী পাচার, জোরপূর্বক বিয়ে ও নির্যাতনের ঘটনা আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে। সম্প্রতি ইন্ডিয়া টুডে এক প্রতিবেদনে জানায়, এই বাস্তবতায় বাংলাদেশে অবস্থিত চীনের দূতাবাস চীনা নাগরিকদের সতর্ক করে বলেছে, বাংলাদেশি নারী বিয়েতে যেন তারা জড়িয়ে না পড়েন। দূতাবাস একে ‘বিদেশি বউ কেনা’ বলেই আখ্যায়িত করেছে।
এই সংকটের শিকড় ১৯৮০’র দশকের চীনের ‘এক সন্তান নীতি’ ও ভ্রূণ নির্ধারণ প্রযুক্তির অপব্যবহানে। পুত্র সন্তানকে অগ্রাধিকার দেওয়ায় বিপুলসংখ্যক কন্যাশিশু গর্ভে নষ্ট করা হয়, যার ফলশ্রুতিতে দেশে বর্তমানে নারীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। সেই সময়ের পুরুষরা এখন বিয়ের উপযুক্ত হলেও দেশজ নারীর অভাবে তারা বাধ্য হচ্ছেন বিদেশমুখী হতে।
আরও পড়ুন
গবেষণা বলছে, এই ‘বিয়ে সংকট’ ব্যবহার করে পাচারকারীরা এখন দরিদ্র গ্রামাঞ্চলের নারীদের লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছে। উন্নত জীবন ও চাকরির প্রলোভনে তাদের চীনে নেওয়া হয়। সেখানে পাসপোর্ট কেড়ে নিয়ে সীমিত চলাচলের মধ্যে রাখা হয়। এরপর নারীদের ৫ হাজার থেকে ২০ হাজার ডলারে বিক্রি করে দেওয়া হয়—চেহারা, বয়স ও শিক্ষাগত যোগ্যতার ভিত্তিতে।
এই নারীরা প্রায়ই কোনো সম্মতি ছাড়া অবিবাহিত চীনা কৃষক বা শ্রমজীবী পুরুষদের সঙ্গে ‘বিয়ে’ করতে বাধ্য হন। এরপর সন্তান নেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হয়। পালাতে চাইলেই তাদের তুলে দেওয়া হয় স্থানীয় কর্তৃপক্ষের হাতে, যেখানে ‘অবৈধ অভিবাসী’ হিসেবে জেল ও নির্যাতনের শিকার হন তারা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ২০২০ থেকে ২০৫০ সালের মধ্যে চীনে প্রায় ৫ কোটি পুরুষ অবিবাহিত থেকে যাবেন। বিয়ের বয়স কমানোর মতো প্রস্তাব উঠলেও সমস্যার মূলে সমাধান আসছে না। বরং পাচার চক্র আরও শক্তিশালী হচ্ছে। মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ অনেক আগেই এই বিষয়টি নিয়ে সতর্ক করেছিল। এখন তা বাংলাদেশ ও নেপাল পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ায় বিষয়টি উদ্বেগজনক আন্তর্জাতিক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।