বদলে গেল চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে অবস্থিত দেশের বৃহত্তম অর্থনৈতিক অঞ্চল ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর’–এর নাম। নতুন নাম দেওয়া হয়েছে ‘জাতীয় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল’ বা এনএসইজেড। সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের সময় দেওয়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নাম সম্প্রতি পরিবর্তন করা হচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় শিল্পনগরটির নাম পরিবর্তন করা হলো, যেখান থেকে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব’ শব্দগুলো বাদ পড়েছে।
ছাত্র–জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরের নাম পরিবর্তনের প্রস্তাব দেয়। সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় নাম পরিবর্তনের বিষয়টি অনুমোদন করে।
জানা গেছে, ৬ নভেম্বর প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যানের কাছে এ–সংক্রান্ত একটি চিঠি পাঠানো হয়। বেজাকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরের নাম পরিবর্তন করে ন্যাশনাল স্পেশাল ইকোনমিক জোন (এনএসইজেড) বা জাতীয় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল নামে নামকরণ এবং এর সব প্রকল্প, সরণি, সরোবর ইত্যাদি নতুন নামের ভিত্তিতে চিহ্নিত করার জন্য অনুরোধ করা হলো।
বেজা সূত্রে জানা যায়, বঙ্গোপসাগরের উপকূলীয় এলাকা সন্দ্বীপ চ্যানেলের পাশে প্রায় ১৩৭ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে গড়ে তোলা হচ্ছে এই অর্থনৈতিক অঞ্চল। বেজার মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড ও মিরসরাই এবং ফেনীর সোনাগাজী উপজেলা ঘিরে এই শিল্পনগরের আয়তন ৩৩ হাজার ৮০৫ একর। এর ৪১ শতাংশ বা ১৪ হাজার একরে শুধু শিল্পকারখানা হবে। বাকি ৫৯ শতাংশ এলাকার মধ্যে আছে খোলা জায়গা, বনায়ন, বন্দর–সুবিধা, আবাসন, স্বাস্থ্য, প্রশিক্ষণ ও বিনোদনকেন্দ্র।
২০১৬ সালে মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল নামে এই শিল্পনগরের উদ্বোধন করা হয়। সেখানে জমি বরাদ্দের জন্য ২০১৭ সালের এপ্রিল মাসে আবেদন নেওয়া শুরু করে বেজা। পরে ২০১৮ সালে এটির নাম পাল্টে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর’ রাখা হয়।
জাতীয় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলটি আবার ১২টি পৃথক অঞ্চলে বিভক্ত। সেখানে বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চল, পোশাক (বিজিএমইএ) শিল্পপার্ক, ভারতীয় অর্থনৈতিক অঞ্চল, এসবিজি (শিকদার, বসুন্ধরা ও গ্যাসমেন গ্রুপ) অর্থনৈতিক অঞ্চলের মতো আলাদা জোন রয়েছে।
বেজা জানিয়েছে, পুরো অর্থনৈতিক অঞ্চলটি (এনএসইজেড) চালু হলে আগামী ১৫ বছরের মধ্যে সেখানে ১৫ লাখ লোকের কর্মসংস্থান হবে। আর অর্থনৈতিক অঞ্চলটি থেকে প্রতিবছর রপ্তানি আয় হবে ১ হাজার ৫০০ কোটি ডলার।
সম্প্রতি দেশের আরও কিছু প্রতিষ্ঠান ও সেবার নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। সেখানেও বাদ দেওয়া হয়েছে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের’ নাম। যেমন সম্প্রতি গাজীপুরের কবিরপুরে অবস্থিত দেশের সর্ববৃহৎ ফিল্ম সিটির নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। আগের ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ফিল্ম সিটি’ নাম পরিবর্তন করে নতুন নাম ‘বাংলাদেশ ফিল্ম সিটি’ করা হয়েছে।
চলতি সপ্তাহে বঙ্গভবনের দরবার হল থেকে শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি সরানো হয়েছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘বঙ্গবন্ধু তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউট’ থেকে বঙ্গবন্ধু নাম বাদ দিয়ে শুধু ‘তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউট’ রাখা হয়েছে। রাষ্ট্রীয় জীবনবিমা প্রতিষ্ঠান জীবন বীমা করপোরেশনের ‘বঙ্গবন্ধু সর্বজনীন পেনশন বিমা (লাভসহ)’ পরিকল্পের (পলিসি) নাম পরিবর্তন করে ‘মেয়াদি সুবিধাযুক্ত পেনশন বিমা’ রাখা হয়েছে।
শিল্পনগরের নাম পরিবর্তনের বিষয়ে বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী বলেন, ‘দেশের অন্যান্য অর্থনৈতিক অঞ্চল সাধারণত জেলার নামে নামকরণ করা হয়। তবে মিরসরাইয়ে অবস্থিত অর্থনৈতিক অঞ্চলটি আমাদের ফ্ল্যাগশিপ অর্থনৈতিক অঞ্চল ও জাতীয়ভাবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ফলে সেভাবেই অর্থনৈতিক অঞ্চলটির নতুন নামকরণ করা হয়েছে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post