বছরের পর বছর খুঁটি গেড়ে বসে থাকা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কর্মচারীদের বিরুদ্ধে শুদ্ধি অভিযান শুরু করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। অনেকেই একই জায়গায় দীর্ঘদিন থেকে নানা অনিয়মে জড়িয়ে পড়ছেন। ফলে পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি রাখতে দীর্ঘদিন একই শাখায় থাকা কর্মচারীদের সরানোর উদ্যোগ নিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। একই সঙ্গে যেসব কর্মকর্তা কয়েক বছর ধরে মন্ত্রিপরিষদে আছেন তাদেরও অন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে বলে জানা গেছে। ইতোমধ্যে ২২ কর্মচারীকে সরানো হয়েছে। এ ছাড়া মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির কারণে কয়েকজনের বিরুদ্ধে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
গত ৩০ অক্টোবর বাংলাদেশ প্রতিদিনে এ-সংক্রান্ত একটি সংবাদ প্রকাশের পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে প্রশাসন শাখাকে নির্দেশ দেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আবদুর রশীদ। গত ১৩ নভেম্বর অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ খালেদ হাসানকে দিয়ে এক সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ১০ কর্মদিবসের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
চলতি সপ্তাহে এ কমিটির রিপোর্ট দেওয়ার কথা। ইতোমধ্যে ২০ বছর ধরে বেতন না তোলা প্রটোকল অফিসার মো. ইমদাদুল ইসলামসহ ২২ জন কর্মচারীর শাখা পরিবর্তন করে বদলির আদেশ জারি হয়েছে। প্রটোকল অফিসার ইমদাদুল ইসলামের সাধারণ সেবা শাখায় থেকে নানা অনিয়মে জড়িয়ে পড়ার তথ্য রয়েছে। প্রশাসন শাখায় বিভিন্ন সময় কাজ করা যুগ্ম সচিবরা তাকে সহযোগিতা করতেন। এ ছাড়াও সদ্য বদলি হওয়া কর্মচারীদের প্রত্যেকেই কমপক্ষে চার বছর একই শাখায় থেকে নিজস্ব সাম্রাজ্য ঘরে তোলেন। অনেকেই ১২ থেকে ১৪ বছর ধরে একই শাখায় কাজ করেন। এরকম দীর্ঘদিন একই শাখায় কাজ করা কর্মচারী এবং কর্মকর্তাদের বদলি করা হবে বলে জানা গেছে। ইতোমধ্যে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করা কর্মকর্তাদের মধ্যে কয়েকজনকে অন্য মন্ত্রণালয় বা বিভাগে বদলি করা হয়েছে। তবে কেউ কেউ দায়িত্ব না ছেড়ে এখনো থাকার জন্য নানা তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রশাসন শাখার দায়িত্বে থাকা যুগ্ম সচিব সাজ্জাদুল হাসানকে গত ৭ অক্টোবর ধর্ম মন্ত্রণালয়ে বদলি করা হলেও তিনি মন্ত্রিপরিষদেই থাকতে চান। এজন্য নানা কৌশল করে যাচ্ছেন তিনি। তার সঙ্গে বদলি হওয়া অন্য কর্মকর্তারা ইতোমধ্যে কর্মস্থলে যোগ দিয়েছেন। মন্ত্রিপরিষদের প্রশাসন শাখার দায়িত্বে থাকায় দুর্নীতিপরায়ণ কর্মচারীদের আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে সাজ্জাদুল হাসানের বিরুদ্ধে। এ ছাড়া আরও কয়েকজন কর্মকর্তা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ‘ক্ষমতা-দুর্নীতির’ সিন্ডিকেটের পক্ষে ইনিয়ে-বিনিয়ে কথা বলছেন বলেও জানা গেছে। তবে স্বচ্ছ ভাবমূর্তির জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ শক্ত অবস্থান নিয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের প্রশাসন ও বিধি অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. সাইদুর রহমান খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, যারা দীর্ঘদিন একই শাখায় ছিলেন তাদের ইতোমধ্যে বদলি করা হয়েছে, বিষয়টি চলমান। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ স্বচ্ছতায় বিশ্বাস করে।
ঊর্ধ্বতনের পরামর্শক্রমে ইতোমধ্যে অভিযোগ ওঠা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। যেহেতু যুগ্ম সচিব পদের কর্মকর্তাদের কথাও এসেছে তাই অতিরিক্ত সচিবকে দিয়ে কমিটি করা হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সম্মান ও মর্যাদার জায়গা। এখানে কোনো অনিয়ম আমরা দেখতে চাই না।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post