সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগনের একটি প্রতিবেদনে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, চীন ভারতীয় প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলএসি)-তে এখনও ১.২ লাখ সশস্ত্র সেনা মোতায়েন রেখেছে। গালওয়ান সংঘর্ষের পর থেকে সেনাবাহিনী কমানোর কোনো উদ্যোগ নেয়নি বেইজিং। লাদাখ থেকে অরুণাচল পর্যন্ত বিস্তৃত সীমান্তজুড়ে চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মির (পিএলএ) বিশাল উপস্থিতি ভারতের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, চীনা সেনারা ট্যাঙ্ক, হাউইৎজার কামান, ভূমি থেকে আকাশ ক্ষেপণাস্ত্রসহ উন্নত সামরিক সরঞ্জাম নিয়ে প্রস্তুত রয়েছে। এলএসি বরাবর পিএলএর অন্তত ২০টি সম্মিলিত অস্ত্র ব্রিগেড মোতায়েন করা হয়েছে, যাদের বিভিন্ন কৌশলগত এলাকায় যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এই উপস্থিতি লাদাখ ও অরুণাচলের মতো অঞ্চলে চীনের কৌশলগত সুবিধা বৃদ্ধি করতে পারে।
চীনের পশ্চিম থিয়েটার কমান্ড এলএসি পর্যবেক্ষণ করে, যেখানে সামরিক পরিকাঠামোর উন্নয়ন ও আধুনিকায়ন চলছে। যদিও পিএলএর কিছু ইউনিট তাদের ছাউনিতে ফিরে গেছে, তবে এখনও বিপুল সংখ্যক সেনা সীমান্তে অবস্থান করছে।
আরও পড়ুন
পেন্টাগনের প্রতিবেদনে আরও উঠে এসেছে চীনের পরমাণু অস্ত্র বৃদ্ধির বিষয়। চীনের কাছে বর্তমানে প্রায় ৬০০ পরমাণু অস্ত্র রয়েছে এবং এটি ২০৩০ সালের মধ্যে ১০০০ ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। একইসঙ্গে দূরপাল্লার ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও অন্যান্য উন্নত সামরিক প্রযুক্তি নিয়েও কাজ করছে বেইজিং।
২০২০ সালের গালওয়ান সংঘর্ষের পর থেকে ভারত ও চীনের মধ্যে উত্তেজনা ক্রমশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ওই সংঘর্ষে ভারতের ২০ জন সৈন্য প্রাণ হারান এবং চীনও উল্লেখযোগ্য ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য একাধিকবার কূটনৈতিক আলোচনা হলেও সীমান্তে সেনা মোতায়েনের এই পরিস্থিতি এখনও সমাধান হয়নি।
চীন এই প্রতিবেদনকে ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছে। বেইজিংয়ের মুখপাত্র জানিয়েছেন, আমেরিকা ভুয়া তথ্য ছড়িয়ে ভারত-চীন সম্পর্ক নষ্ট করার চেষ্টা করছে। চীনের মতে, তাদের সামরিক প্রস্তুতি আত্মরক্ষার জন্য, যা কোনো আগ্রাসী মনোভাবের প্রতিফলন নয়।
এই পরিস্থিতিতে ভারতের প্রতিরক্ষা মহলে নতুন করে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। চীনের এই সামরিক উপস্থিতি ভারতের নিরাপত্তা কৌশলে কীভাবে প্রভাব ফেলবে, তা নিয়ে এখন গভীর উদ্বেগ বিরাজ করছে।