বেশ কয়েক দিন ধরেই ওমানের ব্যারোমিটারের পারদ ঊর্ধ্বমুখী। অর্থাৎ বেড়েই চলছে দেশটির তাপমাত্রা। প্রচন্ড দাবদাহে পুড়ছে গোটা দেশ। সোমবার (৭-জুন) ওমান আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, দেশটির সুনাইনিয়াহ অঞ্চলে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৫০.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন ২২.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে দেশটির ধোফার অঞ্চলে।
দেশটিতে তাপমাত্রা আরো বাড়ার আভাস রয়েছে বলে আবহাওয়া বিভাগ সূত্রে জানা গেছে। বাতাসে অস্বাভাবিক আর্দ্রতা, সারাদিন কাঠফাটা রোদ। সব মিলিয়ে জনজীবন অতিষ্ঠ। তীব্র গরমে করোনার পাশাপাশি বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা ও রোগব্যাধি বাড়ছে, অন্যান্য বছরও দেখা গেছে, গরমের সময়ই মানুষের স্বাস্থ্য সমস্যা বেশি দেখা দেয়। তাই এ সময়ে সতর্ক হয়ে না চললে যেকোনো সময়ই অসুস্থ হয়ে পরার আশংকা রয়েছে।
দেশটির আবহাওয়ার পূর্বাভাস জানানো হয়, আজ ওমানের বেশিরভাগ এলাকায় আকাশ পরিষ্কার থাকবে। তবে ধোফার প্রদেশের পাহাড়ি ও উপকূলীয় অঞ্চলের আকাশ আংশিক মেঘাচ্ছন্ন থাকবে। এই এলাকাগুলোতে হালকা বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়াও আল-হাজর পর্বতমালা এবং ওমান সাগরের উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতেও বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
এই গরমে শিশুদের স্বাস্থ্যের দিকটি বিশেষভাবে ভাবতে হবে। শিশুদের জন্য বাইরের খাবার যথাসম্ভব এড়িয়ে ঘরে তৈরি টাটকা খাবার খাওয়াতে হবে। শিশুদের প্রতিদিন অন্তত চার থেকে ছয়বার প্রস্রাব হচ্ছে কি না তা দেখতে হবে। যদি কম হয়, সে ক্ষেত্রে পানি বা তরল খাবার বাড়িয়ে দিতে হবে। গায়ে র্যাশ ও ঘামাচি হতে পারে।
সে ক্ষেত্রে বিশেষ ওষুধের দরকার নেই। ঘাম হলে সঙ্গে সঙ্গে মুছে দিতে হবে এবং ঠান্ডা বা নিরাপদ পরিবেশে শিশুকে রাখতে হবে। প্রতিদিন গোসল ও দিনে দুই থেকে তিনবার শরীর মুছিয়ে দিতে হবে। এসময়ে নবজাতক ও ছয় মাসের কম বয়সী শিশুদের প্রতি বিশেষ যত্ন নিতে হবে। নবজাতকদের জন্য বুকের দুধ বারবার দিতে হবে। নরম ও পাতলা কাপড় পরাতে হবে।
এই গরমে বয়স্ক ব্যক্তিদেরও প্রয়োজন বাড়তি যত্নের। কারণ বয়স্ক ব্যক্তিদের মধ্যে বেশীরভাগই বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত যেমন-ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, এ্যজমা বা হাঁপানি রোগ, আথ্রাইটিস জনিত ব্যথা-বেদনা ইত্যাদি। তাছাড়াও প্রচন্ড গরমে বয়স্ক ব্যক্তিদের আরও যে সমস্যা দেখা দিতে পারে-শরীরের পানিস্বল্পতা বা ডিহাইড্রেশন, হিটস্ট্রোক, হজমের সমস্যা, ত্বকের সমস্যা ইত্যাদি।
গরমের কারণে সবচেয়ে বেশি যে সমস্যা হয়, তা হলো পানিস্বল্পতা। প্রচুর ঘামের কারণে পানির সঙ্গে সঙ্গে শরীর থেকে প্রয়োজনীয় লবণ ও পানি বেরিয়ে যায়। ফলে শরীরের রক্তচাপ কমে যায়, দুর্বল লাগে, মাথা ঝিমঝিম করে। পানিস্বল্পতা গরমে সাধারণ সমস্যা হলেও অবহেলা করলে তা মারাত্মক হয়ে যেতে পারে।
বিশেষ করে শিশু, বৃদ্ধ ও অসুস্থ ব্যক্তি, যারা বাইরে কাজ করেন, প্রয়োজনমত পানি পান করার সুযোগ পান না, তারাই মারাত্মক পানিস্বল্পতায় আক্রান্ত হয়। এ সময়ে শরীরের কোষ সজীব রাখতে প্রচুর পানি খেতে হবে। ইলেকট্রোলাইটসের অভাব পূরণ করতে খাবার স্যালাইন খাওয়া যেতে পারে। পানির সাথে অন্যান্য তরল যেমন ডাবের পানি, ফলের রস খাওয়া যেতে পারে।
গরমে আরও কিছু বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে যেমন – প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে না যাওয়া ও যথাসম্ভব ঘরের ভেতরে বা ছায়াযুক্ত স্থানে থাকতে হবে। বাইরে বের হলে সরাসরি রোদ যত সম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে। প্রয়োজনে টুপি বা ছাতা ব্যবহার করতে হবে। পরনের কাপড় হতে হবে হালকা, ঢিলেঢালা, সুতির। প্রয়োজনমত গোসল করতে হবে এবং শরীর ঘাম ও ময়লামুক্ত রাখতে হবে।
প্রচন্ড দাবদাহে যেসব স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি হয় হিট স্ট্রোক তার অন্যতম। এটি একটি জরুরি মেডিক্যাল অবস্থা। এতে দ্রুত ও সঠিকভাবে চিকিৎসা না করালে মৃত্যুও হতে পারে। প্রচন্ড দাবদাহের কারণে অনেকেরই জ্বর অথবা ডিহাইড্রেশন হতে পারে।
সেক্ষেত্রে নিজেকে সুস্থ রাখতে বেশি বেশি বিশুদ্ধ পানি এবং খাবার স্যালাইন পান করতে পরামর্শ দিয়েছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। বিশেষকরে যে সকল প্রবাসীরা আউট ডোরে কাজ করেন, তাদেরকে খুব সতর্কতার সাথে কাজ করতে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post