মহামারি করোনা পরিস্থিতিতে কুয়েতে সাধারণ ক্ষমায় দেশে আসার অপেক্ষায় থাকা বাংলাদেশিরা বিভিন্ন ক্যাম্পে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। শনিবার কুয়েতের এক ট্রানজিট ক্যাম্প থেকে এমনই এক হৃদয় বিদারক ভিডিও পাঠালেন কুয়েত প্রবাসীরা। কান্নাজড়িত কণ্ঠে আটকে পড়া প্রবাসীরা তাদের দেশে ফিরিয়ে আনতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন।
ভিডিওতে দেখা যায়, এক ব্যক্তি আটকে পড়াদের বিষয়ে বর্ণনা করছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা সেবদি ক্যাম্প থেকে কুয়েতের ক্যাম্পে। আমাদের এখানে অনেক আংকেল আছেন, অনেকে অনেক সমস্যার ভেতরে আছে। কারণ এখানে অনেকের ডায়াবেটিস আছে, তাদেরকে ওষুধ দেওয়া হচ্ছে না। তারা খুব করুণ অবস্থায় আছে। আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি অতি দ্রুত আমাদের এখান থেকে নিয়ে যাওয়ার জন্য।’
এক বয়স্ক ব্যক্তি তার কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। কান্নায় মিলিয়ে যায় তার কথা। এ সময় আক্ষেপ করে এক ব্যক্তি বলেন, ‘আর আমাদেরকে যদি নাই নেন তাহলে ওখান থেকে বিষ পাঠান। আমরা খাইয়া মরে যাইগা। আপনাদের যদি দয়া হয় তাহলে আমাদের নিবেন, না হলে বিষ পাঠান, বিষ খায়া আমরা একসঙ্গে মরে যাইগা।’
এরপর এক বয়স্ক ব্যক্তি বলেন, ‘আমি শাহরাস্তি, চাঁদপুরের অধ্যাপক রফিক সাব। আমাদের নেত্রী আমাদের যেন সবাইকে নেয়। আমরা বড় কষ্ট পাইতাছি। আমরা মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছি। আমাদের নেত্রীর কাছে আমাদের অনুরোধ আমাদের যেন অতি তাড়াতাড়ি নিয়ে যায়। অধ্যাপক রফিক সাব, আপনারা যেন সুপারিশ করেন আমাদের নেত্রী হাসিনার কাছে, আমরা বহু কষ্টে আছি।’
আরেক ব্যক্তি বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকারের কাছে চাওয়া হচ্ছে- আমরা এই ক্যাম্পে অবস্থান করছি প্রায় মাস খানেক। আজ অবধি অ্যাম্বাসেডররা আমাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করেন নাই। আমাদের মধ্য থেকে একের পর এক ভাই বিদায় (মারা) নিচ্ছে। জানি না আমাদের দিন কীভাবে যাবে, কোন দিন আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। আমরা দিন দিন দুর্বল হয়ে যাচ্ছি, রোগে ভারাক্রান্ত হয়ে যাচ্ছি। ইতিমধ্যেই আমাদের মধ্য থেকে আমাদের পাঁচ ভাই বিদায় হয়ে গেছে। আমাদের মধ্যে আরও কিছু লোক আছে রোগে আক্রান্ত। তাদের দেখে যেন আমাদের প্রতি সদয় ব্যবহার করা হয়।’
আরেক ব্যক্তি বলেন, ‘আমাদের টাকায় যাদের বেতন দেন, অ্যাম্বাসির যারা আছেন আজ ২৫ থেকে ২৬ দিন হয়ে গেল কেউ আমাদের খোঁজ নেয়নি। আমরা বেঁচে আছি না মরে গেছি। আমরা কিছু করতে গেলে বলতেছে, বাংলাদেশ অ্যাম্বাসি তোদের নিচ্ছে না। বাংলাদেশ অ্যাম্বাসি আমাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগই করছে না।’
এ বিষয়ে কুয়েতের বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূত এস এম আবুল কালাম বলেন, ‘তাদেরকে ফিরে নিতে দূতাবাস অত্যন্ত আন্তরিক। এদেরকে ফিরিয়ে নিতে আমরা কুয়েত সরকারকে চিঠি দিয়েছি যে আমাদের লোক আমরা নিয়ে যাব। কুয়েত সরকারকে বলেছি যে প্রতি সপ্তাহে আমরা ৬০০ করে লোক নিয়ে যাব। ধীরে ধীরে তা ইনক্রিস (বৃদ্ধি) করব, আমাদের লোক আমরা যত দ্রুত সম্ভব নিয়ে যাব।
আমি কুয়েতের ফরেন মিনিস্ট্রিতে যোগাযোগ করেছি। ফরেন মিনিস্ট্রি বলে এটা ইন্টেরিয়র মিনিস্ট্রির (স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়) কাজ। ইন্টেরিয়র মিনিস্ট্রি বলে এটা সিভিল অ্যাভিয়েশনের কাজ। এভাবে ২০ দিন তারা আমাকে ঘুরিয়েছে। আগামী মঙ্গলবারে থেকে লোক নেওয়া শুরু হবে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা যে কত কষ্ট করতেছি, আমি যে কত জায়গায় ঘুরছি তা কেউ বুঝবে? এগুলো তো ভিজিবল (দৃশ্যমান) না।’
ভিডিও প্রসঙ্গে রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘তাদের অভিযোগ থাকতে পারে। আমি যতটুকু মনে করি-তারা মনে করেছিল ক্যাম্পে গিয়ে তিন-চার দিনের মধ্যেই চলে যাবেন। যখন ১০-১৫ দিন হয়ে গেছে তখন তারা অধৈর্য হয়ে এ কথাবার্তা বলতেছে, এটা স্বাভাবিক। তারা তাদের দুঃখের জন্য দূতাবাসকে দোষারোপ করতেই পারে। কিন্তু দূতাবাস অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছে।’
আরও পড়ুনঃ ওমানে ছাঁটাই আতঙ্কে বাংলাদেশী প্রবাসীরা
ভারত ও মিশরের আরও বেশি মানুষ আটকে আছে বলেও জানান তিনি। এদিকে আজও এক প্রবাসী মৃত্যুবরণ করেছেন বলে সেবদি ক্যাম্প থেকে জানানো হয়েছে।
প্রবাসীদের অভিযোগ, তাদের ইফতার ও সেহরিতে পর্যাপ্ত খাবার দেওয়া হচ্ছেনা। দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে ক্যাম্পে রয়েছেনে তারা। কবে তারা দেশে ফিরবেন সেটিও অনিশ্চিত। কেউ তাদের খোঁজখবরও নিচ্ছেনা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তারা তাদের ক্ষোভের কথা জানানোর পাশাপাশি ঢাকায় সাংবাদিকদের কাছেও নানা ভিডিও পাঠাচ্ছেন ক্যাম্প থেকে।
https://www.youtube.com/watch?v=PPGE5o2wIPA
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post