চট্টগ্রামের মনসুরাবাদ বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসে বড় করে লেখা রয়েছে, “অবাঞ্ছিত ব্যক্তির নিকট যাবেন না, প্রতারণার শিকার হবেন না।” কিন্তু বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কথা। পাসপোর্ট করতে আসা সাধারণ মানুষ দালালদের সাহায্য নিতে বাধ্য হচ্ছেন। তারা অভিযোগ করেছেন, দালাল ধরলে কাজ দ্রুত হয়, অথচ সরাসরি আবেদন করলে নানা হয়রানির শিকার হতে হয়। লাইনে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়ানো, সামান্য ভুলে বড় সমস্যা সৃষ্টি হওয়া এবং বিভিন্ন কাগজপত্রের জটিলতা—এসব কারণে ভুক্তভোগীরা দালালদের শরণাপন্ন হন।
তথ্যমতে, মনসুরাবাদ পাসপোর্ট অফিসে প্রতিদিন প্রায় ৮০০ থেকে ৯০০টি ফাইল জমা হয়, যার মধ্যে ৫৫০টির বেশি দালালের মাধ্যমে আসে। প্রতি ফাইলে ১৬০০ টাকা ঘুষ নেওয়া হয়, যার ফলে প্রতিদিন প্রায় ৮.৮ লাখ টাকা ঘুষ লেনদেন হয়। বছরে এই পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ২৩ কোটি টাকার ঘুষ। চান্দগাঁও আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসেও একই রকম চিত্র। সেখানে প্রতিদিন ৫০০ থেকে ৫৫০টি ফাইলের মধ্যে প্রায় ৩০০টি দালালদের মাধ্যমে জমা হয়। ফলে বছরে প্রায় ১২ কোটি টাকার ঘুষ লেনদেন হয়।
দালালদের প্রভাব এবং ঘুষ লেনদেনের বিষয়টি অত্যন্ত সুসংগঠিত। দালালরা আবেদন ফাইলে বিশেষ সাংকেতিক চিহ্ন ব্যবহার করেন, যা অফিসের কর্মকর্তারা সহজেই চিহ্নিত করেন। সরাসরি আবেদনকারীরা এই চিহ্ন ব্যবহার না করলে নানা অজুহাতে তাদের ফাইল ফিরিয়ে দেওয়া হয়। ফলে অনেকেই দালালের দ্বারস্থ হন, যাতে দ্রুত এবং ঝামেলাবিহীন পাসপোর্ট পাওয়া যায়।
এ অবস্থায় প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। পাসপোর্ট অফিসের পরিচালক দাবি করেছেন, তার অফিসে কোনো দালালের প্রবেশাধিকার নেই এবং প্রযুক্তিনির্ভর সেবার মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। তবে ভুক্তভোগীদের অভিজ্ঞতা বলছে, দালাল ছাড়া কাজ করাটা বেশ কঠিন। কোনো ভুল তথ্য থাকলে ফাইল ফেরত দেওয়ার বিষয়টি হয়রানি হিসেবে দেখা হয়।
এই পরিস্থিতিতে জনসাধারণের হয়রানি কমাতে এবং দুর্নীতি প্রতিরোধে পাসপোর্ট অফিসগুলোতে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার দাবি উঠেছে। নিয়মিত তদারকি, ঘুষ বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা, এবং সরাসরি আবেদনকারীদের সঠিক সহায়তা দেওয়ার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি কমানো সম্ভব। দীর্ঘমেয়াদে, প্রযুক্তির ব্যবহার আরও কার্যকর করতে পারলে এবং দালাল নির্ভরতা কমালে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post